ধর্ষণের পিছনে দায়ী পর্ন
ধর্ষণের পিছনে দায়ী পর্ন!!
তারেক হোসাইন
(১)
মানব সভ্যতা যখন এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে, তার পিছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে টেকনোলজি। একুশ শতকে এসে ঐ দেশগুলো পিছিয়ে যারা টেকনোলজি ব্যবহারে পিছিয়ে।
পিছিয়ে যাওয়া আর এগিয়ে যাওয়ার সমীকরণে তৃতীয় বিশ্ব ও উন্নত রাষ্ট্রে একটা জায়গায় সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি হলো নির্যাতন ও ধর্ষণের দিক দিয়ে । এর জন্য দায়ী কে বা কোনটি? এটা বের করার আগে বাংলাদেশের ধর্ষণের কিছু চিত্র উপস্থাপন করি।
বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে মোট ৬৯৯ টি যার মধ্যে ৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে মোট ৩৯৬১ টি।যার মধ্যে ১৭ জনকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর পিছনে দায়ী কারা বা কোনটি?
আমি মনে করি পর্ন অন্যতম কারণ। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে আজ ইন্টারনেট সহজ লভ্য হয়ে পড়েছে। আর সেই সহজ লভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে অশ্লীল।
অবাধ স্বাধীনতার নামে চলছে নোংরামি। বিবাহিত, অবিবাহিত, যারা ০-১৮ বছরের শিশু নামে পরিচিত কেউ বাকি নেই এ পর্ন আসক্তি থেকে। সাথে সাথে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধেও। প্রায় সময় ধর্ষণ বা নির্যাতনের পর হত্যার মত জঘন্য কাজও করে ফেলে।
(২) বেসরকারি এক হিসেবে দেখা গেছে, ফটোকপি আর মোবাইল ফোনে গান /রিংটোন ভরে দেওয়ার দোকান গুলো থেকে দেশে দৈনিক ২.৫ কোটি টাকার পর্ন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে এক মাসে গুগলে ‘পর্ন’ শব্দটা সার্চ করা হয়েছে ০.৮ মিলিয়ন বারেরও বেশি।
আর ‘সেক্স’ শব্দটি সার্চ করা হয়েছে ২.২ মিলিয়ন বার!
৩০ জুলাই, ২০১৩, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) পর্নোগ্রাফির ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকার সাইবার ক্যাফেগুলো থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা যে পরিমাণ পর্ন ডাউনলোড করে তার মূল্য ৩ কোটি টাকার মতো।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটি স্টাডিজের(সিএমএসএস) যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রেভম্যান ক্যাম্পেইন ‘ এর অংশ হিসেবে স্কুল পর্যায়ে শিশু-কিশোরদের পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি এবং এ উত্তরণের উপায় বের করতে একটা গবেষণা পরিচালিত হয়।
২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও কক্সবাজারের স্কুলগামী ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৯০০ ছেলের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে গবেষণা ফলাফল তৈরি করা হয়। ঐ গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের স্কুলগামী কিশোরদের ৬১.৬৫ ভাগ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। আর ৫০.৭৫ ভাগ ছেলে ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফি খোঁজে।
(৩) পর্ন আসক্তি যেমন যৌন তৃপ্তির নামে বিভিন্ন অশ্লীলতা শিখায় তেমনি, উৎসাহিত করে ধর্ষণকেও। সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানি Bitdefender এর গবেষণা অনুযায়ী, পর্ন সাইটে যাতায়াত করা প্রতি দশজনের মধ্যে ১ জনের বয়স ১০ বছরের নিচে।
আর এই দুধের বাচ্চাগুলো রেইপ পর্নজাতীয় জঘন্য সব ক্যাটাগরির পর্ন দেখছে! আর এ কারণে পর্ন ভয়ঙ্করভাবে উৎসাহিত করছে এই শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণে।
এই পর্ণ আসক্তির কারণে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন ঘটে তা হল দৃষ্টিভঙ্গির। দৃষ্টিভঙ্গি এমন পর্যায়ে পৌছে যায়, একজন মেধাবি মানুষও অমানুষে পরিণত হয় এই পর্নের কারণে।
নেতিবাচকভাবে প্রভাব নিজের মনের মধ্যে চুইংগামের মত লেগে থাকে।পর্ন দেখতে দেখতে এমন একটা ধারণা জম্মে যে, একটু জোর করলে সব হয়ে যাবে!পরে আবার ভালো হয়ে যাবে! এরকম মনোভাব তৈরি করে ফেলে।
কিন্তু পর্নের ভিডিও গুলো যে অভিনয়,তা বেশির ভাগ মানুষ ভুলে যায়।যার ফলে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আর ধর্ষনের মত কাজ করে বসে।সম্মতিতে কাজ না হলে জোরপূর্বক ধর্ষণ তো করেই! সাথে নিজের সম্মান বাচাঁতে গিয়ে মেয়েটিকেও হত্যা করে ফেলে।
সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে শিশু ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের মত জঘন্য অপরাধকে দমন করতে হলে অবশ্যই পর্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। আর টেকনোলজির উচিত ব্যবহার যেন সমাজের সকল শ্রেণির লোকে করে সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।অন্যথায় সমাজে আরো শিশু ও নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাবে।
Know More….সফটওয়্যার বনাম ফার্মওয়্যার । Software Vs Firmware
লেখক : শিক্ষার্থী
৩য় বর্ষ (২৩ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments