মতানৈক্য কী । দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য । Conflict and Disagreement
মাহমুদুল হাসান সৌরভ
মতানৈক্য কী । দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য । What is Disagreement । Conflict and Disagreement
মতানৈক্য (Disagreement)
মানবীয় যোগাযোগের দুটি গূরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো মতানৈক্য। অনেক ক্ষেত্রেই মনে করা হয় যে মতানৈক্য এবং দ্বন্দ্ব একই জিনিস, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি ঠিক তেমন নয়।
আরো সহজভাবে বলা যায় মতানৈক্য (Disagreement) হচ্ছে সাধারণ মতের অমিল যা কিনা দুজন বা কয়েকজন মানুষের মাঝে থাকতেই পারে। এই মতের অমিল কখনো সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যায় না, দুজন মানুষের মাঝে মতের বা চিন্তাধারায় অমিল হতেই পারে কিন্তু সেই মতের অমিল সত্ত্ব্বেও তাঁদের সম্পর্কে কোনো সমস্যার ফলে সম্পর্কের অবনতি হয় না।
যেমন, একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে বললেন যে আজ তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখেছেন যেখানে বলা হয়েছে মধ্যবিত্তদের জন্য বাৎসরিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট বিক্রি করা হবে এবং তাঁর মনে ফ্ল্যাট কিনবার একটি বাসনা জাগ্রত হলো। এসব শুনে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন যে স্বামীর মাসিক আয়ের একটি অংশ যদি এভাবে চলে যায় তাহলে সংসার চালাতে কষ্ট হবে।
এ কথায় স্বামীর মনের বাসনার সাথে স্ত্রী একমত না হলেও তিনি স্ত্রীর যুক্তি বিশ্লেষণ করেন এবং স্ত্রীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি তাঁর আয়ের সাথে ফ্ল্যাটের দামের সামঞ্জস্য, সংসারের নানাবিধ খরচের চিন্তা করে সেই ব্যাপারে আর কিছু না বলেই ব্যাপারটি সেখানে শেষ করেন বা চিন্তা করেন যে কীভাবে স্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা যায় বা কীভাবে নিজের অবস্থার উন্নতি সম্ভব হয়।
Know More……আন্তব্যক্তিক দ্বন্দ্ব কী | আন্তব্যক্তিক সম্পর্কে কেন দ্বন্দ্ব সংগঠিত হয়?
মূলত মতানৈক্য বা Disagreement কে যোগাযোগের পরিভাষায় ইতিবাচক হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। এখানে দুই পক্ষই জিততে চায় কিন্তু কেউই কারো সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। তবে শেষ পর্যন্ত এক পক্ষ জিতলেও সেই সম্পর্কের কোনো অবনতি দেখা যায় না বরং যোগাযোগকারীরা তাঁদের নিজস্ব ধারণা নিজের মাঝেই রেখে দেয় এবং একসাথেই এগিয়ে যায় বা যোগাযোগ স্থাপন করে।
আরো পরিষ্কার করে বলা যাক যে মতানৈক্য হলেও যোগাযোগকারীরা অনেকটা দর কষাকষির মতো করে তাঁদের পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করে। মজার বিষয় হলো যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে তাঁর চিন্তা অনুযায়ী প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্য পক্ষও যদি শর্ত দিয়ে কোনো ব্যাপারে একমত হতে পারে তাহলে সেখানে বলা যায় দুই পক্ষই জয়ী হয়।
মূলত মতানৈক্য বা Disagreement এর ক্ষেত্রে বলা যায় যে এটি ইতিবাচক এবং এতে যোগাযোগ আরো বিস্তৃত হয়, মিথস্ক্রিয়া বাড়ে এবং একে অন্যের চিন্তাধারা সম্পর্কে ধারণা পায়।
মতানৈক্যের সবচাইতে ইতিবাচক দিক হলো এতে একজন মানুষ তাঁর নিজস্ব চিন্তা চেতনা নিয়ে আরো বেশি করে ভাবতে পারে। প্রয়োজনে তাঁর দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করতে পারে, তাঁর চিন্তা চেতনা যদি অন্যজনের চেয়ে কম কার্যকর হয় তাহলে নিজেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে সে তাঁর কার্যকলাপে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
অর্থাৎ যখন যোগাযোগকারীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে মতানৈক্যে পৌঁছায় তখন সেই বিষয়ের ওপর বিস্তর আলোচনা হয় সর্বোপরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আর যোগাযোগ বেশি হলেই একটি সম্পর্ক আরো মজবুত হয় যা কিনা ইতিবাচকই বলা যায়।
একজন মানুষ তাঁর নিজস্ব ধ্যান ধারণা যুক্তির প্রতিফলন ঘটাতে চাইবেই, সেটি তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি, আর মতানৈক্য বা Disagreement সাহায্য করে সৃজনশীল কিছু করতে, নিজেকে আরো গোছালো করতে সাহায্য করে, নিজেকে আরো উন্মুক্ত করে দিতে সাহায্য করে।
যোগাযোগকারীদের মাঝে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হতেই পারে, তবে সেটি যাতে কোনো ব্যক্তিগত সংঘাতে না জড়ায় সেদিকেও যোগাযোগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর হতে হবে নমনীয়, অঙ্গভঙ্গি হতে হবে শালীন। এমন কিছু কখনোই করা উচিত হবে না যা অপর প্রান্তে থাকা যোগাযোগকারীর বিরক্ত লাগে।
এমনভাবে যোগাযোগ করতে হবে যাতে যার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে তিনিও যাতে সমান তালে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে যে এমন কিছু করা কখনোই উচিত হবে না যা কিনা দ্বন্দ্ব (Conflict) এর দিকে ঠেলে দেয়।
মূলত যোগাযোগে মতানৈক্য বা Disagreement থাকাটাই স্বাভাবিক, যোগাযোগবিদরা বলেন যে সম্পর্কে বা যোগাযোগে মতানৈক্য নেই সেই সম্পর্ক বা যোগাযোগই অস্বাভাবিক। অর্থাৎ সেখানে মূল যোগাযোগের কার্যাবলী সম্পাদিত হয় না।
লেখক : গ্রেজুয়েট
২০ তম ব্যাচ
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments