পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ

পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ কী? পরিকল্পনার সাথে এর সম্পর্ক কী? প্রদত্ত বিষয়ের যৌক্তিক কাঠামো প্রস্তুত কর

যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ হচ্ছে একটি বহুল ব্যবহৃত পরিকল্পনা মডেল। কোন প্রকল্পের লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে উদ্দেশ্য নির্ধারণ, কার্যক্রম গ্রহণ এবং ফলাফল বিবেচনা করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

 কোন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি একটি নকশা হিসেবে কাজ করে। সরকারি, বেসরকারি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গৃহীত প্রকল্পের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়।

আরো জানুন….পরিকল্পনা সম্পর্কিত সকল আর্টিকেল পেতে এখানে ক্লিক করুন

পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ কী

যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ বা Logical Framework Analysis হচ্ছে একটি পরিকল্পনা পদ্ধতি।

 এটি কোন প্রকল্পের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করার একটি নকশা। এই নকশায় প্রকল্পের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

 আর এভাবে পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য দিকনির্দেশনা তুলে ধরে। এবং যা সংক্ষিপ্তভাবে প্রকল্পের পরিকল্পনাকে তুলে ধরে।

পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো

পরিকল্পনার যৌক্তিক কাঠামো

যৌক্তিক কাঠামোর উপাদানসমূহ 

 যৌক্তিক কাঠামো হচ্ছে চারটি কলমে তুলে ধরা চারটি উপাদানের সমাবেশ। এই চারটি উপাদান হচ্ছে –

১. সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা সারাংশের বর্ননা (Narrative / Summary)

২. যাচাইকারী সূচক (verifiable indicators)

৩. যাচাইয়ের উপায় (means of Verification)

৫. অনুমান (Assumption)

এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. সারাংশের বর্ননা

 সারাংশের বর্ননার মাধ্যমে প্রকল্পের কাঠামোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়। প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং ফলাফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে উপস্থাপন করা হয়।

২. যাচাইকারী সূচক

 এখানে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং ফলাফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণসমূহ পরিমাপযোগ্য কিনা তা তুলে ধরা হয়। এজন্য গুণবাচক পরিমাপক ব্যবহৃত হয়।

৩. যাচাইয়ের উপায়  যাচাইয়ের উপায় দ্বারা লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং ফলাফলের পরিমাপযোগ্যতা বিচার করার উপায়সমূহকে নির্দেশ করা হয়। কোন উৎস দিয়ে পরিমাপযোগ্যতা বিচার করা হবে তা যাচাইয়ের উপায় কলামের অন্তর্ভুক্ত বিষয়।

৪. অনুমান ‘অনুমান’ কলামে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং ফলাফলের ঐসকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলোর উপর প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করে। এখানে প্রকল্পের ঝুঁকিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Learn More ….. পরিকল্পনা কী | যোগাযোগ পরিকল্পনা চক্র

যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণের সুবিধা :

১. কোন প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত রূপকল্প তুলে ধরে

২. এটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি ও ফলাফলকে তুলে ধরে। যা থেকে বোঝা যায় প্রকল্পের কাজ কিভাবে করা হবে।

৩. এটি প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং ফলাফলকে আলাদাভাবে তুলে ধরে। ফলে এগুলোকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ সম্ভব হয়।

৪. এটি প্রকল্পের সফলতার ওপর প্রভাব ফেলবে এমন অনুমানসমূহকে তুলে ধরে।

৫. এটি প্রকল্পের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক তুলে ধরে। যার ফলে প্রকল্পের কার্যকারিতা বিচার করা সম্ভব হয়।

যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণের মূলনীতি :

১. এটি সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। সাধারণত একটি কাগজের দুই পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত নয়।

২. এটি সহজে বোধগম্য হতে হবে। যারা এটি প্রথমবার দেখবে তারাও যেন এটি বুঝতে পারে।

৩. প্রকল্পের সুবিধাভোগীদেরকে যৌক্তিক কাঠামোর নকশা করার ক্ষেত্রে যুক্ত করা উচিত।

৪. এটি এমন হবে যাতে এটি পর্যবেক্ষণের এবং মূল্যায়নের ভিত্তি দান করে। এবং যখনই প্রকল্পের কাজ পরিবর্তিত হবে তখনই এটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন করতে হবে।

পরিকল্পনার সাথে যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণের সম্পর্ক

১. কোন প্রকল্পের পুরো পরিকল্পনাকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। পরিকল্পনা হচ্ছে সুচিন্তিত, সুসংগঠিত একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রকল্পকে ছকবদ্ধ করা হয়। যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণও কোন প্রকল্পের ছকবদ্ধ হিসেবে কাজ করে। এদিক থেকে পরিকল্পনার সাথে এর সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।

২. যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং ফলাফলকে বিশ্লেষণ করা হয়। যার ফলে প্রকল্পের পরিকল্পনা করা সহজ হয়। এদিক থেকেও পরিকল্পনার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে।

৩. কোন প্রকল্প কোন উদ্দেশ্য অর্জনযোগ্য কিনা, এবং তা লক্ষ্যার্জনের ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে তা যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ দ্বারা বোঝা যায়। এ বিষয়টি প্রকল্পের পরিকল্পনা কার্যক্রমকে সহজ করে তুলে।

৪. প্রকল্পের কাজের পর্যবেক্ষণের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়।

আবার প্রকল্পের কাজের পরিবর্তনের সাথে যৌক্তিক কাঠামো বিশ্লেষণেরও পরিবর্তন করা হয়। একটি ভালো পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই দিকটি বিবেচনা করা হয়। তাই এদিক থেকেও দুটির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।

বস্তুত , যৌক্তিক কাঠামো হচ্ছে একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা বা নকশা, যা ধরে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যায়। একটি প্রকল্পের পরিকল্পনায় এটি দিকনির্দেশনা হিসেবে ভূমিকা রাখে। তাই দুটির মধ্যে সম্পর্কের মাত্রাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.