নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব । Spiral of Silence Theory

নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব । Spiral of Silence Theory

সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের কাছে সংখ্যালঘিষ্ঠরা সবসময় পরাজিত, এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠরা ভুল হলেও। নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্বের আলোকে বিষয়টি আলোচনা কর।

বা, গণমাধ্যম সংখ্যাগরিষ্ঠ আধিপত্যশীল গোষ্ঠীর স্বার্থে সংখ্যালঘুর নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়- নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব দিয়ে প্রমান কর।

`No person is your friend who demands your silence, or denies your right to grow’

          -AliceWalker

কার্ল মার্কস একটি কথা বলেছেন,

`It is not the consciousness of men that determines their being but, on the contrary, their social being that determines their consciousness’

(Marx and Engles, contribution to the critique ofpolitical economy, 1962, page 262)

ঐতিহাসিকভাবে মানুষ সংঘবদ্ধথাকতে অভ্যস্ত। মানুষ সামাজিক প্রানী, তাই একা থাকতে পারে না।সভ্যতার আদিম পর্যায় থেকেমানুষ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে যৌথ শক্তির প্রয়াসে।

এই ভয় পাওয়ার কিংবা বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি পরবর্তিতে প্রত্যক্ষ করেন জার্মান যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ Elisabeth Noelle-Neumann তিনি একে অভিহিত করেন নীরবতা কুন্ডলী’ হিসেবে।




নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব

আরো জানুন : গণযোগাযোগ সম্পর্কিত সকল আর্টিকেল পেতে এখানে ক্লিক করুন

নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

Elisabeth Noelle-Neumann কুখ্যাত হিটলারের শাসনামলে জার্মানিতে সাংবাদিকতা করেন। সেই সময় ছিল স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। তিনি সেখানে প্রত্যক্ষ করেন কিভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘিষ্ঠকে প্রভাবিত করে। ধারনা করা হয়, কুন্ডলী তত্ত্বের পেছনে মনো-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কাজ করেছে।

নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্বেরমূল কথাঃ

এখানে মূল কথা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠও সংখ্যালগিষ্ঠ মতামত। মানুষ সবসময় তার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে খেয়াল রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠমতামতকে সমর্থন করে। পালের হাওয়া যেদিকে, সবাই ছুটে সেদিকে।

অধিকাংশ লোক যা বলেবাকিরা তা মেনে নেয়। সেটা ভুল হলেও মেনে নেয়। কোন প্রতিবাদ করে না। সমাজচ্যুতহওয়ার ভয়ে প্রতিবাদের সাহসও দেখায় না। তারা চুপ থাকে। নীরব হয়ে যায়।

এ তত্ত্বে আরো বোঝায়- যখনকেউ লঘিষ্ঠ সংখার হয়, তার দৃষ্টিভঙ্গিতে চাপ অনুভব করে। ক্রমশ নীরবতার দিকে যেতেথাকে।

গণমাধ্যম সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে উপস্থাপন করে। সংখ্যালঘিষ্ঠের নীরবতাকে গতিশীল করে।

নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্বের ৮টি বিষয় উঠে আসে

১) শাসক শ্রেনী যা বলে সংখ্যালঘুরা তা গ্রহণ করে।

২) বড় বড় শহরগুলোতেপুরুষরা প্রতিবাদ করে।

৩) ডোমিনেন্টগ্রুপ নানাভাবে মতামত তুলে ধরে। যেমন- পোস্টার, ব্যানারইত্যাদির মাধমে।

৪) যে যা বিশ্বাসকরে, সে অনুযায়ী মতামত দেয়।

৫) Spirit of age তথা বয়স কিংবা লিঙ্গভেদে আগ্রহের তারতম্য ঘটে।

৬) মানুষের স্বভাবহচ্ছে স্রোতে গা ভাসানো।

৭)  যার সাথে যার মতাদর্শের মিল আছে, সে তার কাছে মতামত প্রকাশ করে।

৮) সমাজে কিছু ব্যতিক্রম লোক থাকে।

নীরবতার কুন্ডলীতে গণমাধ্যমের ভূমিকা

আমাদের বেশীরভাগ তথ্যেরজোগান দেয় গণমাধ্যম। গণমাধ্যম জনগনের অভিপ্রায় রপ্ত করে। সে মোতাবেক প্রচারকর্মপরিচালনা করে। এভাবে সৃষ্টি করে জনমত। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু মতামত একঘরে হয়ে পরে।আচ্ছন্ন হয় নীরবতা।

গণমাধ্যম সংখ্যালঘুরমতামতকে নীরব করে দেয়। গণমাধ্যমের শক্তিশালী প্রভাবের কথা সর্বজবনবিদিত।ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গণমাধ্যম প্রভাবশালী ইসরাইল সমর্থন করে। দুর্বলফিলিস্তিনীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে প্রমান করতে চায়। ইসরাইলের পক্ষে প্রচারকার্যক্রম অব্যাহত রাখে। সংখ্যালঘু ফিলিস্তিনীদের বিপক্ষে জনমত গঠন করতে চায়।

ফলশ্রুতিতে, স্বাধীন ফিলিস্তিনরাষ্ট্র হওয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। গণমাধ্যম ক্ষমতাশীল ইসরাইলের পক্ষে জনমত গঠনকরে। এক্ষেত্রে মার্কিন-ইসরাইল জোটের বিরুদ্ধে কাউকে সোচ্চার হতে দেখা যায় না।

অধিকিন্তু, বেশিরভাগ রাষ্ট্রই ফিলিস্তিন-ইসরাইল প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যায়। কেউ আধিপত্যশীল গোষ্ঠী হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। মার্কিন-ইসরাইলী প্রভাবকে ভয় পায়।

নিউম্যান এর মতে, গণমাধ্যম তিনটি বৈশিষ্ট্যের কারণে এত শক্তিশালী প্রভাব রাখতে সক্ষম। এগুলো হলো- বারংবার, সর্বব্যাপীতা, সামঞ্জস্যতা।

তার মতে, এই তিনটি উপায়ে কোনইস্যুর পক্ষে গণমাধ্যম সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত তৈরী করে। আবার, অনেক ক্ষেত্রে বেশীরভাগজনগনের সাথে মিল রেখে বার্তা উপস্থাপন করে।

আর এভাবেই আমরা দেখতে পাই, নৈতিক অবস্থান থাকা ফিলিস্তিনিরা দূর্বল হয়ে যায়। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

তত্ত্বেরসীমাবদ্ধতা/সমালোচনাঃ

১) মানুষের মতামত দেয়ার ক্ষেত্রেইগো কাজ করে এটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

২) মানুষের স্বার্থে লাগলে সোচ্চার হয়ে উঠে। কিন্তু, এখানে বলা হয়েছে স্বার্থে লাগলেও একা হলে নিশ্চুপ থাকে।

৩) বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়থেকেই সবসময় মতামত দেয় না- এমন নয়।

৪) মিডিয়ার প্রভাবকেনিউম্যান যতটা শক্তিশালী করে দেখিয়েছেন ততটা জনগনের ক্ষেত্রে খাটে না।

কিন্তু এটাও মেনে নিতেহবে যে, যেহেতু আমরা রাজনৈতিক বিশ্বের বাসিন্দা, তাই ক্ষমতাশীল-আধিপত্যবাদীরাজনৈতিক গোষ্ঠীর উলঙ্গ তাবেদার মিডিয়া যা দেখাচ্ছে তাই আমরা বিশ্বাস করছি।

No comments

Powered by Blogger.