প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাঠামো বৈশিষ্ট্য সুবিধা অসুবিধা
প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাঠামো সুবিধা অসুবিধা ও বৈশিষ্ট্য
কাঠামো হল সংগঠন পরিচালনার বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ ও কর্মীবৃন্দের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি চিত্র। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তি ও দলের মধ্যে একটি সুসংঘবদ্ধ সম্পর্কের আগাম চিত্র প্রকাশ করে তা প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন ব্যক্তি হতে কর্মী সবাই প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকে। ফলে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পারষ্পরিক সম্পর্কের একটি রূপরেখা সৃষ্টি হয়। এ রূপ রূপরেখাই সাংগঠনিক কাঠামো।
সাংগঠনিক / প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পর্কে Mullins & Maybe তাঁদের Management and organizational (1993)বইতে বলছেন , the organizational structure is the architecture both visible and invisible which connects and weaves all the activities of the organization so that it functions as a complete entity
সংবাদপত্রের কাঠামোর ধরণ
বিভিন্ন ব্যবসা ও সংবাদপত্র শিল্পে ৩ ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো থাকতে পারে।
১ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পিরামিড কাঠামো
২ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ফাংশনাল ( ক্রিয়ামূলক) কাঠামো
৩ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্টাফ এন্ড লাইন কাঠামো ।
পিরামিড কাঠামো
পিরামিড কাঠামো পিরামিড আকৃতির। ধরনটা সামরিক সংস্থার মত। কতৃপক্ষ পদ্মমর্যাদা দ্বারা চিহ্নিত।
পিরামিড কাঠামোর বৈশিষ্ট্য
১. পদক্রম অনুযায়ী মর্যাদা নির্ধারিত হয়।
২ পদক্রমে সবার উপরে যিনি আছেন তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
৩ পদক্রমে সবনিন্মের ব্যক্তি কম মর্যাদাবান।
৪ অধঃস্থনরা উর্ধ্বঃ স্থনদের আজ্ঞা বহন করে।
৫ কঠোর ভাবে চেইন অব কমান্ড মানতে হয়।
৬ যোগাযোগ একমুখী। -top to down।
৭ পদমর্যাদার ভিত্তিতে ক্ষমতা নির্ধারিত হয়।
৮ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম বা রীতি থেকে বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই।
৯. অনেকটা একগুয়ে ও স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতির।
১০ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সুযোগ নেই।
সুবিধা
১ আদেশ যথাযথ ভাবে পালন হয়।
২ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ও দ্রুততর।
৩ শতভাগ শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
৪ কাজে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই।
৫ শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
সমালোচনা/ অসুবিধা
১ ব্যক্তির সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ নেই।
২ মত বা স্বাধীনতা প্রকাশের সুযোগ নেই।
৩ কাঠামোটি নিপীডন মূলক ও স্বৈরাচারী বিদ্রোহ দেখা দিলে পুরো কাঠামোটি ভেঙ্গে পড়ে।
৪ সামরিক বাহিনী ছাড়া অন্য কোথাও প্রয়োগের সুযোগ নেই।

ক্রিয়ামূলক কাঠামো Functional structure
ক্রিয়ামূলক কাঠামোর উদ্ভাবক হলেন বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক Fredrich w.Taylor. যেখানে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলীকে কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে এদের একেকটিকে বিশেষজ্ঞ বা পদস্থ কর্মীর হাতে ন্যাস্ত করা হয় । সেরূপ সংগাঠনিক কাঠামো হল ক্রিয়ামূলক কাঠামো।
ক্রিয়ামূলক কাঠামো সম্পর্কে Karen R.j white বলেন , functional structure is easy to manage. can,t be difficult to find something quickly
ক্রিয়ামূলক কাঠামোর বৈশিষ্ট্য
১ Division of labor:
এখানে শ্রম বিভাজনের কথা প্রযোজ্য। কাজকে তুলনামূলক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করা হয়।
২ specialization :
বিশেষায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিটি কাজ বিশেষজ্ঞ কর্মীর হাতে ন্যাস্ত।
৩ No Authority :
ক্রিয়ামূলক কাঠামোতে কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। স্বৈরতন্ত্রের ঝোঁক কম। চেইন অব কমান্ড কম।
৪ Dual subordination:
এধরনের সাংগঠনিক কাঠামোতে একজন কর্মী তার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্বাহীর নিকট দায়ী থাকেন।
৫ Quick problem solving:
নিম্নস্তরে কোন সমস্যা দেখা দিলে একা বিভাগ পার্শ্ববতী বিভাগের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দ্রত সমস্যার সমাধান করে।
৬ Trade Union :
এখানে ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ থাকে। সুতরাং দ্বিমুখী একটা প্রবাহ থাকে।
৭ এক বিভাগের কাজের সাথে অন্য বিভাগের কাজের মিল নেই।
Know More……মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ । Functions of Media Manager
সুবিধা
১ শ্রম বিভাজনের ফলে দ্রুত কাজ সম্পাদিত হয়।
২ শ্রম বিভাজনের ফলে সময় ও খরচ বাঁচে।
৩ প্রত্যেক বিভাগ তার মত করে কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৪ সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ও দ্রুত হয়।
৫ প্রত্যেক কর্মীর দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন ও বোনাস দেয়া হয়।
৬ নিয়ন্ত্রণ থাকে না বললেই চলে।
অসুবিধা
১ কর্মীদেরকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।
২ এক ধরনের বৈষম্য দেখা দেয়। শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩ দ্বিমুখী প্রবাহ /সংস্থা থাকার কারণে শৃংখলা বজায় রাখা কঠিন।
৪ কাজের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য কম থাকে।
৫ সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে না।
৬ দ্বৈত অধীনতার কারণে দায় এড়ানোর সুযোগ থাকে।
সরলরৈখিক ও পদস্থ কাঠামো staff and line structure
সরলরৈখিক নির্বাহী ও পদস্থ কর্মীর সমন্বয়ে যে সংগঠন গড়ে উঠে তাকে সরলরৈখিক ও পদস্থ কাঠামো বলা হয়। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও বিশেষজ্ঞতা অর্জন এবং সেই সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরলরৈখিক নির্বাহীদের পাশাপাশি বিশেজ্ঞ বা পদস্থ কর্মীর ব্যবহার বেশি হয়।
staff and line কাঠামো সম্পর্কে Mullins & Maybe বলেন , staff and line is a modification of the line organization but is more complex than the line organization
উপযোগিতা
এ ধরনের কাঠামো সংবাদপত্র শিল্পের জন্য বিশেষ উপযোগী। প্রত্যেকটি বিভাগ আলাদা আলাদা কাজ করে। আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় আছে। প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধান স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। এটি একই সাথে সকল বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যেককে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করে।
যেমন- সংবাদপত্র। এখানে কর্মী ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রশাসন থাকে প্রশাসন পিরামিড কাঠামোয়। অন্যদিকে, প্রেস বিভাগের কর্মীরা ক্রিয়াবাদী কাঠামোতে বিভাজিত।
বৈশিষ্ট্য
১ এখানে প্রচুর পরিমানে বিভাগ ভিক্তিক যোগাযোগ হয়।
২ যোগাযোগ একমুখী নয়।
৩ চেইন অব কমান্ড নাই বললেই চলে।
৪ কর্তা ব্যক্তিদের খুব একটা নিয়ন্ত্রণ নাই।
৫ কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ।
৬ এখানে বিভাগওয়ারী আলাদা আলাদা কাজ হয়।
৭ অন্তঃ ও আন্তঃ সমন্বয় খুবই চমৎকার।
৮ কাঠামোটি সংবাদপত্র ও সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানে বেশি প্রযোজ্য।
৯ যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, প্রকাশনা সংস্থা ।
১০ শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
staff line কাঠামোর সুবিধা
১ সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সবাই কাজ করে।
২ অন্তঃ ও আন্তঃ সমন্বয় বেশ কার্যকর।
৩ প্রত্যেকটা বিভাগ স্বাধীন।
৪ স্বৈরাচারী মনোভাব একেবারেই থাকে না।
৫ সবচেয়ে কর্মীবান্ধব কাঠামো।
৬ সৃজনশীলতার চর্চা হয়।
৭ স্বাধীনমত প্রকাশ সম্ভব হয়।
৮ কোন ক্রমাধিকার তন্ত্রের প্রচলন নেই।
৯ দলীয় গতিশীলতা বেশি কাজ করে।
১০ কার্যকর তত্তাবধান থাকে অপচয় হ্রাস হয়।
অসুবিধা
১ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়।
২ অন্তঃ ও আন্তঃ সমন্বয়ের কারণে জটিলতা তৈরী হয়।
৩ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা জটিল ও ব্যয়বহুল।
৪ পদস্থ কর্মীদের উপর নির্ভরশীল বেশি।
৫ সৃজনশীল ব্যক্তিদের উপর সাংগঠনিক দায়িত্ব আসে। ফলে সৃজনশীলতা বিকাশে বাধার সৃষ্টি হতে পারে
No comments