সম্পাদকীয় কৌশল । Editorial Strategies
সম্পাদকীয় কৌশল Editorial strategy
সম্পাদকীয় কৌশল কী
সম্পাদকীয় কৌশল বলতে, সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, ব্লগ অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত কোন প্ল্যাটফর্মে পাঠক বান্ধব আধেয় ও মিথষ্ক্রিয়ার প্রায়োগিক রূপকে বোঝায়। যা সেখানে দর্শক-শ্রোতা এবং তাদের কমিউনিটি তৈরীতে ভূমিকা রাখে যাদেরকে পরবর্তীকালে দাতা, সমর্থক, ক্রেতা বা স্বেচ্ছাসেবকে রূপান্তর করা যেতে পারে। সেইসাথে, সম্পাদকীয় কৌশল নিজ কার্যক্রমে থট লিডার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানের খ্যাতির বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সম্পাদকীয় কৌশলসমূহ Editorial strategy
সম্পাদকীয় লেখার উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে নির্ধারণ করার আগে, সামগ্রিক আধেয় কৌশল সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
একটি আধেয় কৌশল তৈরী করতে গেলে যেসকল সংজ্ঞা, লক্ষ্য এবং উদ্ভাবনী চিন্তার উদ্ভব হয়, তা-ই মূলত সম্পাদকীয় কৌশলকে সমৃদ্ধ করে।অন্যদিকে, কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং পাঠকের প্রয়োজনীয়তা, সে ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের আধেয় কৌশল গঠন করে।
সামগ্রিকভাবে, বৃহৎ মাত্রার লক্ষ্যসমূহ বাছাই করা হয়ে গেলে, নিম্নে উল্লেখিত পাঁচটি ধাপে আধেয় কৌশল তৈরী করা যেতে পারে।
১. কাঙ্খিত দর্শক ও পাঠক নির্ধারণ Define a target audience
২. আধেয়র জন্য বিশ্লেষণমুখী বাক্য তৈরী Create a reason statement for your content
৩. বিষয় বস্তুসমূহকে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করা এবং কাঙ্খিত বার্তা কিভাবে প্রেরণ করা যায় তা অনুধাবন করা Brainstorm topics and understand how you’ll deliver your message
৪. আধেয়গুলির অবস্থান কোথায় হবে তা জানা Know where the content will reside
৫. কতটুকু ফল পাওয়া গেলো তা অনুধাবন করা Understand how to measure performance
১. কাঙ্খিত দর্শক ও পাঠক নির্ধারণ Define a target audience
যেকোন আধেয় পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কাঙ্খিত পাঠক নির্ধারণ। দর্শক-শ্রোতা ছাড়া, যেকোন আধেয়ই উদ্দেশ্যহীন এবং লক্ষ্যসমূহ হয়ে পড়ে অসম্ভব। কেউ হয়তো সবচেয়ে বিস্তারিত, মানসম্পন্ন কোন প্রবন্ধ বা নিবন্ধ লিখলো, তবে তা যদি কেউ না পড়ে, তাহলে সেখান থেকে কোন কিছুই আর ঘটে না।
ভুল দর্শক-শ্রোতার জন্য, যেকোন আধেয়ই বিভ্রান্তিকর বা অকার্যকর। কোন মিথষ্ক্রিয়া তৈরীতেই সেটি কোন ভূমিকা রাখবে না।
এটি অবশ্যই জানতে হবে যে, কাকে মাধ্যমের দিকে আকর্ষণ করতে হবে, কেন সে ধরনের মানুষকেই পাঠক সারিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আধেয়’র কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয়তা কি কি। এসব প্রশ্নের উত্তর জানলে আধেয়কে কাটছাঁট করে কাঙ্খিত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
২. আধেয়র জন্য বিশ্লেষণমুখী বাক্য তৈরী (Create a reason statement for your content)
কাঙ্খিত পাঠক নির্ধারণে, “কেন আধেয়টি তৈরী করা হচ্ছে”- তার সপক্ষে এরইমধ্যে কিছু যুক্তি হয়ত পাঠকের মনে আকৃতি নিচ্ছে।
ওই উত্তরগুলিই বিশ্লেষণমূলক বাক্যের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে নিতে হবে যেখানে এমনকি ভবিষ্যতের আধেয়সমূহের অস্তিত্বের পেছনেও যুক্তি কাজ করবে।
নির্দিষ্ট করে, এই প্রশ্ন করতে হবে যে “কেন আমি এই আধেয় তৈরী করছি?” এবং “এই আধেয়সমূহের আমার ব্যবসা, পরিচিতি ও পণ্যের সাপেক্ষে কি ধরনের বক্তব্য থাকা উচিৎ?”
এরুপ, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য এবং কাঙ্খিত পাঠকের সাপেক্ষে এই উত্তরসমূহ তুলনা করে দেখতে হবে।
এই তিনটি উপাদানের প্রত্যেকটিই কি পরষ্পরের সাথে একমত? সমর্থন করছে কি?
এই উত্তরগুলো এবং লক্ষ্যসমূহের মধ্যে যদি বিস্তর ফাঁক থেকে যায়, তাহলে সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা খুব বেশী পরিমাণ উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে এখানে। যতক্ষণ না তারা পরস্পরের সাথে স্বচ্ছভাবে সংযুক্ত হচ্ছে এবং পরস্পরকে সমর্থন করছে, ততক্ষণ এই উত্তরগুলো নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
আরো জানুন………সম্পাদকীয় প্রকারভেদ । সম্পাদকীয় কত প্রকার ও কী কী
৩. বিষয় বস্তুসমূহকে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করা এবং কাঙ্খিত বার্তা কিভাবে প্রেরণ করা যায় তা অনুধাবন করা (Brainstorm topics and understand how you’ll deliver your message)
আলোচ্য বিষয়সমূহ এবং লিখন পদ্ধতিগুলো তালিকাভুক্ত করতে হবে যাতে এমন আধেয় পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় যা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাঙ্খিত পাঠকের সমন্বয়কে সমর্থন করে। আধেয় কৌশল নির্ধারণ পর্যায়ে খুব বেশী খুঁতখুঁতে হওয়ার প্রয়োজন নেই। সম্পাদকীয় পরিকল্পনা তৈরীর পর্যায়ে বিশদ ও বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ থাকবে।
এই পর্যায়ে, শুধুমাত্র কিছু মৌলিক ধারণারই কাঠামো অঙ্কন করতে হবে যা পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় কৌশলকে সমর্থন করবে।
৪. আধেয়গুলির অবস্থান কোথায় হবে তা জানা (Know where the content will reside)
আধেয়সমূহের অবস্থান নির্ধারণে একটি পরিকল্পনা তৈরী করা৷ অর্থাৎ, কোন মাধ্যমে আধেয়টি স্থান পাবে, সেখানে এটি কোন অবস্থানে, কোন ফরম্যাটে বসবে তা নির্ধারণ করা।
আধেয় প্রকাশের কয়েকটি সম্ভাব্য স্থান হলো:
সংবাদপত্র, নিউজ ওয়েবসাইট, ব্লগ, সামাজিক গণমাধ্যম যেমন – টুইটার, ফেসবুক, পিন্টারেস্ট, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট; পেশাগত নেটওয়ার্ক যেমন লিংকডইন, ভিডিও শেয়ারিং এর মাধ্যম যেমন ইউটিউব, ভাইন ইত্যাদি।
৫. কতটুকু ফল পাওয়া গেলো তা অনুধাবন করা (Understand how to measure performance)
সবশেষে বলা যায়, সাফল্যের মানদণ্ড আসলেই কিরূপ তা জানতে হবে। অন্যথায়, তা আসলেই অর্জিত হয়েছে কি না সেটি জানা সম্ভব হবে না। ফলাফলের ফলপ্রসূতা কতটুকু হলো তা বুঝতে পারলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টাসমূহের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা যায় এছাড়াও, কোথায় কোথায় আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে তা বুঝতে পারা যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী
এমএমএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments