মিডিয়া মার্জার কী । What is Media Merger

মিডিয়া মার্জার কী । What is Media Merger

মিডিয়া মার্জার এর আভিধানিক অর্থ বৃহত্তর অথবা উচ্চতর কিছুতে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্ত হওয়া । বৈশ্বিক গণমাধ্যম ব্যবস্থায় মালিকানা ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে । গণমাধ্যম মার্জার স্বল্প পুঁজির উদ্যোগ বা ছোট মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাস করছে । হরণ করছে বৈচিত্র‌্যময় যোগাযোগের স্বত্ত্বাধীকারকে । এর ফলে সম্প্রসারিত হচ্ছে পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি । লাভবান হচ্ছে কতিপয় গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান ।

বৈশ্বিক গণমাধ্যম বাজারে একীভূত হওয়ার অর্থনৈতিক সুবিধা প্রচুর । একারণে ফার্ম গুলো ব্যাপকভাবে একত্রীকরণের দিকে নজর দেয় । বড় ফার্মগুলার সাথে যুক্ত না হয়ে ছোট ফার্মগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারেনা । এক কথায় বৈশ্বিক গণমাধ্যম বাজার বিশ্বের সর্ববৃহৎ নয়-দশ টি বহুজাতিক কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।

মূলত ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সমূহ তুলনাহীন ভাবে একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে এক ধরনের মিশ্রণের সৃষ্টি করেছে , তৈরি করেছে একক আধিপত্য । এই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই ”মিডিয়া মার্জার” বা মেগা মিডিয়া কিংবা ট্রান্সন্যাশনাল মিডিয়া কর্পোরেশন বলা হয় । টাইম ওয়ানার, ডিজনি , ব্যাটেলনম্যান, টেলিকমিউনিকেশন নিউজ করপোরেশন, সান ,ডাচ ফিলিপস ইত্যাদিকে মিডিয়া মার্জারের উদাহরণ হিসেবে টানা যায় ।

কেন কর্পোরেট মিডিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে

১. বৈশ্বিক গণমাধ্যম বাজারে একীভূত হাওয়ায় অর্থনৈতিক ভাবে ছোট ফার্মগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনা বড় ফার্মগুলো সাথে

২. গনমাধ্যমের আধেয়কে ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করা যায়

৩. অপ্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক অবস্থা দৃঢ় করা যায়

৪. সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়




মিডিয়া মার্জার

কর্পোরেট মিডিয়ার প্রভাব

প্রচলিত ধারণা অনুসারে সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজের জন্যই গণমাধ্যম নিবেদিত । সহজ সরল মানুষেরা বিশ্বাস করেন গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা শুধু ভালো সঙ্গে । কিন্তু এসব ধারনা বর্তমান পুঁজিবাদের যুগে বদলে গেছে । বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে গণমাধ্যম । সর্বদা ব্যস্ত থাকছে নিজের মুনাফা লাভের লক্ষ্যে । আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে । ভালো-মন্দ বিচার না করেই গণমাধ্যম সমাজে যা ছড়িয়ে দিচ্ছে তা আসলে সৃষ্টি করছে নানা রকম সামাজিক সমস্যার ।

নেতিবাচক প্রভাব সমূহ

১. কর্পোরেট মিডিয়া সামাজিক সমস্যা উৎপাদন করছে । স্বাধীনতা ,ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতা এবং উচ্চ আদর্শবাদী ধারণাগুলোকে খাটো করে দিচ্ছে

২. ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছে

৩. নাগরিক , মতাদর্শিক , বিতর্কিত ইস্যু, গণতান্ত্রিক সংলাপ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্পোরেট হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়

৪. কর্পোরেট মাধ্যম ব্যবস্থা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ

৫. যুদ্ধে কর্পোরেট মাধ্যম প্রচারণা যন্ত্রের কাজ করে

৬. পর্নোগ্রাফি নারীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে

৭. গণমাধ্যমের আধেয় নিয়ন্ত্রণ করছে, জন স্বার্থের অনেক বিষয় তারা গোপন করছে

আরো জানুন………..বিশ্বায়ন কী | গণমাধ্যম ও বিশ্বায়নের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক

যেভাবে তারা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

বর্তমান সময়ে এসব কোম্পানি সমূহ গণমাধ্যম বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে । তাদের বাজারের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে যে এসব কোম্পানিগুলো ধ্বংস হয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই । আর এসব বড় ফার্মগুলো ছোট ছোট মিডিয়া ফার্মগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যার ফলে এসব কোম্পানি সমূহ টিকে থাকা অসম্ভব । এ গুটিকয়েক মাধ্যমের কাছে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে গণমাধ্যম । তারা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য সৃষ্টি করছে হুমকি ।

বর্তমানে অন্য যে কোন কোম্পানি থেকে এসব কোম্পানি সমূহের শক্তি বেশি । রাজনৈতিক অর্থনীতি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , আমাদের প্রাত্যাহিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংবাদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্বাভাবিক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে । মিডিয়া প্রতিষ্ঠান সমূহের এ অধিকার গণতন্ত্রের জন্য তীব্র ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ।

হুমকি আসে নিম্মোক্ত ভাবে

১. নাগরিকদের বলার কণ্ঠস্বর হ্রাস করে

২. সংবাদ ও তথ্যের বিশুদ্ধতা কষ্ট করে

৩. জনগণের সরকারের গুরুত্ব দেয়

৪. মানুষের অনুধাবন ও রাজনীতিতে অনৈতিক বিষয় যোগ করে

বৈশ্বিক একীভূতকরণ ও গণমাধ্যমের মালিকানা কতিপয় ব্যক্তির কাছে চলে আসলো । আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা , অস্ত্র ব্যবসায়ী ক্ষমতাধর ব্যক্তি ইত্যাদি ।

No comments

Powered by Blogger.