গণযোগযোগ কী । গণযোগাযোগের বৈশিষ্ট্য । Mass Communication । সিএজে একাডেমি

 Marjan Akter

গণযোগযোগ কী?  গণযোগাযোগের বৈশিষ্ট্য 


প্রতিদিন ঘটছে হাজারো ঘটনা । কোনো ঘটনা পরিণত হয় সমসাময়িক ইস্যুতে আবার কোনোটি  জনগণের আগ্রহের আওতায়ই পড়ে না । এই যে চলমান সবচেয়ে প্রধান ইস্যুগুলো-  দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বেড়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা , ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা  এই ঘটনা বা ইস্যুর তথ্য চায় জনগণ । কী হলো ,কিভাবে হলো , কেন হলো - জানতে চাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয় । শুধু সমসাময়িক নয় মানুষ জানতে চায় ঐতিহাসিক,বিনোদনমূলক কিংবা ঘটে যাওয়া ঘটনার ফলোআপ ।


জানতে চাওয়া মূলত মানুষের মৌলিক অধিকার । আর তাই প্রতিনিয়ত কী ঘটছে তা জানতে মানুষ গণমাধ্যমের শরণাপন্ন হয় । গণমাধ্যমও সেই জানানোর কাজেই নিয়োজিত ।  এক পক্ষের জানতে চাওয়া অন্য পক্ষের জানানোর কাজই গণযোগাযোগ । জানানো বা তথ্য প্রকাশ করার কাজই টেলিভিশন ,রেডিও,সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সংগঠিত হয় বলে আমরা গণমাধ্যম বলে থাকি ।


বইয়ের ভাষায়, সংবাদপত্র,রেডিও ,টেলিভিশন, ইনটারনেট ইত্যাদি মাধ্যমের ব্যবহারে বা সাহায্যে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত তথ্য এবং ঘটনা বিশাল জনতার কাছে পৌঁছে দেয়ার পদ্ধতিই গণযোগাযোগ । অজানা , অসংখ্য দর্শক শ্রোতার সাথে গণমাধ্যমসমূহ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে গণযোগাযোগের কাজটি । 

গণযোগাযোগ সম্পর্কে Joseph R. Dominick তাঁর The Dynamics of Mass Communication বইতে বলেন,

  Mass Communication refers to the process by which a complex organization with the aid of one or more machines produces and transmits public messages that are directed at large heterogeneous and scattered audiences .



অর্থ্যাৎ, গণযোগাযোগ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে এক বা একাধিক যন্ত্রের সাহায্যে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে বার্তা প্রদান করা হয় , যা সবার জন্য উন্মুক্ত । 


সুতরাং, বলা যায় , গণমাধ্যমসমূহের ( রেডিও ,টেলিভিশন,পত্রিকা,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টানেট ) তথ্য প্রকাশ আর প্রয়োজন অনুযায়ী জনগণের সেই তথ্য আহরণের কাজই গণযোগাযোগ । গণমাধ্যম হিসেবে এই কাজটি করার জন্য নিয়োজিত আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান । যারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী তাদের সাথে গণযোগাযোগ করে থাকে ।




গণযোগাযোগের বৈশিষ্ট্য: 

Mass Communication is a process in which the message is simultaneously directed toward a relatively, large, scattered, heterogeneous, and anonymous audience with the help of the medium developed for the purpose --- Charles Wright


১. মাধ্যম 

২. বিক্ষিপ্ত দর্শক-শ্রোতা 

৩. নানা মানসিকতার দর্শক(ভিন্নধর্মী শ্রোতা) 

৪.ফলাবর্তন 

৫.স্বল্প ব্যয় 

৬. দ্রুত ও ক্রমাগত প্রচার 

৭. প্রযুক্তির ব্যবহার 

৮. জনগণের প্রয়োজনীয় বার্তা প্রচার


১. মাধ্যম : 

বৃহৎ দর্শক-শ্রোতার কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য অর্থ্যাৎ, গণযোগাযোগ হওয়ার জন্য মাধ্যম প্রয়োজন । মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন যান্ত্রিক বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উপরই সাধারণত নির্ভর করতে হয় । যেমন- রেডিও,টেলিভিশন , ইন্টারেট ,সংবাদপত্র,চলচ্চিত্র ,পোস্টার ইত্যাদি । 


২. বিক্ষিপ্ত দর্শক -শ্রোতা :

 বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য গণমাধ্যমসমূহ গণযোগাযোগের ব্যবস্থা করে থাকে । দর্শক-শ্রোতা দেশ ছড়িয়ে সারা বিশ্বেরও হতে পারে ।


৩. ভিন্নধর্মী শ্রোতা : 

অজানা , অসংখ্য ও বিক্ষিপ্ত দর্শক শ্রোতা থাকে । বয়স ,ধর্ম, গোষ্ঠীর ভিত্তিতে কিংবা মানসিকতার দিক থেকে ভিন্নধর্মী ।

 

৪. ফলাবর্তন : 

সাধারণত মনে করা হয় গণযোগাযোগে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ফলাবর্তন সম্ভব নয় । গতানুগতিক ধরনা অনুযায়ী এটি মনে করা হলেও আধুনিক গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে কার্যকর ফলাবর্তন সম্ভব । তবে এটি প্রিন্ট কিংবা ব্রডকাস্ট মাধ্যমে সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে সকল মাধ্যম বর্তমানে পাঠক-দর্শক মন্তব্যের আলাদা আয়োজন করে । ইন্টারনেট মাধ্যমে সরাসরি ফলার্তন সম্ভব ।

৫. স্বল্প ব্যয়ে প্রচার : 

গণযোগাযোগ একই সাথে অসংখ্য জনগোষ্ঠীর কাছে তথ্য প্রচার করে। অন্যান্য যোগাযোগ ধরনের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানো যায় ,উভয় দিক থেকে ব্যয় স্বল্প হয় । 


৬. দ্রুত এবং ক্রমাগত প্রচার : 

গণযোগাযোগের আরেকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল বার্তার দ্রুত ও ক্রমাগত প্রচার । রেডিও,টেলিভিশন,ইন্টারনেট মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বার্তা প্রচার করা হয় । যা বিভিন্ন সময় পুনরায় প্রচার বা দর্শক-শ্রোতার চাহিদা অনুযায়ী দেখে নিতে পারেন ।


লেখক : শিক্ষার্থী , ৪র্থ বর্ষ

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

No comments

Powered by Blogger.