বক্তৃতা থেকে রিপোর্ট তৈরির জন্য করণীয় । Prepare Reports from Lectures

তাসলিমা ইরিন

বক্তৃতা থেকে রিপোর্ট তৈরির কৌশল


যেকোন বক্তৃতা বা মিটিং-এরই দুটি প্রধান দিক থাকে। প্রথমটি হলো অনুষ্ঠানটির বিন্যাস এবং দ্বিতীয়টি হলো বক্তৃতার বিষয়বস্তু। নোট করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এই দুই দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিন্যাস

মিটিং এ যা বলা হয়েছে শুধুমাত্র তার দলিল রাখাই শুধু একজন সাংবাদিকের একমাত্র কাজ নয়। অফিসিয়াল রেকর্ড বা নথি সংরক্ষণের জন্য একজন সেক্রেটারি সেখানে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন। সাংবাদিককে চেষ্টা করতে হবে সেই মিটিং বা বক্তৃতাটিকে দর্শক ও শ্রোতার কাছে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা। এছাড়াও দর্শকের আকার ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, তাদের মানসিক অবস্থা ও বক্তার কথা বলার ধরন- সতর্কভাবে সব কিছুরই হিসাব রাখতে হবে তাকে ( যেমন: দর্শকসারিতে এত বেশী পরিমাণ নারী থাকার পেছনে কি ধরনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ কাজ করতে পারে?)

যেকোন মিটিং এর ক্ষেত্রেই, মূল বক্তাদের নাম খুঁজে বের করে তা লিখে রাখতে হবে৷ সেইসাথে, দর্শকদের মধ্য থেকেও কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে তার ব্যাপারেও বিস্তারিত জেনে রাখতে হবে।

বড় বড় মিটিংগুলোতে, সম্পূর্ণ সভার বিন্যাসের একটি স্কেচ এঁকে নিজের কাছে রাখলে পরবর্তীতে তা অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।




বক্তৃতা থেকে রিপোর্ট

দর্শকের উপস্থিতির পরিমাণ আন্দাজ করা

বিশেষত বক্তৃতার উপর প্রতিবেদন করার সময়, দর্শকের আনুমানিক পরিমাণ উল্লেখ করা উচিৎ। এটি দর্শককে আকৃষ্ট করবে এবং নিজের মত করে একটি সংবাদ আঙ্গিক সৃষ্টি করবে।

দর্শকের পরিমাণ আন্দাজ করার ক্ষেত্রে, তাদের সবাইকে গুনতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বড় আকারের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যা করা একেবারেই অসম্ভব। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যে কৌশল অবলম্বন করতে হয় তা হলো, বিশ জনের একটি দলের আয়তন অনুমান করা এবং সেই আয়তনের কয়টি দল মোট সেখানে আছে তা হিসাব করে বের করা। কোন উঁচু স্থান থেকে এই গণনা করলে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

এছাড়াও, চলমান কোন মিছিল বা র‍্যালীর উপর প্রতিবেদন করতে গেলে, নিজে সারাক্ষণ চলমান অবস্থায় থাকলে সেখানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যার ব্যাপারে একটি যথাযথ ধারণা পাওয়া সহজতর হবে।

যদিও মাঝেমাঝেই সভায় উপস্থিত পুলিশদের কাছে এই পরিমাণের একটি আনুমানিক হিসাব পাওয়া যায়, তবু এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ পছন্দ অনুযায়ী সংখ্যা বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলার প্রবণতা দেখা যেতে পারে তাদের মধ্যে। সভার আয়োজকদের কাছেও থাকতে পারে এই হিসাব, তবে একই প্রবণতা তাদের মধ্যেই কাজ করে থাকে।

খুব গোছানো কোন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, কয়টি প্লেট সরবরাহ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে অনেকটাই নির্ভুল একটি সংখ্যা পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, অনুষ্ঠানটির প্রধান পরিচারকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দর্শকের কোন প্রতিক্রিয়া যদি উল্লেখযোগ্য হয়, তবে তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে সাংবাদিককে।

আরো জানুন……….সাক্ষাৎকার পরিকল্পনা । সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা

আলোচ্য বিষয়বস্তু

সাংবাদিকের লিখে রাখা নোটগুলিকে অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে। শর্টহ্যান্ড নোট রাখার ভালো গতি ও যেকোন বক্তৃতার ভেতর থেকে বাজে উপাদানগুলো ফেলে দিয়ে শুধু সম্ভাবনাময় অংশগুলোকে বেছে নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে তার।

বক্তৃতার কোন লিখিত কপি যদি না থাকে, তাহলে একদম শুরু থেকেই অনেকগুলো নোট রাখতে হবে। যদি বক্তৃতাটি আকর্ষণীয় হয়, তাহলে পরবর্তীতে আরও সাবধানতার সাথে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা যাবে।

যদি সভায় কোন বিতর্ক হয়, তবে সেটির উপর একটি ভারসাম্যপূর্ণ মতামত দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নোট রাখতে হবে নিজের কাছে।

আজকাল অনেক সাংবাদিকই টেপরেকর্ডার ব্যবহার করে । এমনকি যারা সংবাদপত্রে কাজ করে তারাও। এটি ব্যবহারের পাশাপাশিও গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর নোট রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরবর্তীতে অনেক সময় বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে।

প্রতিবেদন লেখা

অন্যান্য যেকোন রিপোর্টের মতই, এই ধরনের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও কোন উক্তি দিয়ে প্রতিবেদন শুরু না করাই সমীচীন। কিন্তু প্রতিবেদনের অন্যান্য অংশগুলোতে অনেকগুলো উক্তি ব্যবহার করা যাবে।

প্রতিবেদনটিকে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। যদি কোন বক্তা কোন বিষয়ে চরম আপত্তিকর অভিযোগ তোলে, তবে তা কতটুকু সত্য সে ব্যাপারে ন্যূনতম যাচাই করে নিতে হবে। যদি এটি শুধুই মতামত হয়, তাহলে যাকে আক্রমণ করা হয়েছে, এ বিষয়ে তার মতামত কি- তা জেনে নিতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, প্রতিবেদনে যেন নিম্নের বিষয়গুলোর ব্যাপারে অবশ্যই বিস্তারিত থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে:

প্রধাণ বক্তাদের নাম ও পদবী, প্রয়োজনীয় পটভূমিসহ বক্তব্যের মূল অংশগুলোর বিবরণ, সভাটির সময়, স্থান ও উদ্দেশ্য, প্রচুর উল্লেখযোগ্য উক্তিসমূহ, দর্শকদের আকার ও মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ, কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দর্শকসারির মধ্যে থাকলে তার উল্লেখ, দর্শকদের মধ্য থেকে কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া থাকলে তার উল্লেখ।

লেখক : শিক্ষার্থী
এমএসএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.