আইভি লি ও এডওয়ার্ড বার্নেজ : জনসংযোগে তাঁদের অবদান

আইভি লি :
জনসংযোগের আধুনিকায়নে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন জর্জিয়ার সাংবাদিক
আইভি লি। তাঁকে জনসংযোগের আধুনিক রূপের রূপকার বলা হয়।
তিনি ছিলেন জর্জিয়ার এক মন্ত্রীর ছেলে। জর্জিয়ার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতায় যোগ দেন। পরে তিনি জর্জিয়ার আরেক খ্যাতনামা সাংবাদিক জর্জ এফ পার্কারের সাথে যৌথভাবে একটি জনসংযোগ সংস্থা খুলেন। লি র মক্কেলদের মধ্যে বিখ্যাত পেনসিলভানিয়া রেল রোডস থেকে শুরু করে রকফেলারের মতো উচ্চ ধনীরাও ছিলেন।
১৯০৩ সালে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে কয়লা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাক দিলে তা মীমাংসা করার জন্য শ্রমিক নেতা এফ বেয়ার, লি কে নিয়োগ দেন। লি মালিক পক্ষকে বোঝালেন যে, তথ্য গোপন করে নয় বরং ঘটনা যেভাবে ঘটেছে সেভাবেই তুলে ধরে শ্রমিকদের সন্তুষ্ট করা যায়। আগে যেখানে বলা হতো শ্রমিকদের সত্য ঘটনা জানানো যাবে না। এসব নীতিমালার মূল সুর ছিল, আমাদের সংস্থা কোন তথ্য গোপন করে প্রচারের কাজ করবে না। লি র এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই কয়লাখনির শ্রমিক ধর্মঘটের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছিল।
আমেরিকার শ্রমিক ধর্মঘটের অবসানের পর আইভি লি একজন সফল জনসংযোগবিদ হিসেবে সমগ্র আমেরিকাতে পরিচিতি লাভ করেন।। লি তার অসাধারন মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও প্রচার কৌশলের মাধ্যমে রকফেলার পরিবারের খুনি, রক্তপিপাসু এসব নেতিবাচক ধারণাকে মানবতাবাদী ভাবমূর্তিতে রূপান্তরিত করেন।
লি র পরামর্শেই রকফেলারদের কলোরাডো ফুয়েল এন্ড আয়রন কোম্পানির গার্ডদের গুলিতে মহিলা ও শিশুসহ ১১ জন নিহত হওয়ার পরও রকফেলাররা মহাবিপদের হাত থেকে বেঁচে যায়। মূলত লি কিছু জনহীতকর নীতি ও শ্রমিকদের সাথে রকফেলার পরিবারের অন্তরীয় সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক জনসংযোগের স্থপতি হচ্ছে আইভি লি। তিনিই সর্বপ্রথম প্রচার কৌশলে মানবিক আবেদনকে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয় আর সমস্যা সমাধানে অর্থ ব্যয় না করে জনকল্যাণের জন্যও কিছু অর্থ ব্যয় করুক।
এ প্রসঙ্গে লির ভাষ্য এরকম, ” আমি প্রতিষ্ঠানের অর্থ ও লভ্যাংশকে মানবসেবায় কাজে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়েছি। “
তাঁর এই চেষ্টার ফলশ্রুতিতে জনসংযোগ বিশ্বজুড়ে মানবসেবার সর্বজন স্বীকৃত একটি পদ্ধতি হিসেবে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।
Know More…নোয়াম চমস্কি | Noam Chomsky
এডওয়ার্ড এল বার্নেজ
জনসংযোগের ইতিহাসে আইভি লি এর পর যার নাম বিশেষ ভাবে স্মরণীয় তিনি হলেন এডওয়ার্ড এল বার্নেজ। তিনি জনসংযোগকে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
জনসংযোগ পেশায় আসার পূর্বে তিনি বিভিন্ন সাময়িকী তে সাংবাদিকতা করেন। বার্নেজই
প্রথম জনসংযোগের উপর একটি বই লিখেন। বইটির নাম ক্রেসটালাইন পাবলিক অপিনিয়ন। (Crystalline Public Opinion). এ বই তে তিনি পাবলিক রিলেশনস অপিনিয়ন শব্দটি ব্যবহার করেন। বইটি ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি ঐ সময় জনসংযোগ ও জনমতের মতো বিষয়গুলো কে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
স্যার এডওয়ার্ড এল বার্নেজই সর্বপ্রথম জনমতের শক্তিশালী প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন দেশ শত্রুর মনোবল ভেঙে দেয়া ও নিজ দেশের যুদ্ধের পক্ষে মতামত গড়ে তোলা এবং জনগণকে যুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে জনসংযোগের সফল ব্যবহার করা হয়।
এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন জনমত গঠনে ইউএস পাবলিক ইনফরমেশন কমিটি গঠন করেন
১৯১৭ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক জর্জ শিলের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন বিখ্যাত জনসংযোগ বিদ এডওয়ার্ড এল বার্নেজ। তিনি যুদ্ধের কাজে জনসংযোগ কে ব্যবহারের প্রসঙ্গে বলেন, ” আমাদের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তথ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
No comments