প্রযুক্তির সাথে বসবাস ।Living with Technology
শুন্য থেকে নয় পর্যন্ত! এ সংখ্যাগুলোকে ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগের প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণের কৌশলকেই আভিধানিক অর্থে ডিজিটাল প্রযুক্তি বলে। একুশ শতকে এসে বলা যায়
প্রযুক্তি এবং মানুষ একে অপরের পরিপূরক । একটি ছাড়া অন্যটা কল্পনা করা দুষ্কর ।
মানব সভ্যতার বিকাশেই মূলত বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রয়োজন। তাই আদি কাল হতে এখন অবধি বিজ্ঞানীরা মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে প্রযুক্তির প্রসার এমনভাবে ঘটেছে, ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মানুষের নিত্য দিনের সাথী এখন মোবাইল, টেলিভিশন ও কম্পিউটার। তাই অনেকে এ জেনারেশনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন স্ক্রিন জেনারেশন হিসাবে।
২০১৩ সালে করা একটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্তত ৯ শতাংশ মানুষ প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর নিজেদের মোবাইল দেখেন।
বাকিরাও যে খুব একটা পিছিয়ে আছেন এদিক দিয়ে তা কিন্তু নয়। এছাড়াও এই পরীক্ষাটিতে আরো জানা যায় যে, বাড়িতে ফোন ফেলে আসা মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৬৩ শতাংশ মানুষ ঐ দিনের পুরোটা সময় হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকেন।
ইউগভ এবং হাফিংটন পোস্টের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, অধিকাংশ মানুষই রাতে ঘুমানোর সময় সাথে মোবাইল ফোন না থাকলে অস্বস্তি বোধ করেন এবং ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ৬৪ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েন।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি চারজন ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন অর্থাৎ ২৫ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ২০২০ সালে স্মার্টফোনের ব্যবহার আরও বাড়বে। তখন মোট ব্যবহারকারীর ৬০ শতাংশের হাতে এই ফোন থাকবে।
মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ এমন হিসাব দিয়ে বলছে, নতুন স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৭ নম্বরে থাকবে বাংলাদেশ।
জিএসএমএর হিসাবে বিশ্বজুড়ে একক মুঠোফোন সংযোগ সংখ্যা বর্তমানে ৪৯২ কোটি। সম্প্রতি প্রথম আলোর এক রিপোর্টে বলা হয়, দেশে ৯ কোটি লোক এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
Dr. Hisham al-Talib তার Training Guide for Islamic Workers বইতে এক হিসাবে দেখিয়েছেন, একজন মানুষের ৫০ থেকে ৬০ বছরের জীবনের ১২ বছর সময়ই ব্যয় হয়েছে শুধু টিভি দেখার পেছনে। একটি জীবনের যদি এ ১২ বছরই টিভির পেছনে চলে যায়, তাহলে তার অবস্থা আমরা কল্পনা করতে পারি!
আমরা প্রযুক্তির সাথে বসবাস করছি ঠিক আছে। আধুনিক যুগে চলতে হলে মানুষের প্রয়োজন নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। যেমন- মোবাইল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার। কিন্তু এসব প্রযুক্তি এখন মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কিছু কিছু সময়। বরং প্রযুক্তিই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে অধিকাংশ সময়ে।
তাই এ বিষয়ে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেন – Technology is meant to simplify our lives, but excessive dependence on it has complicated our lives. অর্থাৎ, প্রযুক্তির আবিষ্কার এবং ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য, কিন্তু প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে।
লেখক : শিক্ষার্থী
২৩ তম ব্যাচ
আইডি: ১৭৪০৭০৭৯
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments