কৃষি সাংবাদিকতার ইতিহাস । কৃষি সাংবাদিকতার গুরুত্ব

কৃষি সাংবাদিকতার ইতিহাস

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে পূর্ব পাকিস্তানের সময় এবং তারও পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণ, কৃষ্টি -ঐতিহ্যের আওতায় আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ সাংবাদিকতার চর্চা করেছে বিভিন্নভাবে । আধুনিক মুদ্রা যন্ত্র আ বিষ্কারের পূর্বে নবাবী আমলে এমনকি ইংরেজ আমলেও আমাদের প্রাচ্য অঞ্চলে সাংবাদিকতার একটি ধারা প্রচলিত ছিল। তখন অত্র অঞ্চল কৃষি প্রধানই ছিল এবং জনগোষ্ঠীর একটি বৃহত্তম অংশ কৃষিকাজ করেই জীবীকা নির্বাহ করতো। কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কৃষির প্রতিচ্ছবি কতটা প্রতিফলিত হতো তা গবেষণার দাবি রাখে।

১৮৮৭ সালে প্রচন্ড খরায় ব্যাপক ফসলহানি হলো , দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এই সময় ৩৯ বছর বয়সী ভারতের ভাইসবয় লর্ড কার্জন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় জরুরী উপায় খুঁজতে গিয়ে উপলব্ধি করলেন কৃষিতে মনোযোগ দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

১৮৯৫ সালে লর্ড কার্জন বিহারে Imperial Agricultural Research Institute(IARI) গড়ে তোলান, IARI এক অর্থে ভারতীয় কৃষি সাংবাদিকতার সূতিকাগার। এখান থেকেই ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়। ” (The Agricultural Journal of India “। পরবর্তী IARI এর Imperial বদলে হয় Indian এবং কৃষি জার্নালের ধারা আরো বিকশিত হয়।।

” Agriculture Communication ” এবং “Agriculture Journalism ” পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলে। Agriculture communication এর কাজ হলো কৃষিকে সম্প্রসারণ করা এবং Agriculture Journalism এর কাজ হচ্ছে সাধারণের উপলব্ধি ও অনুধাবনের উপযোগী করে কৃষি বিষয়ক তথ্যগুলো পরিবেশন করা । ষাটের দশকে সংঘটিত Green Revolution এর পেছনে যে ভূমিকা তা মূলত Agriculture Journalism এর , অথচ স্বাধীন সাংবাদিকতার অনুপস্থিতি, সমালোচনা, প্রচার প্রকাশের সীমাবদ্ধতার কারণে শত ঘাম, শ্রম, আর চেষ্টা সত্বেও ঠেকানো সম্ভব হয়নি “৭৪ এর দুর্ভিক্ষ “।

কৃষি সাংবাদিকতার ইতিহাস
কৃষি সাংবাদিকতার ইতিহাস


১৮৬৩-৮৫ সময়কালে কাক্ষাল হরিনাথের ” সাপ্তাহিক গ্রামবার্তা ’ পত্রিকায় অন্যান্য অনেক খবরের সঙ্গে ছিল কৃষি সংবাদ।

বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে এবং বর্তমানে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এদেশে কৃষি সাংবাদিকতা কদর বেড়েছে। মূল ধারার সাংবাদিকতায় কৃষি ক্রমশই অধিক গুরুত্ব লাভ করেছে।

আরো জানুন…………..কৃষি সংবাদ লেখার কৌশল । Strategies for Writing Agricultural News


কৃষি সাংবাদিকতার গুরুত্ব


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও আতিউর রহমান বলতেন ” দেশের উৎপাদন ব্যাহত না হওয়ায় কৃষির বাম্পার ফলনের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করেনি।”


একটা সময় ছিল যখন কৃষক আর কৃষির খবর খুব একটা গুরুত্ব পেতনা । খবর মানেই তো খুনোখুনি, রাজনীতি আর সেলিব্রিটি । আমাদের অনুধাবন করতে হবে, কৃষক যদি আমাদের অর্থনৈতিক বিপ্লবের নায়ক হয়, তাহলে তার খবর গুরুত্ব দিয়েই ছাপতে হবে । মনে রাখতে হবে কৃষি ও কৃষক যদি গুরুত্ব পায়, তাহলে আমাদের অর্থনীতির গুরুত্ব পেল।

যে বিপুল জনগোষ্ঠী আমাদের খাদ্য জোগায়, বিশ্ব ব্যাপী আর্থিক টানাপোড়ানের মধ্যেও আমাদের অর্থনীতির উপর আঁচড় লাগতে দেয় না , সেই কৃষকের কথা ফলাও করে বলার সময় এসেছে । যা কিছু কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যে ভাষা কৃষকের অন্তরের ভেতর গুমরে মরছে, তা প্রকাশ করবার সময় এসেছে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতির অমর্ম্য সেন বলেছেন “সংবাদপত্র সঠিক দায়িত্ব পালন করলে সে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে না “।

সার সংকট কিংবা বিদ্যুতের অভাবে আবাদ হচ্ছে না, যেটা যদি যথাসময়ে কর্তৃপক্ষের কানে দিতে পারি তাহলে কৃষক বেঁচে যায়।

কৃষি সাংবাদিকতা নিশ্চিত ভাবে পারে কৃষির দৈন্য সমস্যা আর পিছিয়ে পড়াকে আন্তরিকতা ও মমতা দিয়ে জাতীয়ভাবে তুলে ধরে কাঙ্ক্ষিত সফলতার পথ বাতলে দিতে । একমাত্র কৃষি রির্পোটিং পারে কৃষি বিষয়ক সমস্যা ও সম্ভাবনা সহজ ও বোধগম্য করে গণমানুষের দুয়ারে পোঁছে দিতে।

রোদে মাটি চৌচির হলেই শুধু সেটা কৃষি রিপোর্ট হতে পারে , সে চিন্তা এখন ভুল। কৃষি ও কৃষি কেন্দ্রিক নয়, কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সবই কৃষি রির্পোটিং এর বিষয় হতে পারে। কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রাণ । কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে । সুতরাং , কৃষি রিপোর্টিং এর গুরুত্বটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

কৃষকদের কোনো সংগঠন, সংস্থা, দল বা ক্লাব নেই । তাদের দুঃখ – বেদনা, আনন্দ ,প্রয়োজনের, গুরুত্বের কথা বলার মতো কোনো মুখপাত নেই । সেক্ষেত্রে কৃষি সাংবাদিকরা বা সাংবাদিকতা হতে পারে বিশাল কৃষি ও কৃষক সমাজের প্রতিনিধি । যার ফলে এগিয়ে যাবে কৃষকের চিরায়ত শকট, গতিময় হবে তাদের নিত্য সাহসী পথচলা।

কৃষি সাংবাদিকতার প্রবণতা

ইতিবাচক বিবেচনায় আমরা দেখি, আমাদের মতো দেশের জন্য যেহেতু কৃষিই উল্লেখযোগ্য প্রধান খাত, সুতরাং এদেশের গণমাধ্যমে এ বিষয়টিতেই সবচাইতে বেশি জোর দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা তেমন নয়। পরিসংখ্যান ব্যুারোর ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী এদেশের ৭৪.৫০% মানুষ গ্রামে বাস করে যাদের জীবিকা কৃষি কেন্দ্রীক । আর ২৫.৫০% লোক শহরে বাস করেন। কৃষির সঙ্গে যুক্ত পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজারের উপরে।

অথচ দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে যে ৮০% শহরের চিত্র আর ২০% গ্রামের চিত্র । গণমাধ্যম জাতির আয়না, ” আয়নায় ভুল ছবি দেখা “র মতো এক বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ক বিশেষ পাতা বের করছে। কিছু কিছু সংবাদ পত্র কৃষি বিষয়ক পাতা বের করে কোন ঘোষণা ছাড়াই তা বন্ধ করে দিয়েছে।

কৃষি সাংবাদিকতার ইতিহাস

No comments

Powered by Blogger.