কৃষি সংবাদ লেখার কৌশল । Strategies for Writing Agricultural News

কৃষি সংবাদ লেখার কৌশল

কৃষি সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিক কে নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করতে হবে –

সহজ ভাষা ব্যবহার

কৃষি সংবাদের অভিষ্ঠ শ্রোতা -দর্শক যেহেতু কৃষক , কাজেই তাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও শিক্ষাদীক্ষার কথা বিবেচনা করে ভাষার ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে প্রমিত বাংলার পরিবর্তে এক্ষেত্রে কৃষকের মুখের ভাষা ব্যবহার করা দূষণীয় হবে না ।

বিশেষ করে কৃষকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ বা কৃষকের সঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্যই গ্রামীণ ভাষা, সম্ভব হলে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা ভালো। এতে কৃষক সহজ হতে পারে এবং মনের কথা খুলে বলতে পারে।

 কৃষি সংবাদ

বিশেষ শব্দ ব্যবহারে সর্তকতা

কৃষি সংবাদ এ এমন কিছু শব্দ আছে যার সুনির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই। যেমন – বাম্পার ফলন, এটি একটি চটকদার শব্দ, বাম্পার বলতে আসলে কি বোঝায়? এর পরিমাপই বা কি? সাধারণ পাঠক শ্রোতার কাছে এর কোন বোধগম্যতা তৈরি হয়না, এক্ষেত্রে প্রতিবেদকের উচিত সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিমাপ দিয়ে বিষয়টি বলা।

মধ্য স্বত্বভোগী

কৃষি পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মধ্য স্বত্বভোগীর জড়িত থাকার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। মূলত, বাজারজাতকরণের সঙ্গে যেসব ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি জড়িত তাদেরকেই মধ্যস্বত্বভোগী বলা হয়। কিন্তুু , অনেক ক্ষেত্রে দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি, কাজেই ঢালাওভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীকে ইতিবাচক ভাবেও উপস্থাপন করার অবকাশ রয়েছে।

ছবি ফুটেজ ব্যবহারে সতর্কতা

প্রতিবেদনের বিবরণ এবং ছবির মধ্যে মিল না থাকলে দর্শক -শ্রোতা মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হলো , ইউরিয়া সারের সংকট কিন্তু ছবি দেখানো হলো টি এসপি বা অন্য সারের তখন দর্শক শ্রোতা কি বুঝবে তা সহজেই অনুমেয়।

সহজ ও আকর্ষণীয় উপস্থাপন

সাধারণ কৃষি সংবাদে সকল পাঠক শ্রোতা আগ্রহ থাকে না। কাজেই একটু আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা না গেলে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে না, সহজ ও আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা গেলে তাদের কৌতুহল জাগিয়ে তোলা সম্ভব।

এর মাধ্যমেই প্রতিবেদকের মুন্সিয়ানা ফুটে ওঠে। শব্দ ব্যবহারে মিতাব্যয়ী , কম কথায় কত বেশি তথ্য দেওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেন পাঠকের মনে হয় ছোট একটা খবর পড়ে অনেক অজানা বিষয় বা তথ্য জানলাম । এমন তথ্য পরিহার করতে হবে যা পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় নয়।

পরিভাষা ব্যবহার

কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদনে অনেক পরিভাষা ব্যবহার করতে হয় যা পাঠক শ্রোতার কাছে পরিচিত নয়। নতুন প্রযুক্তি, সার-কীটনাশক ব্যবহার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে কিছু না কিছু পরিভাষা রয়েছে, যা কেবল কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই বোঝান বা জানেন। কোনো প্রযুক্তি ও পরিভাষাকে সহজ ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করতে হবে যাতে তা সকল শ্রেণীর পাঠক বুঝতে পারেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরল এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

কৃষি এবং সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, লৌকিক সংস্কার পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,এদেশের লোকসংস্কৃতির পরতে পরতে বিভিন্নভাবে ও ভঙ্গিমায় কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য লুকায়িত রয়েছে। শুধু তাই নয়, লোকসংস্কৃতি, লোকসাহিত্য ও লোক প্রকৃতি ধারার সাথে কৃষি তথ্য বহন করে যুগ যুগ ধরে কৃষি তথ্য সম্প্রসারনে কাজ করেছে।

এদেশের লোক সাহিত্যের ভিতর -বাহির ভালভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে, গাম্ভীরা,গাথা গীতিকা, ছড়া, জারিগান, ঝুমুর, টুসুগান, ডাক ও খনার বচন, ধামালী, ধাঁধা পুরা তা, প্রবাদ , ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি ,রুপকথা, যারিগান প্রভৃতি লোকসংস্কৃতির উপাদানের মধ্যে কৃষি তথ্য রয়েছে এবং যেগুলো জনকৃষকদের নিকট কৃষি তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ন।

কৃষি ও অর্থনৈতিক জীবনের তাগিদে যে অনুষ্ঠান, তার সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করেছে লোকসমাজ। ধর্মকে কেন্দ্র করে যে উৎসব, তার মৌল উদ্দেশ্য় আর কৃষি ও অর্থনৈতিক উৎসবের উদ্দেশ্য স্বতন্ত্র নয়। শস্য বৃদ্ধি কারক রূপে ক্ষেত্রপতির পুঁজা, উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির কামনায় নদী, হ্রদ, ঝরণা, সাগরের পুজা, কূপ জলাশয়ে খননের সময় বিভিন্ন পুজা এ ধর্মানুষ্ঠান এ সবই মিশ্র সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

উদ্ভিদ জগতের বৃদ্ধি ও পুষ্টির শর্তগুলির সম্পর্ক আছে, যেহেতু একসময় বৈজ্ঞানিক ধারণা পর্যন্ত ছিলনা । তাই জাদু ও ঐন্দ্র জালিকতায় বিশ্বাস ও সেই সঙ্গে সন্তান উৎপাদনে নারীর মধ্যে সম্পর্ক আছে বলে বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল।

এই দুয়ের গভীরে নিহিত এক যোগসূত্রের ধারণা থেকে ঐশী দেবশক্তি কল্পনা এসেছে। পরিবেশ চেতনা সজ্জাত অভিজ্ঞতার এক বিষ্ময়কর সংকলন হলো খনার বচন। শস্য, বৃক্ষরোপন, গৃহনির্মাণ, জ্যেতিষ প্রভৃতি সম্বন্ধে ছড়ার আকারের প্রচলিত বচন হলো খানার বচন।

No comments

Powered by Blogger.