আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এর মূলনীতি । Principles of Interpersonal Communication
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এর মূলনীতি Principles of Interpersonal Communication
Interpersonal communication বা আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ , যোগাযোগের একটি মৌলিক ধারা। সাধারণভাবে বলতে গেলে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ হল দুইজন ব্যক্তি বা একটি ছোট দলের সদস্যদের (যারা পরষ্পরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত) মধ্যকার যোগাযোগ। মূলত আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা জরুরি।
যেমন – বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ, পরিবারের সদস্য,সহকর্মীদের মধ্যকার যোগাযোগকে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মূলনীতি গুলো নিম্নরূপ :
১. Interpersonal Communication is a transnational process
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এক ধরনের আদান প্রদান মূলক প্রক্রিয়া। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় বার্তার আদান প্রদান যুগপৎ হয়ে থাকে।যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগণ একইসাথে প্রেরক এবং প্রাপকের ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগের উপাদানসমূহ পরষ্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ শুধুমাত্র যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগণই পরষ্পর নির্ভরশীল নয় বরং যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান গুলোও পরষ্পর নির্ভরশীল। যেমন: প্রেরক না থাকলে বার্তার কোন প্রাপক থাকে না। আবার বার্তা না থাকলে তার বিপরীতে কোন feedback সৃষ্টি হয় না।
২. Interpersonal communication is purposeful
প্রত্যেক আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের একটি উদ্দেশ্য থাকে। প্রকৃতপক্ষে বেশ কিছু উদ্দেশ্য থাকে। কোন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ বা অন্যকে শিক্ষিত করা, একাধিক বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ, একে অন্যকে প্রভাবিত করা,সহযোগিতা করা ইত্যাদি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের উদ্দেশ্য।
যেমন: আমরা যখন কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগে লিপ্ত হই তখন এটি একটি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ প্রক্রিয়া। যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা পরষ্পর বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করি, কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি। আবার নিজের মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করি। এর মাধ্যমে একে অন্যের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি। এসবই আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য।
৩. Interpersonal communication is ambiguous :
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগে যে সকল বার্তা আদান প্রদান করা হয় তা দ্ব্যর্থবোধক হতে পারে। অর্থাৎ বার্তাটির একের অধিক অর্থ থাকতে পারে। অনেক সময় যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বার্তা আদান প্রদানে ব্যক্তি এমন কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করে থাকে যা প্রাপকের কাছে ভিন্ন অর্থে ধরা দিতে পারে। যেমন : একজন ব্যক্তি কোন হাস্যরসাত্মক বক্তব্য করলে অন্যজন তার অর্থ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে অসমর্থ হলে এরকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৪.Interpersonal communication may be symmetrical or complementary
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ভারসাম্যপূর্ণ অথবা পরিপূরক হতে পারে।
Symmetrical (ভারসাম্যপূর্ণ) : এ ধরনের প্রক্রিয়ায় মূলত দুইজন ব্যক্তি একই ধরনের আচরণে প্রবৃত্ত হয়। যেমন : একজন কোন কাজে আগ্রহ দেখালে অন্যজনও সেই কাজে আগ্রহ দেখায়। একজন কোন ঘটনায় কষ্ট পেলে অন্যজনও কষ্ট পায়।
যেমন : দুইজন বন্ধু অনেক সময় একই ধরনের আচরণ করে থাকে। একইসাথে বেড়াতে যাওয়া, বেড়ানোর জন্য একই জায়গা পছন্দ করা, একই রকমের পোশাক পরা ইত্যাদি। মূলত এ ধরনের সম্পর্কে ব্যক্তিগণ পরষ্পর সম আচরণ করে থাকে এবং তাদের মধ্যে ভিন্নতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে।
Complementary ( পরিপূরক) : এ ধরনের সম্পর্কে ব্যক্তিগণ একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকেন। দুইজনের আচরণে ভিন্নতা থাকে কিন্তু তা পরষ্পরের আচরণের পরিপূরক। যেমন : কোন একটি বিষয়ে একজন মুখ্য ভূমিকা পালন করলে অন্যজন সেখানে গৌণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে একজন অন্যজনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৫.Interpersonal Communication refers to content and relationship :
আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে বার্তার বস্তুগত ও সম্পর্কগত দুই ধরনের প্রভাব থাকে। কখনো কখনো একই বার্তা আদান প্রদান করা হলেও সম্পর্ক ভেদে এর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হতে তে পারে। যেমন : একজন বন্ধু আরেকজন বন্ধুকে দেখা করতে বললে ওই বন্ধুর যেরকম প্রতিক্রিয়া হবে, একজন শিক্ষক তাকে দেখা করতে বললে তার প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হবে। বন্ধুদের মধ্যকার সম্পর্কের তুলনায় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কে বাধ্যবাধকতা বেশি হওয়ার এই ধরণের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আবার একই সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বার্তার প্রভান ভিন্ন ভিন্ন হয়।
৬. Interpersonal communication is a series of punctuated events :
যোগাযোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্টভাবে এর কোন শুরু বা শেষ পাওয়া যায় না। যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের আচরণের ভিত্তিতে কোন অংশকে কারণ আর কোনটিকে ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ একটি আচরণের কারণে অন্য একটি আচরণ সৃষ্টি হয়। তবে এর মধ্যে কোনটি কারণ আর কোনটি ফলাফল তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে।
৭. Interpersonal communication is inevitable, irreversible and unrepeatable :
আমরা কেউই আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে পারি না। যদিও অনেক সময় মনে করা হয় যোগাযোগ ব্যক্তির উদ্দেশ্য নির্ভর, তবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে না হলেও ব্যক্তি সবসময় কোন না কোন ধরনের যোগাযোগে লিপ্ত থাকে। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ একটি অপরিবর্তনীয় প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যে বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে বা বার্তা আদান প্রদান করা হয়েছে তা আর ফেরত নেয়া সম্ভব নয়। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। কেননা পৃথিবীতে সব কিছুই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তেমনিভাবে যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, তার অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের পরিবেশ এগুলোও সবসময় পরিবর্তিত হচ্ছে।
তাই ব্যক্তি চাইলেও যোগাযোগ প্রক্রিয়ার হুবহু পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত আমরা যে যোগাযোগের সমুদ্রে ডুবে থাকি তার অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ। তাই দক্ষতার সাথে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
লেখক :
শিক্ষার্থী
৩য় বর্ষ
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments