ওয়েস্টলী ও ম্যাকলীন মডেল । গণযোগাযোগ মডেল

ওয়েস্টলী ও ম্যাকলীন মডেল ওয়েস্টলী ও ম্যাকলীন এর গণযোগাযোগ মডেল

সোজা কথায় মডেল বলতে আমরা কোন বৃহৎ ও জটিল বস্তুুর ছোট ও সরল প্রতিরূপকে বুঝে থাকি। মডেল হলো বাস্তব বা অনুমিত বাস্তবের একটি সরল প্রতিরূপ। যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি একটি জটিল এবং বিমূর্ত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াকে বোঝাযর জন্য যোগাযোগবিদরা আমাদের সামনে মডেলের উপস্থাপন করেছে। নিন্মে ওয়েস্টলী ও ম্যাকলিনের মডেলটি উপস্থাপন করা হলঃ-

ব্রুস ওয়েস্টলী ( Bruce westley) ও ম্যালকম ম্যাকলীন(Malcolm Maclean)১৯৫৭ সালে মডেলটি প্রদান করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত উপাত্তগুলোকে সঠিক উপায়ে বিন্যাস্ত করে গণযোগাযোগ সম্পকির্ত গবেষণায় প্রয়োগের লক্ষে মডেলটি প্রদত্ত হয়।সমাজ মনস্তত্ত্ব, ভারসাম্যের তত্ত্ব এবং Co-orientation এর মূলনীতিকে ভিত্তি করে মডেলটি দাঁড় করানো হয়।

একটি বাহ্যিক বস্তুু সাপেক্ষে দু’ ব্যক্তির মধ্যকার যোগাযোগকে ব্যাখ্যার পাশাপাশি গণযোগাযোগর জটিল পরিস্থিতিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ওয়েস্টলী ও ম্যাকলীন এ মডেলে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।




ওয়েস্টলী ও ম্যাকলীন মডেল

চিত্রে A,B,X,C,fBA,fBc,fcA,XC ইত্যাদি প্রতীক রয়েছে। নিন্মে মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

A বলতে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝানো হয়েছ যাদের পরিবেশ অর্থাৎ x সমূহ সম্পর্কে B কে অর্থাৎ সমাজের সদস্যদেরকে কিছু বলার আছে। রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞাপনদাতা ও গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠানসমূহ A এর ভূমিকা পালন করে। অনেকক্ষেত্রে , A এর ভূমিকা অনেকটা Advocate এর মতো। মডেলে ধরে নেয়া হয়েছে যে,যোগাযোগ করার পেছনে A এর বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।

B ব্যক্তি, দল বা পুরো সিস্টেমকে বা Audience কে বুঝায়, যার বা যাদের পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্য বা পরিচিত দরকার।

c গণমাধ্যম প্রতিষ্টান বা তার অভ্যন্তরস্থ কোন ব্যক্তিকে বুঝায়। C বিকল্প Aথেকে তথ্য বাছাই করে কাউকে যেমন গণমাধ্যমে যোগাযোগের উৎস হওয়ার সুযোগ করে দেয় তেমনি সে সরাসরি x থেকেও তথ্য প্রচার করতে পারে

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝা যেতে পারে। ধরা যাক, বাংলাদেশে শিশু পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছে । এ অবস্থায় কোন গণমাধ্যম – যেমন অনেক পুষ্টি বিশেষজ্ঞের মধ্য থেকে বাছাই করে কাউকে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দিতে পারে, তেমনি তারা নিজেরাও প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারে।

C জনগণ অর্থ্যৎ B এর প্রয়োজনকে জানবে এবং Aওx বাছাইয়ের ক্ষেএে জনগণের প্রয়োজন ও প্রাসাঈিকতার দিকে লেয়াল রাখবে। মডেলে C এর ভূমিকা অ- উদ্দেশ্যেমূলক বলে ধরে নেয়া হয়েছে।

জনগণের (B) কাছ থেকে উৎস A এর কাছে পাঠানো ফলাবর্তন fBA দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে। A যদি বিজ্ঞাদনদাতা হয় তবে পণ্যের কাটতি তার কাছে ইতিবাচক ফলাবর্তন বলে বিবেচিত হবে। আবার সে যদি রাজনীতিবিদ হয় সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে জাতীয় মাধ্যমে ফলাবর্তন প্রকাশ পাবে। আবার জনগণের (B) কাছ থেকে যোগাযোগ প্রতিষ্টানে যে ফলাবর্তন পৌঁছে তা fBc দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে।

সরাসরি যোগাযোগ করে অথবা শ্রোতা দর্শক – পাঠক সম্পর্কে গবেষণা করে এ ফলাবর্তন পাওয়া যেতে পারে। আবার শ্রোতা দর্শক- পাঠক স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েও ফলাবর্তন দিতে পারে। C ভবিষ্যতে কোন A বা x কে বাছাই করবে তা এ ফলাবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

অনেক সময় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ C থেকে যোগাযোগের উৎস A এর কাছে ফলাবর্তন পাঠানো হয় যা মডেলে fCA দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। এ ফলাবর্তন A কে যেমন উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করতে পারে তেমনি তার আচরণেও অনেক পরিবর্তনও আনতে পারে।

X অর্থাৎ পরিবেশ সম্পর্কে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সরাসরি পর্যবেক্ষণ (xওc ও x4c) xc দ্বারা বুঝানো হয়েছে। যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিবেদকগণের প্রতিবেদন থেকে এটি পাওয়া যায়।

যোগাযোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য মডেলটি কৃতিত্বের দাবী রাখে। যোগাযোগের একটি বিশেষ দিক হলো Grate keeping। মডেলে এ বিষয়টি সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে।

A অর্থাৎ যোগাযোগের উৎস পরিবেশের অনেকগুলো বিষয় থেকে বিশেষ উদ্দেশ্যে একটি বা দুটি বিষয় বেছে নেয়

যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান (c) আবার বিকল্প A থেকে একটি বা দুটিকে বেছে নেয়। যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান যদি A এর মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি পরিবেশ থেকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সে ক্ষেত্রেও নির্বাচনে প্রশ্নটি থেকে যায়।

আবার B অর্থাৎ জনগণ সমাজে অনেকগুলো C অর্থাৎ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে তার পছন্দের মাধ্যমটিকে নির্বাচন করবে। মুক্ত প্রতিযোগিতার ফলে কার্যত শ্রোতা – দর্শক পাঠকই তার (c) চালিকা শক্তি হবে এবং C এর নিরপেক্ষতা এভাবেই নিশ্চিত হবে।

আরো জানুন……….নীরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব । Spiral of Silence Theory

মডেলের গুরুত্বপূর্ণ দিক

গণযোগাযোগ সম্পর্কিত গবেষণা প্রয়োগের লক্ষ্যেই এই মডেলটি প্রদত্ত হয়েছে। যোগাযোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে এই মডেলে।

১. গণযোগাযোগ সম্পর্কে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দানে মডেলটি কাজে লাগাতে পারে।

২. উৎস বাস্তবতাকে কতটা বিকৃত করে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান উৎসের বক্তব্যে কোনরূপ কাটছাট করে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণায় মডেলটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. মডেলে feed back বা ফলাবর্তনের কথা গুরুত্বপূর্ণ সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।

৪. গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুুল প্রচলিত শব্দ Gate keeping . এ বিষয়ের উপর আলোচনাও মডেলে উঠে এসেছে।

৫. গণমাধ্যমের মূলচালিকা শক্তি হচ্ছে দর্শক- শ্রোতা পাঠক। তা এই মডেলে দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে।

সমালোচনা

মডেলটির তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক মূল্যের পাশাপাশি এতে কিছু কিছু দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়।

প্রথমতঃ মডেলটিতে ধরে নেয়া হয়েছে যে, যোগাযোগে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে এবং সম্পর্কটি হবে স্ব- নিয়ন্ত্রিত এবং সবার জন্য উপকারী। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অংশগ্রহণকারী মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক থাকে যা যোগাযোগে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

দ্বিতীয় : মডেলে ধরে নেয়া হয়েছিল যে, উৎস যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এবং দর্শক – শ্রোতা – পাঠক সংহতি সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, এ তিন পক্ষের পরস্পর বিরোধী স্বার্থ থাকে এবং তারা সংহতি বজায় রাখতে কিছুই করতে পারে না।

তৃতীয় : মডেলে যোগাযোগ প্রতিষ্টানকে সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বলে ধরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তারা স্বাধীন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং তারাই তখন কার্যত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে।

No comments

Powered by Blogger.