সম্পাদকীয় প্রকারভেদ । সম্পাদকীয় কত প্রকার ও কী কী

তাসলিমা ইরিন

সম্পাদকীয় প্রকারভেদ । সম্পাদকীয় কত প্রকার ও কী কী


পত্রিকার পাতায় সম্পাদকীয় এর গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কমবেশি ধারণা রয়েছে। কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয়ে পত্রিকার সম্পাদকের নিজস্ব মতামত ছাপা হয় সম্পাদকীয়তে । যার মাধ্যমে হাউজের পলিসি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। ছোট বড় সব ধরনের পত্রিকারই নিজস্ব দর্শন থাকে। সম্পাদকীয়র মাধ্যমে পত্রিকার নিজস্ব দর্শন প্রতিফলিত হয়। পাঠকের বিশ্বাস, নির্ভরযোগ্যতা নির্ধারণে এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কোন নির্দিষ্ট ঘটনায় কোন কোন পত্রিকা শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ নমনীয় থাকে। এর মাধ্যমেই পাঠকের কাছে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে।

সংবাদের উপস্থিতি স্বত্ত্বেও পত্রিকায় সম্পাদকীয় তার নিজের জায়গা করে নিয়েছে স্বমহিমায়। তবে, আবেদন ভেদে সম্পাদকীয়র নানা রকমফের ঘটে। বিভিন্ন বিশ্লেষক সম্পাদকীয়র নানা প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। এর মধ্য থেকে আমরা সম্পাদকীয় এর আট টি প্রধান প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করব। সম্পাদকীয় প্রকারভেদ গুলো (আটটি) হল-

সম্পাদকীয় প্রকারভেদ

১. তথ্যসমৃদ্ধ সম্পাদকীয়
২. ব্যাখ্যামূলক সম্পাদকীয়
৩. প্রশংসামূলক সম্পাদকীয়
৪. সমালোচনামূলক সম্পাদকীয়
৫. বিতর্কিত বিষয়ে সম্পাদকীয়
৬. বিনোদনমূলক সম্পাদকীয়
৭. অনুভূতি নির্ভর সম্পাদকীয়
৮. বিশেষ সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয় প্রকারভেদ

নিম্নে সম্পাদকীয়র এই আটটি প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

১. তথ্যসমৃদ্ধ সম্পাদকীয়


সাধারণত তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে যেসব সম্পাদকীয় লিখা হয়ে থাকে সেগুলোকে তথ্যনির্ভর সম্পাদকীয় বলা হয়। কোন নির্দিষ্ট সংবাদ, ঘটনার সম্পর্কে সত্য তথ্য জানাতে প্রকাশিত হয় এধরনের সম্পাদকীয়। উদাহরণস্বরূপ : করোনা ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য সমৃদ্ধ সম্পাদকীয় হলো তথ্যসমৃদ্ধ সম্পাদকীয়র উদাহরণ ।

২. ব্যাখ্যামূলক সম্পাদকীয়


সম্পাদকীয়কে পত্রিকার কণ্ঠস্বর বলা হয়। ব্যাখ্যামূলক সম্পাদকীয়র উদ্দেশ্য ঘটনা সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব তুলে ধরা নয়, বরং ঘটনার সত্যিকার বর্ণনা পাঠকের সামনে তুলে ধরা । এই ধরনের সম্পাদকীয়র কাজই হল পাঠকের সামনে ঘটনা বা তত্ত্ব বা চলমান পরিস্থিতি বর্ণনা করা। তবে এখানে পত্রিকার নিজস্ব কোন মতামত দেওয়া যাবে না। বিচারের ভার পাঠকের হাতে ন্যস্ত করাই হল এর অন্যতম উদ্দেশ্য ।

৩. প্রশংসামূলক সম্পাদকীয়


কোন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের কাজকে প্রশংসা করে অথবা সম্মান প্রদর্শন পূর্বক ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে লিখা হয় এ ধরনের সম্পাদকীয়। কাজের প্রশংসার মাধ্যমে তাদের উৎসাহী করে তোলা হয়।

৪. সমালোচনামূলক সম্পাদকীয়


গঠনমূলক সমালোচনা করাই হল একটি সম্পাদকীয়র উদ্দেশ্য। তবে যদি উল্লিখিত সমস্যার সমাধানের উপায় অব্যক্ত থেকে যায়, তবে এই সম্পাদকীয় এর কোন মূল্য নেই । সংবাদে উপস্থাপিত তথ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক তুলে ধরে পাঠককে উৎসাহী করে তোলাই হল এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । এ ধরনের সম্পাদকীয়র শেষে সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে মতামত প্রদান করা হয়।

আরো জানুন…..সম্পাদকীয় কি ? সম্পাদকীয় বিষয়ের মৌলিক ধারণা

৫. বিতর্কিত বিষয়ে সম্পাদকীয়


বিতর্কিত বিষয়ে সম্পাদকীয় তে পাঠকের সামনে এক ধরনের বিতর্ক হাজির করা হয় । সাধারণত পূর্ববর্তী কয়েকদিনের সংবাদের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের সম্পাদকীয় লিখা হয়। সম্পাদক সাধারণত সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালার সমালোচকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। যখনই যেখানে সরকার ভুল কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে সম্পর্কে তুলে ধরা সম্পাদকীয় এর অন্যতম প্রধান কাজ। বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে পাঠককে নিজের মতামতের দিকে প্রভাবিত করার কারণে এ ধরনের সম্পাদকীয়কে প্রভাবিতকরণ সম্পাদকীয়ও বলা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ : করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে সম্পাদকীয়।

৬. বিনোদনমূলক সম্পাদকীয়


পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের দুঃসংবাদের মাঝখানে এক টুকরো আলো হিসেবে উপস্থাপন করা যায় সম্পাদকীয়র এই ধরনকে। তবে সব পত্রিকায় এ ধরনের সম্পাদকীয় লিখা হয় না। এটি দুই ভাবে লিখা হয়ে থাকে। সাধারণত কোন মজার বিষয়ে কিছুটা হিউমার যুক্ত করে এটি লিখা হয়ে থাকে। অথবা কোন জটিল বিষয়ে ব্যাঙ্গাত্মক উপায়ে এটি তুলে ধরা হয়। পাঠক মানসে কিছুটা হাস্যরস, কিছুটা রম্যরচনার মধ্য দিয়ে এটি সত্য উপস্থাপন করে চলে।

৭. অনুভূতি নির্ভর সম্পাদকীয়


বিতর্ক বা ব্যাখ্যার পরিবর্তে কখনো কখনো দর্শনভিত্তিক মতচর্চার ক্ষেত্রেও পরিনত হয় সম্পাদকীয় পাতা। বিশেষত পরিবেশ অথবা অনুভূতি বিষয় নির্ভর হয়ে থাকে এগুলো।

৮. বিশেষ সম্পাদকীয়


উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো এক প্রকার সম্পাদকীয় লিখা হয়ে থাকে। কোন বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে লেখা হয় এসব সম্পাদকীয়। উদাহরণস্বরূপ : স্বাাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস , ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি দিবসের সম্পাদকীয়।

লেখক: শিক্ষার্থী
এমএমএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.