গভীরতম প্রতিবেদনের গুরুত্ব ও ব্যবহার । ডেপথ্ রিপোর্টিং

গভীরতম প্রতিবেদন এর গুরুত্ব ও ব্যবহার

প্রতিটি মানুষই তার পরিপার্শ্বকে যথাযথ ভাবে বুঝতে চায়। নিজস্ব বিচার-বিবেচনা কে ব্যবহার করে মানুষ তার চারপাশের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে একটা ধারনা তৈরি করে । যখনই মানুষ যোগাযোগে লিপ্ত হয় তখনই নিজের ধারণা ব্যক্ত করে এবং অন্যের ধারণা জানতে চায় । যোগাযোগের সাফল্য নির্ভর করে দুই পক্ষ কতটা সক্রিয়ভাবে এই আদান-প্রদানে অংশ নিতে পারছে তার ওপর । যার ফলে অর্জিত হয় ঘটনা ভাবের সচ্চতা । মানুষের এই চাহিদার মধ্যে গভীরতম প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা সুপ্তভাবে উপস্থিত ।

পাঠক চায় সংবাদপত্র তাকে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী বুঝতে সাহায্য করবে । এজন্য প্রথমেই দরকার তথ্যের । সংবাদপত্র পাঠককে সেই তথ্য দেয় । এই তথ্য পাঠক কেবল জিজ্ঞাসা মেটাতেই ব্যবহার করেনা , অন্যান্য প্রয়োজন যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য , চিকিৎসা ,বিজ্ঞান , শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যও ব্যবহার করে । এসব বিষয়ে সকল সুবিধা – অসুবিধা সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাঠক কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে গভীরতম প্রতিবেদন ।

যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় ফোর্থ স্টেট হিসেবে সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব হলো অন্যান্য সংস্থাগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করছে কিনা তার ওপর নজর রাখা এবং তাকে পরামর্শ প্রদান । রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি শাখা- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ যেমন পরস্পরের কার্যাবলীর উপর নজর রাখে, ঠিক তেমনি সংবাদ মাধ্যমের কাজ হচ্ছে এই সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী নিরীক্ষা করা । গভীরতম প্রতিবেদনের মাধ্যমেই সংবাদপত্র এই কাজটি করে থাকে ।




গভীরতম প্রতিবেদনের গুরুত্ব

ব্যক্তি অধিকার সংরক্ষণের তাগিদ থেকেও ডেপথ্ রিপোটিং এর বিস্তৃতি ঘটেছে । ব্যক্তির সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং তাকে চূড়ান্ত বলে গণ্য করা গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাথমিক লক্ষণ । ব্যক্তির সেই অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে কিনা এবং তা কিভাবে সংরক্ষিত হতে পারে তার প্রতি নজর দেবার তাগিদ ডেপথ্ রিপোর্টিং বিস্তৃতি লাভের একটি অন্যতম কারণ ।

সংবাদপত্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেও ডেপথ্ রিপোর্টিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে । ইলেকট্রনিক মাধ্যমের বিস্তৃতির ফলে মানুষ এত দ্রুত সংবাদ পেয়ে যাচ্ছে যে সংবাদপত্র কেবল ওপরিতলের সংবাদ দিয়ে পাঠককে আকর্ষণ করতে পারছে না । যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট পিটার্সবার্গ পত্রিকার সঙ্গে নির্বাহী সম্পাদক টি সি হ্যারিস বলেছেন-

Superficial reporting is moribund. This means that we have to report in-depth if we are to make our paper interesting.

আরো জানুন……..ডেপথ্ রিপোর্টিং কি । Depth Reporting

প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ওপরিতলের তথ্যই যথেষ্ট নয় । যে কোন বিষয়ে গভীরভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করার জন্য গভীরতম প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিসীম । গভীরতম প্রতিবেদন আমাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বুঝতে সহায়তা করে এবং আমাদের সিদ্ধান্ত কে প্রভাবিত করে । এছাড়া-

১ . পারিপার্শ্বিক অবস্থা সঠিকভাবে বুঝতে সহায়তা করে

২. পাঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে

৩. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে

৪. ব্যক্তির অধিকার রক্ষার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে

৫. প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে

৬. সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে

৭. সংবাদপত্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

৮. দুর্নীতি দমনে সহায়তা করে

৯. পাঠকের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে

No comments

Powered by Blogger.