বিটের কলাকৌশল । Beat Reporting Techniques
বিটের কলাকৌশল । Beat Reporting Techniques
সংবাদপত্রের প্রথিতযশা সব দেশি-বিদেশি সাংবাদিক তাদের তাদের পেশা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই বিট ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেছেন । এই পদ্ধতিতে যে তথ্য সংগ্রহ খুবই কার্যকর তা তারা প্রমাণও করতে পেরেছেন । এই পদ্ধতিতে কাজ করে তারা এমন কিছু কলাকৌশল বের করতে পেরেছেন যার সাহায্যে একজন রিপোর্টার তথ্যসমৃদ্ধ রিপোর্ট তার নিজ সংগঠনকে উপহার দিতে পারেন । আমরা এখন সেই কলাকৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা করব ।
বিটের কলাকৌশল
১. বিট সম্পর্কে জানা
২. বিটের লোকজনকে জানা
৩. বিটের কাছে ভালো হওয়া
৪. বিট বা অফিসের খোঁজ-খবর রাখা
৫. সংবাদ সূত্রের সাথে ভালো সম্পর্ক
৬ . ভালো ব্যবহারের যোগ্যতা
৭. রিপোর্টার হচ্ছেন সংবাদ বিশেষজ্ঞ
৮. রিপোর্টার হবেন দায়িত্বশীল
৯. রিপোর্টার উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবে না
১০. রিপোর্টার দিনপঞ্জিকা বা ডায়েরি রাখা
১১. রিপোর্টার বার্তাকক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখা
১. বিট সম্পর্কে জানা
বিট রিপোর্টিং এর একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে রিপোর্টারকে তার বিট সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে । একটি বিট কে জানার জন্য সব ধরনের পন্থা পদ্ধতিই রয়েছে । একটি অফিসে গেলে অফিসটির নাম ঠিকানা দেখেই বিটের সঙ্গে রিপোর্টারের পরিচিতির সূত্রপাত হয় । তারপর অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন টুকটাক আলাপ করে অফিসটি সম্পর্কে পুরো জেনে নেওয়া যায় । একটি প্রতিষ্টান কেমন করে জন্ম নিলো, কে এর প্রতিষ্ঠাতা , কে এর দায়িত্বে আছেন, এর অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন এ সম্পর্কে জানতে হবে । বিট সম্পর্কে পুরো জানা হয়ে গেলে রিপোর্টার তার মূল তথ্য সংগ্রহের পথে নামতে পারেন । রিপোর্টার তার বিট সম্পর্কে তার পত্রিকা অফিসের মর্গ থেকে কাগজপত্র ঘেটে জানতে পারবেন ।বিট সম্পর্কে পুরোপুরি জানলে রিপোর্টারের তথ্য সংগ্রহের কাজটি খুবই সহজ হয় ।
২. বিটের লোকজনকে জানা
একজন বিট রিপোর্টারকে তার বিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে ভাল করে জানতে হবে । কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচিত কাগজপত্র দেখলেই চলবে না । সেই প্রতিষ্ঠানের পুরো কর্মী বাহিনীকে জানতে হবে । একটি অফিসের রেকর্ডপত্র ঘেঁটে যতটুকু জানা যায় তার চেয়ে বেশি জানা যায় কর্মচারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে । যদি একটি অফিসের টাইপিস্ট, কেরানি বা তথ্য বিভাগের কর্মচারীর কাছ থেকে অফিসের বসদের সম্পর্কে বা অফিসের ভেতরের খবর পাওয়া যায় তবে তাদের সাথে খুবই খোশমেজাজে আলাপ আলোচনা করতে পারেন । কারণ, এরা কথা বলতে ভালোবাসে । এদের মধ্যে কেউ যিনি উপরস্থ কর্মকর্তার কাছে ঘন ঘন যান , তার কাছ থেকে রিপোর্টারের খবরের কোন ছোট্ট সূত্র মিলে যেতে পারে । অথবা এমনও হতে পারে কোন খবর উপযোগী তথ্যের সত্যতা এদের কোন বক্তব্যের মাধ্যমে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে ।
৩. বিটের কাছে ভালো হওয়া
আপনার বিট আপনাকে ভাল জানে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে । কোন প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রথম দর্শন বা সাক্ষাতেই রিপোর্টারকে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তথা লোকজনের সামনে সপ্রতিভ হিসেবে তুলে ধরতে হবে । যাতে করে তারা সব সময় আপনাকে মনে রাখতে পারে । একজন রিপোর্টার বসের বদলে তার সেক্রেটারি অথবা টাইপিস্ট অথবা একান্ত সহকারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিতে পারেন । এটা কোন অপরাধ নয় । একজন রিপোর্টারকে অনেক কিছু জানার জন্য অফিসের বসের ওপরই দারুণভাবে নির্ভর করতে হয় । কারণ, তিনি বলা যায় প্রায় সবকিছু জানেন ।
৪. বিট বা অফিসের খোঁজ-খবর রাখা
যেখান থেকে নিউজ পাওয়া যাবে সে ধরনের অফিসে মাঝে মাঝে নক দিতে হবে । নতুন কিছু ঘঠছে কিনা সংবাদ হওয়ার মতো সে বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে হবে ।
৫. সংবাদ সূত্রের সাথে ভালো সম্পর্ক
বিট রিপোর্টারের যেসব সংবাদ সূত্র রয়েছে তাদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাকে আনুষাঙ্গিক ঘটনাবলী আগেই পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে । রিপোর্টার কোন অফিস কর্মকর্তার কক্ষে গিয়েই দেখতে পেলেন যে তার কক্ষে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা খেলোয়াড়ের ছবি টাঙানো রয়েছে । অথবা কোনো বিশেষ লেখকের বইয়ের আধিক্য । তাহলে ঐসব নেতাদের প্রতি আগ্রহ রয়েছে । অতএব দায়িত্ব হবে হবে ওই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা শুরু করা । একটা কথা মনে রাখতে হবে, সংবাদ সূত্র তার কথায় একটি গতিময়তা খুঁজে পেলে মনের অজান্তে অনেক কথা বলে ফেলেন । টোকা দিয়ে তখন কথা বের করতে হয় না , আপন গতিতেই কথার খই ফুটতে থাকে ।
আরো জানুন……….বিট রিপোর্টিং কী । বিট রিপোর্টিং কত প্রকার ও কি কি
৬ . ভালো ব্যবহারের যোগ্যতা
ভালো ব্যবহার হচ্ছে রিপোর্টারের যোগ্যতার একটি অত্যাবশ্যক হাতিয়ার । রিপোর্টারও আর দশটা মানুষের মতই মানুষ । তিনি তার সংবাদ সূত্রের সঙ্গে সভ্য আচরণ করবেন বিনিময়ে তিনি ত সভ্যতাই পাবেন । তিনি তার কথার সুর খুব নিচু ও সুমিষ্ট রাখবেন । কথার প্রেক্ষিতে ধন্যবাদ ,প্লিজ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করবেন । বসতে না বললে ধুম করে বসে পড়বেন না । চোখে কালো চশমা থাকলে বা মাথায় ক্যাপ থাকলে খুলে ফেলুন । আপনার ভদ্র আচরণের উপর সূত্র সৌজন্যতার কথা বলবে ।
৭. রিপোর্টার হচ্ছেন সংবাদ বিশেষজ্ঞ
মনে রাখতে হবে একজন রিপোর্টার হচ্ছেন একজন সংবাদ বিশেষজ্ঞ । তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন তার সংগৃহীত তথ্যাবলী সংবাদ গল্পের জন্য কতটা উপযোগী কিংবা আদৌ উপযোগী কিনা । তার সম্পাদক তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারেন । কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, কোন তথ্যগুলো সংবাদ উপযোগী হবে কোন গুলো নয়
৮. রিপোর্টার হবেন দায়িত্বশীল
একজন রিপোর্টার হবেন দায়িত্বশীল চিরন্তন । তিনি সমাজের কণ্ঠস্বর । তাই তাকে প্রতি পদক্ষেপে দায়িত্বশীল পরিচয় দিতে হবে । প্রতিটি রিপোর্টারই জানেন যে সংবাদসেবীরা সব সময়ই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেন ।তিনি এরকম কোন তথ্য প্রচার করবেন না যেটা প্রকাশ না করার ব্যাপারে তার উপর আস্থা রয়েছে । কোন অফিসে তাকে শর্তসাপেক্ষে কাগজ দিলে তা তিনি যথা সময়ে ফিরিয়ে দেন কিনা । কাগজপত্রগুলো অবিকৃত অবস্থায় ফেরত দেন কিনা সেটাও তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ।
৯. রিপোর্টার উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবে না
বিটের সঙ্গে কথা বলার সময় উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করা চলবে না । অর্থহীন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা মানেই মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়া । একজন অভিজ্ঞ রিপোর্টার সবসময়ই তার প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট হন ।
যেমন – একজন এমপি হতে যাচ্ছেন এরকম ব্যক্তির কাছে গিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কোন নতুন খবর আছে কি ? এটা তিনি সরাসরি বলতে পারবেন না । কিন্তু তাকে যদি বলা হয় , আপনি অমুকদিন মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন । তাহলে তিনি গরগর করে সব বলে দিবেন ।
১০. রিপোর্টার দিনপঞ্জিকা বা ডায়েরি রাখা
একজন বিট রিপোর্টারের দিনপঞ্জিকা বা ডায়েরি রাখা দরকার । এতে আগামী দিনগুলোর কাজ কর্মগুলো ঠিক মতো পালন করা যায় । সামনের বিভিন্ন ঘটনা , দিনক্ষণ তারিখ মনে রাখার জন্য স্মৃতি সব সময় সহায়ক নাও হতে পারে ।
১১. রিপোর্টার বার্তাকক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখা
একজন বিট রিপোর্টার কি করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে তিনি সব সময় তার বার্তা কক্ষকে অবহিত করবেন । কারণ, আপনি এমন এক জায়গায় কাজ করেন দেখা গেল সেখানে অন্য আরেকজন নিয়োজিত আছেন । এজন্য সিটি এডিটরদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন । কারণ, তিনি ভালো ভাবে জানেন আপনাকে কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর অপর জন কে কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । অতএব রিপোর্টার একটি দৈনন্দিন ছক তাকে জানিয়ে দেবেন কখন কোথায় তিনি থাকবেন
বিটের কলাকৌশল
No comments