ফিচার পরিকল্পনার ধাপসমূহ । Feature Planning Steps

তাসলিমা ইরিন

ফিচার পরিকল্পনার ধাপসমূহ Feature Planning Steps


বলা হয়ে থাকে যে, একজন সাংবাদিক সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তাঁর প্রথম ফিচার লিখার প্রাক-কালে। সঠিকতা, সত্যতা, সম্পূর্ণতা ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা সহ নানান কৌশল অবলম্বনের একটি প্রক্রিয়া হল এই ফিচার লিখন। সত্যতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করে সুবিচার প্রতিষ্ঠায় এর কোন বিকল্প নেই।

একটি আদর্শ ফিচার লিখার আগে অবশ্যই একজন সাংবাদিককে একটি পরিকল্পনা বা ছক সাজিয়ে নিতে হবে। এই নিবন্ধে আমরা ফিচার পরিকল্পনার ধাপসমূহ কে ছয়টি ভাগে ভাগ করব এবং তা বিশ্লেষণ করব। নিম্নে ফিচার পরিকল্পনার ছয়টি ধাপ সম্পর্কে উল্লেখ করা হল-

১. আকর্ষণীয় এবং সংবাদযোগ্য বিষয় নির্ধারণ করা
২. সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর সুবিধা অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করা
৩. উদ্ধৃতি সমূহ বাছাই করা
৪. খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করা
৫. প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা
৬. সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া




ফিচার পরিকল্পনার ধাপসমূহ


নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

১. আকর্ষণীয় এবং সংবাদ যোগ্য বিষয় নির্ধারণ করা

সাংবাদিকতায় সব সময়ই আকর্ষণীয়, সময়োচিত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ের গুরুত্ব রয়েছে। তবে ফিচার লেখনীতে এটিকে আরও নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়। তাই ফিচার পরিকল্পনায় প্রথম যে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় তা হল যে ব্যক্তি , দল বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ফিচার লিখা হবে তা নির্ধারণ করা । অর্থাৎ, বিষয় নির্ধারণ করা। এ ধাপটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হল বিষয়ই নির্ধারণ করে এটি মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে । তাই, একটি আকর্ষণীয় বিষয় বাছাই করা খুবই জরুরি।

তবে কাজটি বেশ কঠিন। কেননা, একই সাথে সাংবাদিক অনেকগুলো আকর্ষণীয় বিষয় খুঁজে বের করতে পারেন। কিন্তু, এর মধ্যে তিনি কোনটি বেছে নিবেন তা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া যে বিষয়টি তিনি বাছাই করবেন, ওই বিষয়ে তিনি পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন কিনা, তাও ভাবনার বিষয়। তাই এমনভাবে বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে যেন তা একইসাথে সময়োপযোগী, আকর্ষণীয় এবং তথ্য সংগ্রহের এক্সেস থাকে।

২. সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর সুবিধা অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করা

এই পর্যায়ে আপনাকে সশরীরে আপনার বিষয়ের কাছে যেতে হবে। টেলিফোন অথবা ইমেইল ইন্টারভিউ এক্ষেত্রে ততটা কার্যকর হবে না। বরং সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর নিকট সরাসরি গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হবে। তবে, দেখা যায় একই সাথে আপনার দুই অথবা তিন জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রত্যেকের নিকট আলাদা আলাদা ভাবে যেতে হবে।

ফিচার প্রতিবেদনের সবচেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংবাদের মত এর কোন সময়ের তাড়া নেই, পচনশীল হবার ভয় থাকে না, যদি না বিষয়টি ওই সময়ে খুবই গুরুত্ব পায় এবং সংবাদ প্রতিবেদন হিসেবে ছাপা হয়। এছাড়া অন্য ক্ষেত্রে আপনি সময় নিয়ে অন্যদের সুবিধা মত সময়ে সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। এবং ঠিক তখনি আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পেশাগত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফিচার লিখতে পারবেন।

৩. উদ্ধৃতি সমূহ বাছাই করা


সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ। এখন আপনার নোট এবং রেকর্ডার নিয়ে বসুন। সাক্ষাৎকার দাতার উদ্ধৃতিগুলো বাছাই করুন। এমন উদ্ধৃতিগুলো বাছাই করুন, যেগুলো আপনি যে বিষয়ে ফীচার করতে চান তার পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে। আপনি যে আঙ্গিকে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে চাইছেন, কোন কোন উদ্ধৃতি তা সমর্থন করে সেগুলো বাছাই করুন।

আরো জানুন……ফিচারের প্রকারভেদ । ফিচার কত প্রকার ও কী কী

৪. খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করা


এবার আপনি খসড়া প্রতিবেদন তৈরির কাজে নামুন। কোন কোন কথার মাঝে কোন কোন উদ্ধৃতি ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণ করুন। কথা গুলো সাজিয়ে লিখুন। আপনার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। আপনার নির্ধারিত বিষয়টি ফুটে উঠেছে কি না তা যাচাই করুন। এক্ষেত্রে বেশি উদ্ধৃতি ব্যবহারে শঙ্কিত হবার কিছু নেই।

৫. প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা


খসড়া প্রস্তুত হয়ে গেলে যাচাইয়ের জন্য আপনি দুটি কাজ করতে পারেন। এক, আপনার সম্পাদককে কাজটি পাঠিয়ে দিন। তাঁকে বলুন এর রিভিউ করতে। অথবা, দুই, আপনার সাক্ষাৎকার দাতাকে পাঠিয়ে বলুন ঠিক আছে কিনা। এক্ষেত্রে আপনি কখনোই তাঁদের কাউকে এটি কাটছাঁট করার অনুমতি দেবেন না। কেবলই তথ্য এবং উদ্ধৃতি ঠিক আছে কিনা সেবিষয়ে মতামত জানাতে বলবেন।

৬. সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া


আপনার বিষয়ের সাথে যদি আপনার আর কোন ধরনের দ্বন্দ্ব না থাকে, তবে সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যান এবং ছাপানোর কাজ শুরু করুন।

লেখক: শিক্ষার্থী
এমএমএস (২২ তম ব্যাচ )
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.