যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কী । যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধরন

তাসলিমা ইরিন

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কী । যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধরন

যোগাযোগ অন্তর্জাল Communication Network


নেটওয়ার্ক শব্দটির সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। নেটওয়ার্ক এর বাংলা পরিভাষা অন্তর্জাল বলা হলেও, অনেকের কাছেই এটি সেভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের নেটওয়ার্ক এর প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক হল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

যোগাযোগবিদ জোসেফ এ ডেভিটো তাঁর Human Communication বইয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এর সংজ্ঞায় বলেছেন, ”সাধারণত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলতে যে সকল চ্যানেল বা মাধ্যমের সাহায্যে বার্তা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে প্রবাহিত হয়, তাকে বোঝায়।”

অর্থাৎ, যে সকল অন্তর্জাল অনুসরণ করে বার্তা উৎস হতে গ্রাহকের নিকট পৌঁছায় সেগুলোকে যোগাযোগ অন্তর্জাল কিংবা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলে।

কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের সময় যোগাযোগের ধরনে যে বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি হয় তাকে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলে।–Julie Zink

উদাহরণস্বরূপ: স্কুলে পড়াকালীন সময়ে আমাদের নিকট অন্যতম আনন্দের একটি বিষয় ছিল ক্লাসরুমে বিশাল বড় রেজিস্ট্রি খাতা হাতে দপ্তরীর প্রবেশ। কেননা, দপ্তরীর হাতের ওই খাতায় থাকতো প্রধান শিক্ষক কর্তৃক পাঠানো ছুটির বার্তা। দপ্তরি শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষকের কাছে খাতাটি দিলে, শিক্ষক আমাদের ছুটির বার্তা দিতেন। এখানে প্রধান শিক্ষকের বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছাতে নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করেছেন দপ্তরী ও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষক।








যোগাযোগ নেটওয়ার্ক

কঠোরভাবে গঠিত স্তরবিন্যাস, মানুষের মধ্যে বিপুল শারীরিক দূরত্ব, কর্মদক্ষতায় বিস্তর ফারাক এবং অবশ্যই পূরণীয় বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি ও বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে যখন Marshall McLuhan এর বিশ্বগ্রামের ধারণা সম্পূর্ণ বাস্তবে রূপ ধারণ করেছে, তখন যোগাযোগ নেটওয়ার্কও তার নতুন নতুন ধরন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছে।

আরো জানুন…………..যোগাযোগের উপাদান । Elements of Communication

যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধরন

ডেভিটো তাঁর বইয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এর প্রধান পাঁচটি ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। বহুল ব্যবহৃত প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের আওতায় গঠনগত দিক থেকে এবং একটি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্বর্তী কার্যক্রমের সাপেক্ষে এই নেটওয়ার্কগুলো বাছাই করা হয়েছে। ডেভিটো প্রতিটি স্ট্রাকচারে পাঁচজন ব্যক্তি নিয়ে গঠন কল্পনা করলেও যেকোন নেটওয়ার্কে যেকোনো সংখ্যক ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

নিম্নে নেটওয়ার্ক গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

১. বৃত্তাকার মডেল

২. চক্রাকার মডেল

৩. ওয়াই মডেল

৪. শেকল মডেল

৫. তারকা মডেল


১. বৃত্তাকার মডেল

বৃত্তের ন্যায় গোলাকার ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে বৃত্তাকার বা circle model network বলে। এই ধরনের নেটওয়ার্কে কোন দলনেতা থাকেনা। এখানে সকলে সমস্তরে অবস্থান করে। বৃত্তে অবস্থিত প্রতিটি সদস্যই সমান ক্ষমতা সম্পন্ন। এবং প্রত্যেকেরই দলকে প্রভাবিত করার একই রকম ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের নেটওয়ার্কে যেকোনো সদস্যই দুই পাশে অবস্থিত অন্য যে কোন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক
যোগাযোগ নেটওয়ার্ক


২. চক্রাকার মডেল


চাকার আদলে গঠিত এই নেটওয়ার্ক মডেলকে চক্রাকার মডেল নেটওয়ার্ক বলা হয়। এই মডেলে স্পষ্টতই একজন দলনেতা থাকে। এই দলনেতা অবস্থান থাকে চক্রের ঠিক মাঝখানে অর্থাৎ কেন্দ্রে। একমাত্র দলনেতাই চক্রের সকল সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম থাকেন। কিন্তু অন্য কোন সদস্য সরাসরি একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না। দলের কোন একজন সদস্য যদি অন্য সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আগে দলনেতাকে অবগত করতে হবে। অর্থাৎ, দলনেতা এক্ষেত্রে মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। এবং দলনেতার মাধ্যমেই যোগাযোগকারী তাঁর অভিষ্ট লক্ষে পোঁছাতে পারবেন।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক


৩. ওয়াই মডেল


ইংরেজি বর্ণ ‘ Y’ এর আদলে গঠিত বলে এ মডেলের নামকরণ করা হয় ওয়াই মডেল নামে।অন্যান্য মডেলের তুলনায় এই মডেল অপেক্ষাকৃত কেন্দ্রের প্রতি কম নির্ভরশীল। এই কাঠামোতে একজন স্পষ্ট দলনেতা থাকে। কিন্তু আরও একজন সদস্য থাকে যিনি একধরনের সেকেন্ডারী বা গৌণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে, যিনি আরও দুইজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। অন্য তিনজন সদস্য যেন একজনের বেশি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সেভাবেই এই নেটওয়ার্ক কাঠামো সাজানো হয়।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক


৪. শেকল কাঠামো


শেকল আকৃতির নেটওয়ার্ক কাঠামোর সাথে বৃত্তাকার নেটওয়ার্ক কাঠামোর সাদৃশ্য রয়েছে। তবে এদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যের জন্যই শেকল আকৃতির নেটওয়ার্ক কাঠামো নিজের আলাদা অস্তিত্ব তৈরি করে নিয়েছে। শেকল কাঠামোর পার্থক্য হল এই কাঠামোর শেষ প্রান্তের সদস্যরা শুধুমাত্র একজন মাত্র সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এখানেও কিছু মাত্রায় কেন্দ্রাভিগামীতা রয়েছে। কেন্দ্রে অবস্থিত ব্যক্তির মধ্যে নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে অন্যদের চেয়ে বেশি মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক


৫. তারকা কাঠামো

তারকা বা স্টার আকৃতির এই কাঠামোকে All channel কাঠামো ও বলা হয়ে থাকে। বৃত্তাকার কাঠামোর সাথে এর সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্য হল এই কাঠামোতে সকল সদস্যই সমান এবং সকলেরই প্রত্যেককে প্রভাবিত করার সমান ক্ষমতা রয়েছে।এই মডেলে যেকোন সদস্যই অন্য যে কোন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই কাঠামোতে সকল সদস্যের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

যোগাযোগ নেটওয়ার্ক

লেখক : শিক্ষার্থী
এমএসএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.