বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন তৈরি । Create Report from Speech

তাসলিমা ইরিন

বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন তৈরি । Create Report from Speech

বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন লিখার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো ।

মার্ক গ্রাবোস্কি তাঁর ‘কাভারিং স্পিচেস‘ গ্রন্থে বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন তৈরির জন্যে কয়েকটি পরামর্শ উল্লেখ করেছেন। নিম্নে এগুলো উদ্ধৃত হল-

১.একঘেয়ে অংশ পরিহার

নতুন সাংবাদিকরা প্রায়শই কোনটিকে প্রাধান্য দিবে বুঝতে না পেরে একঘেয়ে বর্ণনায় বেশী সময় ব্যয় করে। প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে, বিশেষত সংবাদ শীর্ষ লেখার সময় একঘেয়েমি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।

২. সৃজনশীল সংবাদ শীর্ষ

সৃজনশীল সংবাদ শীর্ষ লেখা অনেক ক্ষেত্রেই একটি ভালো পদ্ধতি হতে পারে। যেমন: নিউ ইয়র্কের প্রাথমিক নির্বাচন মাত্র এক সপ্তাহ দূরে, অথচ কেট স্মিথ কাকে ভোট দিবেন সে বিষয়ে এখনও সন্দিহান।

৩. বর্ণনা সাজানো

কোন কথার পর কোন কথা আসছে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কথা সবার শেষে থাকলেও সেটিকেই শীর্ষ বানাতে হবে। একইভাবে, শুরুর দিকে সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো দিয়ে যদি বক্তৃতা শুরুও হয়, তবুও সেটিকে গুরুত্বহীনই ধরতে হবে। অথবা একেবারেই বাদ দিতে হবে।

৪. উদ্ধৃতি বাছাই

সরাসরি উদ্ধৃতি যেন তুলে দেওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বক্তৃতা প্রতিবেদনে বক্তাদের উদ্ধৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় উক্তিগুলো অবশ্যই প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে। একটি আদর্শ উদ্ধৃতি সেটিই, যেটি নিজে আকর্ষণীয় এবং যেটিকে আকর্ষণীয়ভাবে বলা হয়েছে।




বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন

৫. পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা

আলোচ্য বিষয় এবং বক্তার উপর আগে থেকেই যথেষ্ট গবেষণা করে রাখতে হবে। বক্তৃতার একটি কপি যদি আগে থেকেই হাতে পাওয়া যায় তাহলে আগে থেকেই প্রতিবেদন কেমন হবে সে ব্যাপারে একটি রূপরেখা তৈরী করে রাখা সম্ভব। পরবর্তীতে বক্তব্য চলাকালীন, এর মধ্য থেকে কিভাবে কি পরিবর্তিত হলো, তার উপর বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে লেখা যুক্ত করা যাবে।

৬. স্থান বাছাইয়ে সতর্কতা

তাড়াতাড়ি পৌঁছানো এবং একটি ভালো সিট আগেভাগে ধরতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সভাস্থলটি আগে থেকেই পূর্ণ হয়ে যেতে পারে- এটি মাথায় রাখতে হবে। এমন কোথাও বসতে হবে, যেখান থেকে ভালোভাবে শোনা যায়।

. যন্ত্রপাতি সাথে নেওয়া

প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। নোটখাতা, কলম, রেকর্ডার, ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদি যেটাই দরকার যেন হাতের কাছে থাকে।

৮. দর্শকের পরিমাণ আন্দাজ করা

প্রতিটি বক্তৃতা প্রতিবেদনের জন্যই কয়জন দর্শক ছিলো তার একটি আনুমানিক হিসাব দেওয়া জরুরী। একদম নির্ভুল না হলেও যেন তা পাঠকের মনে একটি কাছাকাছি সঠিক দৃশ্যের অবতারণা করতে পারে।

৯. সব খুঁটিনাটি না বলে শুধু গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর উল্লেখ রাখা জরুরি।

আরো জানুন……………সাক্ষাৎকার পরিকল্পনা । সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা

১০. বক্তৃতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের জন্য অপেক্ষা করে থাকা

প্রতিটি বক্তৃতারই কোন না কোন অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে। হয়ত বক্তা খুব বেফাঁস কিছু বলে থাকতে পারেন। অথবা কোন বিতর্কিত অভিযোগ তুলতে পারেন। যখন দর্শকদের মধ্যে বক্তার কোন কথার প্রসঙ্গে গুঞ্জন বা শোরগোল দেখা যায়, বেশীরভাগ সময় সেই মুহূর্তটি হয়ে থাকে টেইক ওভার মোমেন্ট বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

১১. সভা শেষের পরও থাকা এবং দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানা

বক্তৃতা শেষের পর সাথে সাথে সভাস্থল ত্যাগ কতা উচিৎ নয়। বক্তৃতা শেষের পর, কয়েকজন দর্শক-শ্রোতার মতামত নেওয়া জরুরি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটিই হতে পারে প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

১২. মতামত গ্রহণে সতর্ক থাকা

বেশীরভাগ সময় বক্তারা এমন কোথাওই বক্তব্য রাখেন যেখানে তাদের সমর্থক বা সমমনা মানুষের সংখ্যাই বেশী থাকে। তাই দর্শক শ্রোতার মতামতও পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দর্শক শ্রোতার মতামত নেওয়ার সময় এরকম মতামত পরিহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

১৩. মূল ঘটনা খুঁজে বের করা

কোন প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ অংশ কি ধরনের দৃশ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, সেটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মূল ঘটনা কি, তা খুঁজে বের করে প্রতিবেদনে নিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বক্তৃতায় একথা বলেন যে তার প্রতিষ্ঠান বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি, এবং ঠিক তার পরের নিঃশ্বাসেই বলেন যে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে তাঁর পরের কথাটি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে প্রথম কথার পেছনের কার্যকারণ কি কি তা খুঁজে বের করতে হবে।

১৪. ভয় পাওয়া যাবে না

যে ব্যক্তিরই সাক্ষাৎকার বা বক্তৃতা নিয়ে লেখা হোক না কেন, প্রশ্ন করার সময় ভয় পাওয়া যাবে না। তাহলে তা সংবাদ প্রতিবেদনের গুণাগুণ রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে।

১৫. মনে রাখতে হবে যে, যা নিয়ে সংবাদ করা হবে তা হয়ত এমনকি বক্তৃতায় একদমই নাও থাকতে পারে। পরবর্তী সময়ে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও প্রতিবেদনের সবচেয়ে মোক্ষম অংশটি বের হয়ে আসতে পারে।

১৬. যদি প্রশ্নোত্তর পর্বে পাওয়া কোন উত্তরই সংবাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হয়ে থাকে, তবে সেটি নিয়েই সংবাদ শীর্ষ লিখা সমীচীন হবে। সেখানে বক্তৃতার কোন কিছু অন্তর্ভুক্ত না করলেও চলে।

লেখক : শিক্ষার্থী
এমএমএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.