যোগাযোগ শঙ্কার প্রভাব সমূহ ।Effects of Com Apprehension
যোগাযোগ শঙ্কার প্রভাব সমূহ
শঙ্কা কীভাবে আমাদের যোগাযোগকে প্রভাবিত করে
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে চলেছি। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা থেকে কোন মানুষের পক্ষেই বিরত থাকা সম্ভব নয় যদি না তিনি মৃত হন। বলা হয়ে থাকে যে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। তবে দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের যোগাযোগে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা নানা ধরনের সমস্যারও সম্মুখীন হই। এ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল যোগাযোগ শঙ্কা।
যোগাযোগ শঙ্কা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে সেবিষয়ে আলোচনার পূর্বে যোগাযোগ শঙ্কা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক।
এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে বাস্তব অথবা অনুধাবনকৃত যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি মানসিকভাবে যে ধরনের দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হন, তাকে যোগাযোগ শঙ্কা বলে (ম্যাক্রস্কি ১৯৭৭)।
অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি বিশেষ কিংবা দলীয় কিংবা জন যোগাযোগ অথবা গণযোগাযোগ ইত্যাদি যে কোন ধরনের যোগাযোগে অংশগ্রহণের সময় আমরা যে ধরনের ভীতি বা দুশ্চিন্তা অনুভব করি তাই হল যোগাযোগ শঙ্কা।
উদাহরণস্বরূপ : কোন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে প্রথম যোগাযোগ করার সময় আমরা ভাবি যে, তিনি আমার কথা গুলো কীভাবে নিবেন, এ নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তায় থাকি আমরা। এটি হল যোগাযোগ শঙ্কা।
আবার, কোন নববধু যখন প্রথম তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যায় তখন নতুন পরিবেশে সে যোগাযোগ করার সময় বেশ ভীত থাকে। এ ধরনের ভীতিকেই যোগাযোগবিদগণ যোগাযোগ শঙ্কা বলে নামাঙ্কিত করেছেন।
যোগাযোগ শঙ্কার প্রভাব সমূহ
শঙ্কা কীভাবে আমাদের যোগাযোগকে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
বিভিন্ন ধরনের শঙ্কা আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। যোগাযোগবিদগণ দৈনন্দিন জীবনে শঙ্কার প্রভাব নির্ধারণে PRCA 10 নামে এক ধরনের গবেষণা পরিচালনা করেন। এ পরীক্ষায় দেখা যায় একজন বক্তা কেবল জন যোগাযোগের ক্ষেত্রেই শঙ্কা অনুভব করেন এমন নয়, বরং পরিপ্রেক্ষিত সাপেক্ষে ও পরিস্থিতির সাপেক্ষে নানা ধরনের যোগাযোগে ব্যক্তি শঙ্কা অনুভব করেন।
পরীক্ষায় নমুনা পরিস্থিতি হিসেবে চার ধরনের যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়। এগুলো হল : দলীয় যোগাযোগ, সাক্ষাৎকার, আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ও জন যোগাযোগ। এ গবেষণায় নমুনা হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং ৩ হাজার নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এবং উক্ত চার ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাক্তির শঙ্কাকে মৃদু, মধ্যবর্তী ও উচ্চ এই তিন ধরনের শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।
যোগাযোগবিদ ম্যাক্রসকির মতে, যোগাযোগ শঙ্কার প্রভাব হিসেবে জন যোগাযোগ একটি বহুল পরিচিত ক্ষেত্র। জনযোগাযোগের বিশদ আলোচনায় বহুভাবে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে ছোট দলে যোগাযোগ শঙ্কার প্রভাব সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।
যোগাযোগবিদ Wells এবং Lashbrook তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, যোগাযোগ শঙ্কায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা ছোট দলীয় যোগাযোগে তেমন স্বস্তি বোধ করেন না এবং নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। এমনকি তাঁদের মিথস্ক্রিয়া শঙ্কায় ভুগছেন না এমন ব্যক্তিদের চেয়ে তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।
এছাড়া যোগাযোগবিদ Heston এবং Daly ও তাঁদের গবেষণায় দেখেছেন, শঙ্কায় ভুগছেন এমন ব্যক্তি শঙ্কায় ভুগছেন না এমন ব্যক্তিদের তুলনায় কম যোগাযোগে লিপ্ত হন।
একইভাবে যোগাযোগবিদ Hamilton গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন শঙ্কাগ্রস্থ ব্যক্তি শঙ্কাহীন ব্যক্তির চেয়ে ছোট দলীয় যোগাযোগে কম আগ্রহ পোষণ করেন, কম কথা বলেন এবং অধিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। তিনি আরও দেখান যে, বেশিরভাগ শঙ্কাগ্রস্থ ব্যক্তিই সাধারণত নিজের সম্পর্কে কোন কিছু প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে।
আরো জানুন…………..যোগাযোগ শঙ্কা কী । যোগাযোগ শঙ্কার প্রকারভেদ
শঙ্কার প্রভাব সাধারণত দুই ধরনের হয়।
১. অভ্যন্তরীণ প্রভাব
২. বাহ্যিক প্রভাব
১. অভ্যন্তরীণ প্রভাব
যোগাযোগের অভ্যন্তরীণ প্রভাব সাধারণত প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে ব্যক্তিভেদে এর মাত্রা কম বেশি হয়ে থাকে। ম্যাক্রস্কির মতে, অভ্যন্তরীণ প্রভাব হল যোগাযোগ শঙ্কার এমনই এক প্রভাব যা সার্বজনীন এবং সকল ব্যক্তিই মানসিকভাবে নিজের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করেন। এ প্রভাব নির্ধারণ করে একজন ব্যক্তির যোগাযোগ শঙ্কা পরিমাপ করা যায়। যেহেতু, এই প্রভাব ব্যক্তি নিজের অভ্যন্তরে অনুধাবন করেন তাই এর পরীক্ষা করার জন্য ব্যক্তির সেই অনুভূতির প্রকাশের প্রয়োজন পড়ে। এভাবেই যোগাযোগ শঙ্কার অভ্যন্তরীণ প্রভাব নির্ধারণ করা যায়।
২. বাহ্যিক প্রভাব
শঙ্কার বাহ্যিক প্রভাব মূলত একজন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাব সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম। ম্যাক্রস্কি তাঁর গবেষণায় দেখান যে অধিক শঙ্কাগ্রস্থ ব্যক্তি তুলনামূলক কম কথা বা যোগাযোগ করতে হয় এমন চাকরি বেছে নেন। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় , শঙ্কাগ্রস্থ শিক্ষকের তুলনায় কম শঙ্কাগ্রস্থ শিক্ষকেরা তাদের পেশা নিয়ে আনন্দবোধ করেন। এছাড়াও দেখা যায় কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিক শঙ্কাগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম শঙ্কাগ্রস্থদের চেয়ে কম প্রাইভেট পড়ে।
এভাবে বিভিন্ন বিষয়কে লক্ষ্য করে ব্যক্তির উপর শঙ্কার প্রভাব নির্ধারণ করা যায়। তবে এসব শঙ্কা দূর করারও বেশ কিছু উপায় উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।
লেখক : শিক্ষার্থী
মাস্টার্স (২২ তম ব্যাচ )
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments