যোগাযোগ শঙ্কা দূর করার উপায় । Ways to Overcome Fears

তাসলিমা ইরিন

যোগাযোগ শঙ্কা দূর করার উপায়

বিভিন্ন যোগাযোগবিদ শঙ্কা দূর করার নানা ধরনের দিক চিহ্নিত করেছেন। মোটা দাগে যোগাযোগ শঙ্কা দূর করার তিনটি উপায় সম্পর্কে তাঁরা দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো হল:


১. নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংবেদনশীলতা দূর করা (Systematic Desensitization)
২. অবধারনগত পরিবর্তন (Cognitive Modification)
৩. অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি (Skills Training)

নিম্নে এগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল-

১. নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংবেদনশীলতা দূর করা


বারবার একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে যে কোন মানুষের সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, ব্যক্তি যে ধরনের পরিস্থিতিতে শঙ্কা বোধ করেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে সে ধরনের পরিস্থিতিতে বারবার যোগাযোগে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সংবেদনশীতা কমাতে পারেন।

২. অবধারণগত পরিবর্তন

ব্যক্তি কী ধরনের যোগাযোগে শঙ্কা বোধ করেন এবং কেন করেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। এই ধাপের বেশিরভাগ কাজ ব্যক্তি নিজেই উদ্যোগী হয়ে করতে পারেন। নিজের চিন্তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে বের করে এ ধরনের শঙ্কা দূর করা যায়।

৩. অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি

শঙ্কা দূর করার এই উপায়টি হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ও সরলমূখী প্রক্রিয়া। তবে এটি অর্জন করা বেশ কঠিন। ব্যক্তি কোন বিষয়ে কথা বলবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা, অনুশীলন, গলার স্বর, বাচন ভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি সবকিছু অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি এ ধরনের শঙ্কা দূর করতে পারে।







যোগাযোগ শঙ্কা দূর করার উপায়

মানুষ যে ধরনের শঙ্কা অনুভব করে


সাধারণত মানুষ যে ধরনের শঙ্কা অনুভব করে, যোগাযোগবিদগণ সেগুলোকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলো হল –

১. বক্তব্য সাজানোর ক্ষেত্রে
২. বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে


১. বক্তব্য সাজানোর ক্ষেত্রে

কোন স্থানে বক্তৃতা প্রদান করতে বললে আমরা কমবেশি সকলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই বক্তব্য প্রদানের পূর্বে শঙ্কা দূর করার কয়েকটি উপায় বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হল-

ক) ইতিবাচক চিন্তাভাবনা

বক্তব্য প্রদানের পূর্বেই বক্তা যে ধরনের শঙ্কা অনুভব করেন তা দূর করার অন্যতম উপায় হল ইতিবাচক চিন্তা করা। বক্তা হিসেবে নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে হবে।

খ) প্রস্তুতি


অজানার প্রতি মানুষের শঙ্কাই হল সর্ববৃহৎ শঙ্কা। তাই এই শঙ্কা দূর করতে পারবেন বক্তা কী বলতে চান, কীভাবে বলবেন, কাদের উদ্দেশ্যে বলবেন এসব বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে।

গ) শ্রোতা সম্পর্কে জ্ঞান


বক্তা যাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করবেন তাঁদের সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। এর ফলে বক্তা শ্রোতানির্ভর শঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ঘ) বক্তব্যের মূল বিষয়গুলোকে সাজানো


বক্তব্য প্রদানের পূর্বে বক্তা যে বিষয়ে কথা বলতে চান, সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট উপায়ে সাজায়ে বিশ্লেষণ করা জরুরি।

ঙ) বাচনভঙ্গি নির্ধারণ


বিষয় সাজানোর পর বক্তাকে বাচনভঙ্গি নিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে উপস্থাপন করলে শ্রোতার নিকট তা সহজে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

চ) শ্রোতাকে সামনে কল্পনা করে উপস্থাপনা অনুশীলন


সম্মুখে শ্রোতাগণ বসে আছেন এমন পরিস্থিতি কল্পনা করে উপস্থাপনা অনুশীলন করলেও শঙ্কা দূরীভূত হতে পারে।

ছ) খাবার গ্রহণের প্রতি সতর্ক থাকা


বক্তব্য প্রদানের পূর্বে বক্তা কী ধরনের খাবার গ্রহণ করছেন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরো জানুন……ছোট দলীয় যোগাযোগ । সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি । Small Group

২. বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে


বক্তব্য প্রদানের সময় বক্তা যে শঙ্কা গুলো অনুভব করেন সেগুলো দূর করার কয়েকটি উপায় নিন্মে উল্লেখ করা হল:

ক) বাচনভঙ্গির প্রতি শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখা


বক্তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তার বাচনভঙ্গির প্রতি শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন এবং সে অনুযায়ী তাঁকে তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

খ) নিজের প্রতি নয় বরং শ্রোতাদের প্রতি দৃষ্টি প্রদান


কথা বলার সময় বক্তাকে সার্বক্ষণিক নিজের প্রতি খেয়াল রাখলে চলবে না। বরং তাঁকে শ্রোতাদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

গ) হাস্যরসের উপস্থিতি বজায় রাখা


কাঠখোট্টা শব্দ দিয়ে শুধুমাত্র কথা বলে গেলে শ্রোতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে, তাই বক্তব্যে হাস্যরসের উপস্থিতি বেশ জরুরি। ফলে শ্রোতারা আগ্রহী হয়ে শুনবে এবং বক্তাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

ঘ) চাপ নিরসন


বক্তব্য প্রদানকালে বক্তা যে চাপ অনুভব করেন তা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যেন তা বক্তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে না পারে।

ঙ) শ্রোতাকে আকর্ষণ করা


বক্তাকে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে যেন শ্রোতা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অন্য কিছু চিন্তার সুযোগ না পায়। পূর্ণ মনোযোগ বক্তার দিকে থাকলে বক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন।


এভাবেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ শঙ্কাগুলো দূর করতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী
এমএসএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.