ছোট দলের প্রকারভেদ । Types of a Small Group

তাসলিমা ইরিন

ছোট দলের প্রকারভেদ Types of a small group


ছোট দলের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে ছোট দল সম্পর্কে কিছুটা বলে নিই।

অনেকে ৩ থেকে ১২ জন বিশিষ্ট দলকে ছোট দল বলে চিহ্নিত করে থাকেন। কেউ কেউ আবার একে ৭ থেকে ১২ জন বিশিষ্ট বলেও ধরে থাকেন। এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ অধ্যাপক জোসেফ বনিটো কোনভাবেই পাঁচজনের বেশি মানুষকে ছোট দল বলতে রাজী নন।

যখন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে কোন সাধারণ সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় পারস্পরিক মিথস্ক্রীয়ায় লিপ্ত হন এবং বার্তা আদান প্রদান করেন তখন তাকে একটি ছোট দল বলে।


ছোট দলের প্রকারভেদ

এটিকে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে ধরে নিয়ে আমরা চারটি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক থেকে ছোট দলকে নিরীক্ষণ করার চেষ্টা করবো। এগুলো হলো-

ক) আইডিয়া জন্মদানকারী দল Idea-Generation Groups

খ) ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি দল Personal Growth Groups

গ) তথ্য আদান-প্রদানকারী দল Information Sharing Groups

ঘ) সমস্যা সমাধানকারী দল Problem-Solving Groups


সেই সাথে এই দল গুলোতে অংশগ্রহণের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করা হবে।







ছোট দলের প্রকারভেদ

ক) আইডিয়া জন্মদানকারী দল Idea-Generation Groups


অনেক ছোট দলের অস্তিত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে নতুন চিন্তার জন্ম দেওয়া এবং কিছু কিছু সময়, ব্রেইনস্টর্মিং হিসেবে পরিচিত একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা। (বিব ও মাস্টারসন, ১৯৯৪; অসবর্ন ১৯৫৭; ডেভিটো ১৯৯৬)। ব্রেইনস্টর্মিং এমন একটি পদ্ধতি যা সমস্যাকে বিস্ফারিত করে যত বেশী সম্ভব নতুন আইডিয়া বা ধারণার জন্ম দেয়। এই পদ্ধতিতে সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়। প্রথমটি হলো, যথাযথ ব্রেইনস্টর্মিং পর্যায় এবং দ্বিতীয়টি, মূল্যায়ন পর্যায়।

এই প্রক্রিয়াগুলো বেশ সরল। প্রথমে, একটি সমস্যা বাছাই করা হয় যা অনেকগুলো সমাধান বা নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে দলের সদস্যদের সমস্যাটির বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। যেন তারা আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ভেবে রাখতে পারে। যখন দলীয় পর্যায়ের মিটিং শুরু হয়, প্রতিটি সদস্যই নিজ নিজ জায়গা থেকে যত সম্ভব বেশী আইডিয়া দিয়ে ভূমিকা রাখে। এমন প্রতিটি নতুন চিন্তাই লিখিতভাবে অথবা টেপে রেকর্ড করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, চারটি সাধারণ নিয়ম সব সময় মেনে চলা হয়। এরা হলো-

১। সমালোচনা না করা
২। পরিমানের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা
৩। আইডিয়াগুলোকে একত্রিত ও বর্ধিত করা
৪। যথাসম্ভব দুরন্ত চিন্তার জন্ম দেওয়া

আরো জানুন……আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য । Interpersonal Communication

খ) ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি দল Personal growth groups


ব্যক্তিগত উন্নতির উদ্দেশ্যে তৈরী এমন কিছু দল থাকে, যারা মানুষের জীবনের কিছু নির্দিষ্ট জটিলতা নিরসনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে। যেমন – মাদকাসক্তি, মদ্যপায়ী অভিভাবকজনিত সমস্যা, পুরনো অপরাধের দায় বা অতিরিক্ত চঞ্চল বাচ্চার সাথে সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ। এদেরকে সাপোর্ট গ্রুপ বা সমর্থন দলও বলা হয়। অন্য দলগুলো আরও স্পষ্টভাবে চিকিৎসানির্ভর এবং ব্যক্তির আচরণ বা ব্যক্তিত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক থেকে পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে।

এমন কিছু জনপ্রিয় সাপোর্ট গ্রুপ হলো-


১। সাক্ষাৎ দল (Encounter group)
২। দৃঢ়তা প্রশিক্ষণকারী দল (Assertiveness training group)
৩। সচেতনতা বৃদ্ধিকারী দল (Consciousness raising groups)

গ) তথ্য আদান-প্রদানকারী দল (Information sharing groups)


তথ্য আদান-প্রদানকারী দলের উদ্দেশ্য থাকে, জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে নতুন তথ্য ও কারিগরী জ্ঞানের জন্ম দেওয়া। বেশীরভাগ তথ্য আদান-প্রদানকারী দলের মধ্যে, প্রত্যেকজন সদস্যেরই শেখার বা শেখাবার মত কিছু না কিছু থাকে। আর অন্যান্যগুলিতে, সকল যোগাযোগ সম্পন্ন হয় যার কাছে তথ্য থাকে এবং তার কাছ থেকে সে তথ্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে।

এই ধরনের ছোট দলের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হলো –


১.শিক্ষণ দল
২.ফোকাস দল

ঘ) সমস্যা সমাধানকারী দল (Problem-solving groups)


কোন সমস্যার সমাধান করা বা কোন সিদ্ধান্তে পৌছানোর উদ্দেশ্যে যখন একাধিক ব্যক্তিদের নিয়ে কোন দল গড়ে ওঠে তখন তাকে সমস্যা সমাধানকারী দল বলে। এক অর্থে এটি এমন এক ধরনের দল যেখানে আক্ষরিকভাবে, অংশগ্রহণ করতেই হয়। এখানে শুধু কিছু ছোট দলীয় যোগাযোগ পদ্ধতি জানাই যথেষ্ট নয়, বরং ওই নির্দিষ্ট সমস্যার ব্যাপারে একজন সদস্যকে সার্বিক জ্ঞান রাখতে হয়। সেই সাথে, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কিছু নীতিমালার নিয়ম-নীতির প্রসঙ্গে বিশ্বস্ত আনুগত্য দাবী করে এইসব দল। আমরা এই দলকে, সমস্যা সমাধান প্রচেষ্টার প্রাচীন কিন্তু এখনও জনপ্রিয় পদ্ধতির সাপেক্ষে দেখার চেষ্টা করা হয়। যেখানে আমরা সমস্যা সমাধানের ধাপগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। এ ধরনের দল গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশ জনপ্রিয় ।


লেখক : শিক্ষর্থী
এমএসএস ( ২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.