মৌলিক সংবাদ গল্পের জন্য মৌলিক প্রশ্নসমূহ । Basic Questions for the Basic News Story

 Marjan Akter

মৌলিক সংবাদ গল্পের জন্য মৌলিক প্রশ্নসমূহ : Basic Questions for the Basic News Story


সংবাদিকরা সংবাদ লেখার সময় সাধারণত প্রধান বিষয়গুলোর উত্তর প্রথমে দেয়ার চেষ্টা করেন । সংবাদ মূলত কোনো ঘটনা সংক্রান্ত জনগণের মনে উদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে । তাই সকল সংবাদ প্রতিবেদন লেখার সময় কে,কী,কেন,কখন,কিভাবে এবং কোথায় এই ছয়টি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় । খুব সহজেই এবং সাবলীল ভাবে এই ছয়টি বা ষড়-ক এর মাধ্যমে সংবাদ ঘটনাকে তুলে ধরা সম্ভব ।কিন্তু বর্তমানে সবকিছুই প্রতিযোগিতা নির্ভর । যার প্রভাব রয়েছে গণমাধ্যমগুলোতেও । প্রতিযোগিতামূলক গণমাধ্যম দুনিয়ায় ষড়-ক এর পরিবর্তে 'So What' বা তাতে কি পদ্ধতির অনুসরণ করার চেষ্টা করে । এই ঘটনা জনগণের কী প্রয়োজন ? কোনো  গুরুত্ব দিবে ? কীভাবে জনগণকে ঘটনা দেখানো যাবে ? এইসব প্রশ্নের উত্তর বা উদ্দেশ্য এখন গণমাধ্যমের আকর্ষণ । পাঠকেরাও তাই চায় । ব্রডকাস্ট, অনলাইন সকল মাধ্যমে জনগণের আকর্ষণ তৈরি করানোর ঘটনাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন জনগণ ভাবে তারা ঘটনাটি নিজ চোখে দেখছে ।

Eugene Robert এর ঘটনা 

নিউইয়র্ক টাইমস এবং দ্যা ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়াবার এর সাবেক সম্পাদক Eugene Robert এর সম্পাদক তাকে কীভাবে জনগণকে দেখানোর কাজটি শিখিয়েছেন সে সম্পর্কিত একটি গল্প রয়েছে । রবার্ট যখন  Goldsboro News Argus এর সাংবাদিক ছিলেন তখন তার সম্পাদক হেনরি বেক, যিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন । প্রতিদিন বেক, রকার্টকে কল দিয়ে তার লেখা সংবাদ পড়ে শোনাতে বলতেন । সংবাদ প্রতিবেদনটি যথাযথ না হলে বেক , রবার্টকে চিৎকার করে বলতেন , “আমাকে দেখাও, তুমি আমাকে সংবাদটি দেখাতে পারছো না ।”


রবার্টের মতে , একজন ভালো সাংবাদিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা ব্যক্তিত্ব যাই হোক না কেন তিনি ঘটনার কেন্দ্রে প্রবেশ করে মূল তথ্য  নিয়ে আসেন এবং পাঠককে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান ।



রবার্টের সাংবাদিকতার যুগ পেরিয়ে সাংবাদিকতা এখন অনেক আধুনিক হয়েছে । তবুও রবার্টের যুক্তি আজও প্রাসঙ্গিক ।

 ঘটনার কেন্দ্র বিন্দু খুঁজে বের করুন ।অর্থ্যৎ, মূল অংশ পাঠককে ঘটনা দেখানোর মতো অর্থ্যাৎ ঘটনা পড়েই যেনো পাঠক ঘটনা দেখতে পায় এমন তথ্য সংগ্রহ করুন । এবং সবশেষে এমন একটি সংবাদ প্রতিবেদন লিখুন যা জনগণ পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করবে ।




মৌলিক সংবাদ প্রতিবেদন : 

একটি মৌলিক প্রতিবেদন সাধারণত উল্টোদিক থেকে বলা হয় । অর্থ্যাৎ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সবার প্রথমে জানানো হয় । একে বলা হয় ’হার্ড নিউজ’ । হার্ড বা কঠিন বলতে এমন নয় যে সংবাদটি পড়া কঠিন । মূলত , এটি আরো সহজ পদ্ধতি । সহজভাবে উপস্থাপন করা হয় । কারণ এই ধরনের সংবাদ প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষভাবে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রথমে উপস্থাপন করা হয়  । পাঠক সহজেই তার প্রয়োজনীয় তথ্য সবার আগে পেয়ে যাচ্ছেন ।

হার্ড নিউজ প্রায়ই ঘটনার ফলাফল প্রতিবেদনের উপরের অংশে বর্ণনা করে থাকে । এবং পরপর ধারাবাহিক মূল তথ্য সমূহের বর্ণনা করা হয় । প্রথম দু-একটি অনুচ্ছেদে ঘটনার মূল তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় ।

যদি কোনো ঘটনা রহস্যজনক হয় তবে প্রতিবেদন প্রথমেই রহস্য উদঘাটন করে পাঠকের আকর্ষণ অর্জন করতে হবে । এরপর ধীরে ধীরে কেন এবং কিভাবে ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে সেই বর্ণনা দিতে হবে ।


ফোকাস বা কেন্দ্রবিন্দু খুঁজে বের করা  :

 সকল প্রতিবেদেনই মূল তথ্য দিয়ে শুরু করা হয় না । কোন ব্যক্তি বা স্থানের উপাখ্যান সম্বিলিত প্রতিবেদনে গল্পের মতো প্রতিবেদন লিখতে হয় । তবে ঘটনা যেমনই হোক বা যেভাবেই লেখা হোক প্রত্যেক ঘটনার একটি মূল কেন্দ্রবিন্দু থাকে যা পাঠকের মূল আকর্ষণ । আর সেই মূল ফোকাস নিয়েই সাংবাদিককে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে ।


প্রতিবেদনের বাকি অংশে ফোকাসকে ঘিরে বিভিন্ন উক্তি,সত্যতা,যুক্তি ও তথ্য থাকে । কারণ বর্তমানে পাঠকেরা নিমিষেই হাজারো তথ্য পাচ্ছেন । তাই তারা প্রথমত মূল তথ্য প্রথমেই খুঁজে থাকেন । প্রিন্ট কিংবা ওয়েব মিডিয়াতে মূল তথ্য বা ফোকাস শিরোনামেই দেয়া থাকে । অন্যদিকে ব্রডকাস্ট মিডিয়াতে সংবাদ পাঠক এই কাজটি করে থাকেন ।

 মিডিয়াম যাই হোক না কেনো ফোকাস খুবই উচ্চমানের হতে হবে । তবে বর্ণনামূলক প্রতিবেদনে তেমনটা না হতেও পারে । পরবর্তী প্রশ্নটি ফোকাস খুঁজে বের করতে সাহার্য্য করবে ।


ঘটনাটি কি সম্পর্কিত : 

নিজেকে প্রশ্ন করুন 'What' ঘটনাটি কি সম্পর্কে ? 

- শিরোনাম ভাবুন, কীভঅবে শিরোনাম লিখলে মূল তথ্য আসছে । কোন তথ্যটি ঘটনাটিকে সংবাদযোগ্য করছে ?


পাঠক-দর্শক কীভাবে সংযুক্ত :

 - কেন দর্শক বা পাঠক এই ঘটনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে ? (So What? বা তাতে কী, এখানে প্রতিফলিত )

- আপনার প্রতিবেদনে এমন কী আছে যা সাধারণ ঘটনা থেকে আলাদা । 

- নিজেকে পাঠকের স্থানে  রেখে ভাবুন, আপনি কেন সংবাদটি পড়তে বা দেখতে চায়বেন ?

নিজের বন্ধুকে ঘটনাটি কিভাবে বলবেন 


 ফোকাস খুঁজে বের করার আরেকটি উপায় হলো ’বন্ধুকে বল’ পদ্ধতি । এটি বাস্তব কথোপকথন পদ্ধতি যা সাধারণ ব্রডকাস্ট মিডিয়াতে ব্যবহার হয় । 

- ভাবুন বন্ধুকে কীভাবে বর্ণনা করবেন ? 

- বন্ধুকে সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আগে বলে থাকি, তারপর তার প্রশ্নের উত্তরে বর্ণনা ।

উদাহরণ :

 শিরোনাম :  দূতাবাসের অনাপত্তিপত্র ছাড়াই বেনাপোল দিয়ে দেশে ফেরা যাচ্ছে ।

 লিডে কেন্দ্রবিন্দু বা মূলতথ্য

 দূতাবাসের অনাপত্তিপত্র ছাড়াই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরা যাচ্ছে । এখন থেকে সপ্তাহে সাত দিনই অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ছাড়া পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করতে পারবেন । গতকাল শুক্রবার থেকে স্বরাষ্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে ।

২য় অনুচ্ছেদের মাধ্যমে লিডকে সহায়তা :

 গত এপ্রিল থেকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যাত্রীদের অনাপত্তিপত্র নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছিল । এই নিয়ম শিথিল হওয়ায় পাসপোর্টের মাধ্যমে দেশে ফেরা যাচ্ছে । এ কারণে মানুষের ভোগান্তি কমেছে ।


নাট গ্রাফ :

 নট গ্রাফে মূলত ফোকাস লিডের সহায়ক অনুচ্ছেদ থাকে । কোনো প্রতিবেদনে যদি ফোকাস লিডের সহায়ক  অর্থ্যাৎ, এক অনুচ্ছেদে বা লিডে যদি ফোকাস বা মূল তথ্যকে ব্যাখ্যা করা না যায় তবে নটগ্রাফের প্রয়োজন হয় । 

৫০ বছর আগে The Wall Street Journal এর একজন কর্মচারীকে প্রদানকৃত মেমোতে নটগ্রাফ ধারণাটি প্রথম ব্যবহৃত হয় । মেমোটিতে লেখা ছিল , ”একটি প্রতিবেদনের অবশ্যই মূল বিষয়বস্তু থাকবে যা একটি Nutshell Summary তে বর্ণনা করা হবে । 

নট গ্রাফ মূলত এক বাক্য বা অনুচ্ছেদ হতে পারে । যা ফোকাস খুঁজতে সাহায্য করে । নাট গ্রাফ পাঠককে দেখায় আপনি কোন পথে যাচ্ছেন । এখfনেই পাঠককে বলতে যাচ্ছেন আপনার কী বলার আছে । লিড বা নাট গ্রাফ থেকেই আপনার গল্প বলা শুরু ।

বর্তমানে নাটগ্রাফ একটি আদর্শ ধারণায় পরিণত হচ্ছে । কিন্তু যদি লিড নিজেই ফোকাসের ব্যাখ্যা এসে যায় তবে আলাদা নট গ্রাফের প্রয়োজন নেই । মূল তথ্য লিডে প্রকাশ না পেলে নাট গ্রাফ প্রয়োজন ।

 কিছু সাংবাদিক নাট গ্রাফের ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করেন । কিন্তু সব সময় লিডে সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হয় না । তাই প্রয়োজন লিডের বর্ণনামূলক সংক্ষিপ্ত ২য় ফোকাস । আর তাই নাটগ্রাফ । সাধারণত ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন ,চলমান ইস্যু , বিতর্কিত সংবাদে নাট গ্রাফ অধিক ব্যবহৃত হয় ।


শিরোনাম>লিড>নাটগ্রাফ>অনুচ্ছেদ-১>অনুচ্ছেদ২



লেখক : শিক্ষার্থী ,৪র্থ বর্ষ

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.