গবেষণায় এবস্ট্রাকট কী । Abstract । কীভাবে এবস্ট্রাকট লিখতে হয়
Abstract হল কোন একটি বড় রচনা যেমন ডিজারটেশান বা গবেষণার সার সংক্ষেপ। এটি মূলত খুব সংক্ষিপ্ত আকারে গবেষণার লক্ষ্য ও ফলাফলগুলো তুলে ধরে , যেন পাঠক সহজেই পুরো রচনা সম্পর্কে জানতে পারে। সম্পূর্ণ রচনা লেখা শেষ হয়ে গেলে তবেই abstract লিখতে হয়।
এবস্ট্রাকট এ ৪টি জিনিস থাকতে হয়।
১. সমস্যা ও উদ্দেশ্য
২. পদ্ধতি
৩. ফলাফল ও বিতর্ক
৪. পরিসমাপ্তি।
সাধারণত ১৫০-৩০০ শব্দের মধ্যে এবস্ট্রাকট লিখতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা জার্নালে এর শব্দসীমা নির্ধারণ করা থাকে৷ তাই লিখার পূর্বে এটি জেনে নেওয়া আবশ্যক। থিসিস এর ক্ষেত্রে টাইটেল এবং acknowledgement বা স্বীকৃতি পৃষ্ঠার পূর্বে একটি সম্পূর্ণ আলাদা পৃষ্ঠায় এবস্ট্রাকট সংযুক্ত করা হয়।
কখন Abstract লিখতে হয়?
যেকোন গবেষণা, থিসিস, ডিজারটেশন অথবা একাডেমিক জার্নালের জন্যে লেখার ক্ষেত্রে abstract লিখতে হয়। তবে, সকল ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে যে, সকল ক্ষেত্রেই abstract সম্পূর্ণ রচনার শেষে লিখতে হয়। স্বাধীনভাবে নিজের ভাষায় এবং গবেষণায় লিখা হয়নি এমন কোন উদ্ধৃতি নয়, এমনভাবে একটি abstract লিখতে হবে। Abstract লিখার মূল উদ্দেশ্য হল এমনভাবে উপস্থাপন করা যেন, মূল লেখাটি পড়েন নি বা ঐ সম্পর্কে জানেন না, এমন কেউ ও abstract পড়ে তা খুব সহজে বুঝতে পারেন। Abstract লেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল মূল কাজটির গঠণপ্রণালী অনুসরণ করা। পুরো লেখাটি সংক্ষিপ্তাকারে চিন্তা করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি সার-সংক্ষেপ চারটি ভাগে বিভক্ত থাকে। এগুলো হলঃ
- লক্ষ্য
- পদ্ধতি
- ফলাফল
- পরিসমাপ্তি
লক্ষ্যঃ
সার-সংক্ষেপ লেখার কিছু লক্ষ্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলঃ
১। গবেষণার লক্ষ্য জানান দেওয়া।
২। কোন কোন গবেষণা প্রশ্নের লক্ষ্যে উত্তর খোঁজা হবে।
৩। সংশ্লিষ্ট সামাজিক ও একাডেমিক কিছু বিষয় প্রেক্ষাপট বোঝানোর জন্যে বলা যেতে পারে, তবে তা কখনোই বর্ণনামূলক হবে না।
৪। সমস্যা নির্ধারণের পর উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা।
৫। ভাষা ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
৬। Abstract - বর্তমান ও অতীতকালে লিখা যাবে, তবে তা কখনোই ভবিষ্যত কালে লিখা যাবে না।
পদ্ধতিঃ
Abstract লিখার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই abstract লিখতে পারা যায়। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি খুব সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন পাবেন, যা আপনাকে খুব সহজে এবং কম সময়ে আপনার গবেষণার abstract লিখতে সাহায্য করবে। নিম্নে এই পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হলঃ
১। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
২। এক অথবা দুই বাক্যে সরাসরি উত্তর লিখতে হবে।
৩। সাধারন অতীত কালে লিখা হয়।
৪। এখানে গবেষণার বৈধতা বা দুর্বলতা নিয়ে কথা বলা যাবে না।
ফলাফলঃ
Abstract লিখনের তৃতীয় ধাপে থাকে ফলাফল। এখানে মূলত মূল গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। ফলাফল লিখনের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখলে তা আপনার সার-সংক্ষেপ লিখনকে আরো সহজবোধ্য করে তুল্বে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলঃ
১। গবেষণার মূল ফলাফলকে সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা।
২। সাধারন বর্তমান/ অতীত কালে লিখা যেতে পারে।
৩। গবেষণার সবগুলো ফলাফল এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
৪। কেবল গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলোই এখানে তুলে ধরতে হবে, যেন পাঠক মূল গবেষণাটি পড়তে আগ্রহ বোধ করে।
পরিসমাপ্তিঃ
গবেষণার সার-সংক্ষেপ লিখনের সর্বশেষ ধাপটি হল পরিসমাপ্তি। অর্থাৎ, এমন একটি বাক্য, যেখানে গবেষণার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে কিছু বলা হয়। পরিসমাপ্তি অংশে কিছু বিষয় উঠে আসলে abstract পরিপূর্ণ হয়। এগুলো হলঃ
১। গবেষণার সর্বশেষ অবস্থার উল্লেখ করা।
২। সমস্যা/ প্রশ্নের বিপরীতে উত্তর কী পাওয়া গেল।
৩। গবেষণার প্রমাণ বা বিতর্ক সম্পর্কে যেন পাঠক পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হয়।
৪। পরিসমাপ্তি বর্তমান কালে লিখা হয়।
৫। এখানে গবেষণার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হয়।
৬। এটি পাঠককে গবেষণার সাধারণীকরণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ধারনা দেয়।
৭। পরবর্তী গবেষণার জন্যে কোন পরামর্শ থাকলে পরিসমাপ্তিতে তা উল্লেখ করা যায়।
সরাসরি Abstract লিখনের অংশ না হলেও, এর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, গবেষণায় এমন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল Keywords বা মূলশব্দ।
Keywords বা মূলশব্দঃ
প্রকাশনার ক্ষেত্রে, গবেষণার abstract এর শেষে কিছু মূলশব্দ লিখতে হয়। এই শব্দগুলো গবেষণার উপাদান হিসেবে এ বিষয়ে কাজ করতে অথবা পড়তে আগ্রহী এমন পাঠক/ গবেষককে এটি খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
কীভাবে লিখবেন Abstract:
Abstract লিখনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন। যেমনঃ
১। সব গবেষণার সার-সংক্ষেপ একইভাবে লিখতে হয় না।
২। লিখার পূর্বে অন্য গবেষণার সার-সংক্ষেপ পড়ুন।
৩। নিজের গবেষণার প্রতি মনোযোগ দিন।
৪। স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্তাকারে লিখুন।
৫। লেখার ফরম্যাট যাচাই করুন।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments