ডিজিটাল ডিভাইড কী । Digital Divide । ডিজিটাল ডিভাইডের কারণ
ডিজিটাল ডিভাইড কী? ডিজিটাল ডিভাইডের কারণ
ডিজিটাল ডিভাইড শব্দটির সূচনা এবং ব্যবহার
১৯৯০ এর দশকের মাঝখান থেকে “ডিজিটাল ডিভাইড” নিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও নতুন প্রবন্ধ এবং রাজনীতিবিদদের বক্তৃতায় শব্দটি ১৯৯৫ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। কে প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেছেন সে বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে কিন্তু “তথ্য আছে এবং তথ্য নেই” এর ফাঁক বোঝাতে শব্দটির বিপুল গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সম্ভবত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়।অনেকে মনে করেন ডিজিটাল ডিভাইস নেটওয়ার্কের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অ্যান্ডি গ্রোভ প্রথম শব্দটি সূচনা করেন। অনেকে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রাক্তন প্রধান ল্যারি আর্ভিনকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন ১৯৯৬ সালে টেনেসিতে এক বক্তৃতায় শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
ডিজিটাল ডিভাইড কী?
ডিজিটাল ডিভাইড হলো ডিজিটাল তথ্য ও জ্ঞান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমাজের অসম এবং অসমানুপাতিক উন্নয়নের ধারা যা জনগণকে আধুনিক মানের ভালো কাজ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে এবং বৃহত্তর সমাজের অংশীদার হতে অক্ষম করে ।কিছু মানুষের জন্য প্রযুক্তি সুযোগ এবং সম্পদের প্রতীক, আবার কিছু মানুষের জন্য নিঃসঙ্গতা ও দারিদ্র্যের প্রতীক। আয়, শিক্ষা, সমবৈশিষ্ট্য ইত্যাদি চলকগুলির বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব রয়েছে। অক্সফোর্ড ইংলিশ কনসাইজ ডিকশনারি এর সাম্প্রতিক প্রকাশনায় ডিজিটাল ডিভাইড বলতে ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ভৌগোলিক এলাকা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তথ্য ও সংযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থসামাজিক স্তরের মানুষের মধ্যে যে তারতম্য বা ফাঁক তাকে বোঝায়।
সহজভাবে ডিজিটাল বিভাজন বলতে ইন্টারনেটে সহজে এক্সেস পাওয়া এবং না পাওয়ার লোকের মধ্যে পার্থক্য বোঝায়। অ্যাক্সেসের অভাব ডিজিটাল বিভাজনের সুবিধাবঞ্চিত পক্ষের পক্ষে একটি অসুবিধা বলে মনে করা হয় , কারণ কেবলমাত্র অনলাইনেই পাওয়া যায় বিশাল জ্ঞানের ভিত্তি।
বর্তমানে মনে করা হয় যার কাছে তথ্য আছে সে-ই সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী। তথ্যের সহজলভ্যতা বিশ্বগ্রাম ধারনার পর সবার হাতের মুঠোয় থাকলেও যে এই সুবিধা আগে ভোগ করতে পারছে সে সেই তথ্য ব্যবহার করতে পারছে তত দ্রুত। ফলে আরেকজন সেই সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে।
ডিজিটাল ডিভাইডের কারণ
১. সামাজিক কারণ
২. ভৌগোলিক কারণ
৩. অর্থনৈতিক কারণ
৪. অভিগমনিক কারণ
৫. সাংস্কৃতিক কারণ
আরো জানুন………মিডিয়া লিটারেসি কী । মিডিয়া লিটারেসির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
১. সামাজিক কারণ
সামাজিক কারণ হিসেবে ডিজিটাল ডিভাইডের চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। যেমন –
ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা
খ. অক্ষমতা বনাম সক্ষমতা
গ. বয়স ( বয়স্ক এবং তরুণ)
ঘ. পারিবারিক প্রেক্ষাপট যেমন (আয়, শিক্ষা)
২. ভৌগোলিক কারণ
ভৌগোলিক কিছু কারণে ডিজিটাল ডিভাইড এর সৃষ্টি হয় । যেমন-
ক: গ্রামীণ এবং শহুরে ।
খ. উন্নত জাতি বা দেশ এবং অনুন্নত জাতি বা দেশ।
৩. অর্থনৈতিক কারণ
অর্থনৈতিক যে কারণগুলোর কারণে ডিজিটাল ডিভাইড সৃষ্টি হয় তা হল-
ক. অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বা উন্নত এবং মধ্যম বা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ
ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন দেখা দেয়। ১৯৯৯ সালে মানব উন্নয়নের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদনে দেখা যায়, উত্তরের তথ্যসমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষিণের স্বল্প তথ্যের দেশগুলির মধ্যে ডিজিটাল পরিসেবার সুদুরপ্রসারী ব্যবহার দেখা যায় । এই সুদুরপ্রসারী ব্যবহার একটি দেশের পক্ষে সুবিধাজনক অবস্থান হয় , বিপরীতে ব্যবহারের অভাব একটি দেশের পক্ষে অসুবিধার কারণ।
তাই আন্তর্জাতিক ডিজিটাল বিভাজনের ক্ষেত্রে একটি নীতি প্রয়োগ করা দরকার যে, ”যাদের ব্যবহারের সুবিধা পর্যাপ্ত রয়েছে তাদের অন্যদের সুবিধা দিতে হবে।” ধনী ও দরিদ্র দেশের অসাম্যের প্রতিফলন হলো ডিজিটাল পরিসেবা ব্যবহারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অসাম্য । উত্তর ও দক্ষিণ এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিভাজন একটি বড় ব্যবধান তৈরি করেছে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নতুন সম্ভ্রান্ত গোষ্ঠীর জন্ম যাকে “ডিগের্যাটি” বলে। “ডিগের্যাটি” হল অত্যন্ত সফল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং অর্থনীতির জ্ঞানভিত্তিক ক্ষেত্র, যেমন – জৈবপ্রযুক্তি ও ঔষধবিজ্ঞান। স্নাতক বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্র ছাত্রীরা ন্যাচারাল সাইন্স মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে তাদের মতামত হল , তাদের বন্ধুরা যারা কম্পিউটার বিজ্ঞান বা জৈব প্রযুক্তি নিয়ে পড়ছে তারা বহুগুণ বেশী রোজগার করার সুযোগ পাচ্ছে এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে অতিবাহিত করার সুযোগ পাচ্ছে ।
খ. দারিদ্রতা এবং অসমর্থতা।
গ. দরিদ্র দেশগুলোর আন্তর্জাতিক পুঁজির অভাব এবং ফান্ডিং এর অভাব।
৪. অভিগমনিক কারণ
অভিগমনিক কারণের এক্ষেত্রে দুইটি বিষয় কাজ করে। এগুলো হল –
ক. প্রযুক্তির ভয় বা টেকনোফোবিয়া।
খ. অনুপ্রেরণা বা উদ্দেশ্যের অভাব।
৫. সাংস্কৃতিক কারণ
দেশ বা অঞ্চলভেদে এই ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় দেখা যায়। এ বিষয় দুটি হল-
ক. জাতিগত এবং ভাষা। বিভিন্ন দেশে যারা ইংরেজি বা অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় ভাষা বলে এবং যারা বলে না তাদের পৃথক করে। এমনকি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ৯৫% মানুষ সাবলীল বলতে পারে সেখানেও বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে ডিজিটাল পরিসেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে।
খ. পারিবারিক প্রেক্ষাপট (আয় এবং শিক্ষা) যাদের কম্পিউটার আছে এবং যাদের নেই তাদের মধ্যে নাটকীয় ভাবে পৃথকীকরণ করে অথবা যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং যিনি করেন না তাদের মধ্যে বিভাজন দেখা যায় ।
লেখক : শিক্ষার্থী
মাস্টার্স
জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments