যোগাযোগের দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব ও মতমোড়ল
Two-step flow of Communication যোগাযোগের দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব
দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব মতমোড়ল
যোগাযোগের দ্বি-ধাপ প্রবাহ বলতে যোগাযোগের এমন প্রবাহকে বোঝানো হয়, যা দুই ধাপে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, যে যোগাযোগ সম্পন্ন হতে দুটি ধাপ বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, তাকে দ্বি-ধাপ প্রবাহ যোগাযোগ বলা হয় । আর এ বিষয়ক তত্ত্বকে যোগাযোগের দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব বলা হয়।
Communication :
Two-step flow theory (দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব ) সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য এখানে যোগাযোগ বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়া যাক। কোন ব্যক্তির নিজের সাথে কিংবা দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে বস্তুগত বা অবস্তুগত বিষয়ের আদান-প্রদানকে সাধারণত যোগাযোগ বলা হয়।
একজন ব্যক্তি তার নিজের সাথে যে কথা বলেন সেটি যেমন যোগাযোগ তেমনি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাবের কিংবা অন্য কোন কিছুর দেওয়া নেওয়াও যোগাযোগ।
Two-step Flow Theory:
তাত্ত্বিকগণ যোগাযোগের দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব বলতে দুইটি ধাপে সংঘটিত যোগাযোগকে নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যখন আমাদের নিকট কোন message প্রেরণ করে, তখন আমরা সরাসরি তাকে Feedback না দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এমন কোন ব্যক্তির কাছে যাই, যিনি ওই বিষয়ে আমাদের চেয়ে বেশি জানেন।
উদাহরণস্বরূপ, টিভিতে আমরা এমন কিছু বিজ্ঞাপন দেখতে পাই যেখানে দেখানো হয় গ্রামের মানুষ ঢেউটিন থেকে শুরু করে টিউবওয়েল ক্রয় করার ক্ষেত্রেও তাদের স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে যান পরামর্শ গ্রহণের জন্য। এখানে ঢেউটিন মালিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্রেতাদের কাছে যে বার্তা প্রেরণ করা হয় তারা সরাসরি সেটি গ্রহণ না করে এমন কারও কাছে যান, যাদের তারা ওই বিষয়ে জ্ঞানী বলে ধরে নেন।
গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে যে একজন হেডমাস্টার অনক বিষয়েই জ্ঞান রাখেন আর সেই বিশ্বাস থেকেই তারা তার কাছে পরামর্শের জন্য যান। এখানে,ঢেউটিন মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে ক্রেতাদের যোগাযোগ দুটি’ ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে। তাই একে Two-step flow of communication বলা হয়।
মতমোড়ল (Opinion Leader)
গণমাধ্যম আমাদের কাছে যে বার্তা প্রেরণ করে তা সরাসরি গ্রহণ না করে আমরা এমন কোন ব্যক্তির কাছে যাই যিনি ওই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কিংবা যিনি ওই বিষয়ে পূর্ব থেকেই জানেন।
উপরোক্ত উদাহরণটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখানে গ্রামের মানুষ গণমাধ্যম থেকে যে বার্তা পাচ্ছে তারা সরাসরি সেটি গ্রহণ করছে না। তারা এমন কারও কাছে যাচ্ছে যারা মালিক কর্তৃপক্ষ এবং তাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন। গণমাধ্যম এবং তার দর্শক-শ্রোতার মধ্যে এই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনকারীকে opinion leader বা মতমোড়ল বলা হয়।
এ বিষয়ে স্পষ্টতর ধারণা লাভের জন্য আরও কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
কোন ছেলে বাইক কেনার পূর্বে তার সিনিয়র এমন কারও কাছে যাবে, যার বাইক আছে অথবা যিনি নিয়মিত অনলাইনে এ বিষয়ে খোজখবর রাখেন। আবার, কোন মেয়ে মেহেদী কেনার পূর্বে এমন কারও কাছে যাবে, যিনি নিয়মিত মেহেদী পরেন অথবা সাজ বিষয়ে সচেতন কিংবা যিনি পার্লারে কাজ করেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৯৪০ সালে সমাজবিজ্ঞানী Paul F Lazarsfeld, Bernard Berelson এবং Hezel Gaudet- এই তিনজন মিলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা জানার জন্য People’s choice নামে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এই নির্বাচনী গবেষণার ১৭ বছরের মধ্যে কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অফ এপ্লায়েড সোশ্যাল রিসার্চ People’s Choice এর পূর্বানুমান পরীক্ষা এবং তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ৪ টি গবেষণা পরিচালনা করেন। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল
The Rovere Study:
১৯৪৩ সালে Robert K. Merton ৮৬ জনের উপর আন্তঃব্যক্তিক প্রভাব ও যোগাযোগ বিষয়ে গবেষণা করে দুই ধরনের Opinion Leader এর অস্তিত্ব খুঁজে পান।
১. Local
২. Cosmopolitan
এ গবেষণায় আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে।
The Decatur study:
১৯৪৫-৪৬ সালের মধ্যে Katz এবং Lazarsfeld ৮০০ জন মহিলার উপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। বিপণন, ফ্যাশন, সিনেমায় যাওয়া এবং public affairs এর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া এই গবেষণায় দেখা যায়, বাজারের ক্ষেত্রে বয়স্ক মহিলারা, ফ্যাশন ও সিনেমায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অল্পবয়সী ও অবিবাহিত মেয়েরা এবং public affair এর ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মেয়েরা মতমোড়ল(Opinion Leader) হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই গবেষণায় আরও দেখা যায়, নতুন তথ্য প্রচারিত হলে নতুন gatekeeper এর জন্ম হয়। এখানে, মতমোড়ল ও Gatekeeper এর ধারণার সাদৃশ্য দেখানো হয়।
The Drug study :
Coleman, Katz এবং Menzel আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমের ডাক্তারদের উপর এই গবেষণা পরিচালনা করেন। এখানে দেখা যায়, নতুন ঔষধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, যাদের সামাজিক সম্পর্ক বা যোগাযোগ বেশী তারা নতুন ঔষধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে তুলনামূলক বেশী সাহস পান।
Elmira’s Study:
১৯৪৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভোটারদের আচরণ জানার জন্য Berelson, Lazarsfeld এবং McPhee এই গবেষণাটি পরিচালনা করে দেখতে পান যে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পেশাগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে মতমোড়লরা রয়েছেন। তুলনামূলকভাবে, উচ্চশিক্ষিতদের মাঝে মতমোড়লদের সংখ্যা বেশী।
Multistep flow of communication:
উপরোক্ত গবেষণাগুলোতে দেখা যায় যে, মতমোড়লরাও অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ এক বিষয়ের opinion leader তথ্য জানার জন্য অন্য opinion leader এর কাছে যায়। সুতরাং এখানে যোগাযোগ কেবল দ্বি-ধাপে নয়, বরং বহুধাপে প্রবাহিত হয়। তাই, একে Multi-step Flow of Communication ও বলা যেতে পারে।
Know More…..
দ্বি-ধাপ প্রবাহ তত্ত্ব মতমোড়ল
https://www.communicationtheory.org/two-step-flow-theory-2/
লেখক: শিক্ষার্থী
২২ তম ব্যাচ(৪র্থ বর্ষ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments