এজেন্ডা সেটিং থিউরি । আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব । Agenda Setting Theory
এজেন্ডা সেটিং থিউরি আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব
দর্শক- শ্রোতা -পাঠকের উপর গণমাধ্যমের প্রভাব সংক্রান্ত তত্ত্বের মধ্যে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব টি অন্যতম । আমাদের সমাজে প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে । হয়তো পঞ্চাশটি ঘটনার মধ্যে আমরা ১০ থেকে ১৫ টি ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি । যে ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা জানতে পারি সেগুলো নিয়েই আমরা আলোচনা করি ,আড্ডায় তর্কে লিপ্ত হই । মূলত , এটিই আলোচ্যসূচি নির্ধারণ । অর্থাৎ, we judge as important what the media judge as . গণমাধ্যমে যা গুরুত্ব পায় আমাদের কাছেও তা গুরুত্বপূর্ণ । নিম্নে কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি তুলে ধরা হলো-
কেস স্ট্যাডি ১
১৯৮০ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগে নির্বাচন সম্পর্কে জনমত জরিপে দেখা যায় , দুই প্রার্থী জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রিগ্যানের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কাছাকাছি । নির্বাচনের দুদিন আগে ইরানে আমেরিকান বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে সংবাদ প্রচার করে । এরপর নির্বাচনের ফলাফল দেখা গেলো রিগ্যান বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন । বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার করে । এরপর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেল রিগ্যান বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ।
কেস স্ট্যাডি ২
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ২ কলাম নিউজ হয় ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে । পরবর্তীতে আমেরিকার জনগণ ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে বেশি সচেতন হয়ে পড়ে । ১৯৭৩ এর শেষ দিকে শত ভাগ মানুষ এ বিষয়ে জানতে পারে । মানুষ বিশ্বাস করেছিল এখানে নিক্সনের হাত ছিল । ফলশ্রুতিতে নিক্সন পদত্যাগে বাধ্য হয় ।
পটভূমি
ষাটের দশকের আগ পর্যন্ত মানুষের উপর গণমাধ্যমের প্রভাব যে এত বেশি তা বিশ্বাস করা হতো না । পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯২২ সালে তাঁর Public opinion বইতে বলেন,
The mass Media shapes the pictures in our heads
অর্থ্যাৎ গণমাধ্যম আমাদের মাথায় একটি ছবি এঁকে দেয় ।
University of Texas এর অধ্যাপক Maxwell Mccombs এবং University of North Carolina এর অধ্যাপক Donald Shaw সর্বপ্রথম তত্ত্বটি দেন ।১৯৭২ সালে তাঁর Public Opinion Quarterly জার্নালে The agenda-setting function of the mass media শিরোনামে প্রবন্ধ লেখেন ।পরবর্তীতে E.M. Griffin তাঁর A first look at communication theory গ্রন্থে এজেন্ডা সেটিং তত্ত্ব প্রদান করেন ।
মূলত উনিশ শতকের ২০ দশক থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য , মতামত ও গবেষণার মাধ্যমে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের উদ্ভব হয় । এ তত্ত্ব আরও অনেকে গবেষণা করেছেন । এরা হলেন – Donald Kinder , Theodore White , G. Ray Funkhouser , Mark Peters
এরা বিভিন্নভাবে গবেষণা করে তত্ত্বটি আরো সমৃদ্ধ করেছেন এবং নতুন নতুন দিক উন্মোচন করেছেন ।
আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের মূল কথা
গণমাধ্যম যখন কোন কিছুকে প্রাধান্য দেয় , তখন ব্যক্তিও তাতে প্রভাবিত হয় । প্রভাবিত ব্যক্তি গণমাধ্যমের প্রদত্ত এজেন্ডাকে তার কৃতকর্মের মাধ্যমে আরো জোরদার করে । গণমাধ্যমের এজেন্ডায় সাধারণ ব্যাক্তি অসাধারণে আবার অসাধারণ ব্যক্তি সাধারণে পরিণত হয় ।
ধরা যাক, গণমাধ্যমের কল্যাণে ক্যান্সার রোগী অপেরা, ধর্ষনের শিকার নিলুফা ব্যাপক পরিচিতি পায় । অন্যদিকে গিয়াস উদ্দীন আল মামুনের দুর্নীতির সংবাদ তাকে সাধারণে পরিণত করে ।
এজেন্ডা সেটিং নিয়ে গবেষণা
এজেন্ডা সেটিং নিয়ে মূলত দুই ভাগে গবেষণা করা হয়
- The Chapel Hill Study
- The Charlotte Study
1 . The Chapel Hill Study
1968 সালে Mccombs ও Shawএই দুই গবেষক গবেষণার জন্য North Carolina র Chapel Hill নামক স্থানের ১শ জন ভোটারের সাক্ষাৎকার নেন । পাশাপাশি ১শ জনের পঠিত ৫ টি পত্রিকা ২টি ম্যাগাজিন এবং ২টি টিভি চ্যানেল নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, গণমাধ্যমগুলোতে যে বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে মানুষের কাছেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে ।
এখানে তারা তিনটি সময়ে ভাগ করে দেখেন যে, প্রথমে মানুষের মধ্যে যে বিষয়গুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল, পরবর্তীতে মিডিয়ায় কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি বেশি প্রচারের ফলে সেগুলোই এজেন্ডা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে জনগণের মধ্যে ।
2 . The Charlotte Study
১৯৭২ সালে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার Charlotte নামক স্থানে তারা আরেকটি গবেষণা পরিচালনা করেন । জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সময় গবেষকগণ মানুষের সামনে পনেরোটি প্রধান সমস্যা এবং ১৫ টি সাধারণ সমস্যার কথা তুলে ধরেন । নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই গবেষণায় দেখা যায়, নির্বাচনের আগে যা ছিল সাধারণ সমস্যা নির্বাচনের সময় তা প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় ।
আলোচ্যসূচি নির্ধারণ নিয়ে উপরোক্ত দুটি গবেষণা থেকে বোঝা যায় , কোন সাধারন সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলে , সাধারণ সমস্যা গুলো মানুষের কাছে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় । এতে প্রমাণিত হয় যে , মানুষ গণমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হয় ।
আলোচ্যসূচী নির্ধারণ তত্ত্বের বিভিন্ন দিক : এ অংশটির জন্য এখানে ক্লিক করুন
সমালোচনা
১. কিভাবে এ তত্ত্ব কাজ করছে সেটা ভালোভাবে বুঝা যায় না ।
২. এই তত্ত্বে যেমন আদর্শ মিডিয়া ব্যবহারকারী দেখানো হয়েছে তারা এমন নাও হতে পারে ।
৩. মিডিয়া এজেন্ডা মানুষকে কতটুকু প্রভাবিত করে সেটাও বোঝা যায় না ।
৪. যারা আগে থেকেই তাদের মানসিকতায় অটুট তাদের ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব খুবই দুর্বল ।
৫. সংবাদ মাধ্যম সমস্যার সৃষ্টি বা সমাধান করতে পারে না। তারা মানুষকে সচেতন করতে এবং জড়াতে পারে ।
পরিশেষে, এজেন্ডা সেটিং তত্ত্ব এজেন্ডা সেটিং নিয়ে গবেষণা কেস স্টাডি সহ নানাবিদ উদাহরণ, আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে একটি পরিষ্কার বিষয়ে ফুটে উঠেছে । সেটা হচ্ছে- পাবলিক এজেন্ডা মিডিয়া এজেন্ডা কে প্রভাবিত করে না ।বরং মিডিয়া এজেন্ডাই পাবলিক এজেন্ডাকে প্রভাবিত করে ।
এজেন্ডা সেটিং থিউরি
No comments