কর্মীদের প্রেষিত করার উপায় । প্রেষণা তত্ত্ব
কর্মীদের প্রেষিত করার উপায় । ব্যবস্থাপক কর্মীদের কিভাবে প্রেষিত করবেন?
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপক তার কর্মীদের নিন্মোক্ত উপায়ে কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে পারেন-
১. সমর্থনমূলক হওয়া
২. স্বীকৃতি
৩ . চ্যালেঞ্জিক, বৈচিত্র্যপূণ্য ও আকর্ষনীয় কাজ
৪. দায়িত্ব
৫ . অগ্রগতি
৬ . নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করা
৭ . ফলাবর্তন দেওয়া
৮ . ব্যাক্তিগত সন্তুষ্টি
১. সমর্থনমূলক হওয়া
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যদি ব্যাবস্থাপক তার কর্মীদের প্রতি বিবেচক ও সমর্থমূলক থাকেন তাহলে কর্মীরা বেশি প্রেষণা পায় এবং কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। তবে বিবেচক ও সমর্থমূলক হওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি কর্মীদের খারাপ কাজকে সমর্থন করবেন। বরং তিনি কর্মীদের সাধারণ কল্যাণের দিকটি বিবেচনায় রাখবেন। কর্মীরা তাদের কাজের গঠনমূলক প্রত্যুত্তর , সঠিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মতো প্রতিষ্ঠানিক সমর্থন আশা করেন। ব্যাবস্থাপককে এ বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে।
আবার কর্মীদের প্রতি শর্তহীন সমর্থনের খারাপ প্রভাবও থাকে। উদাহরণ স্বরূপ- একজন সহ সম্পাদক যদি সহ সম্পাদকের লেখা খারাপ ভালো সব শিরোনামই ইতিবাচক ভাবে নেয় তাহলে সহ সম্পাদক কোনটি ভালো শিরোনাম সে সম্পর্কে কোন ধারণার বিকাশ ঘটাতে পারবেনা। সম্পাদকের এই ধরনের সমর্থন অন্যের ভালো কাজকেও নিরুৎসাহিত করতে পারে । তাই সমর্থমূলক হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কও থাকতে হয়।
২. স্বীকৃতি
অধিকাংশ কর্মীরা চায় অন্যরা যাতে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি দেয় । এটা তারা সবসময় না চাইলেও মাঝে মাঝে তা আশা করে। ব্যাবস্থাপক মাসিক কোন বৈঠকে কর্মীদের কোন কাজ ভালো হলে ঐ কর্মীকে স্বীকৃতি দিতে পারেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দিতে পারেন। কিংবা কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে তাদের নাম দিতে পারেন। এই ধরনের স্বীকৃতি কর্মীদেরকে কাজে প্রণোদিত করে।
৩ . চ্যালেঞ্জিং, বৈচিত্র্যপূণ্য ও আকর্ষনীয় কাজ
কর্মীরা চ্যালেঞ্জিং বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আকর্ষনীয় কাজে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাই কাজকে আনন্দপূর্ণ করা ও কর্মীরা যে কাজ করছে তার চ্যালেঞ্জিং দিকগুলো তাদের নিকট তুলে ধরার ব্যাবস্থা দরকার । তবে মনে রাখতে হবে যে কোন কাজ একসময় চ্যালেঞ্জিং ও আকর্ষনীয় থাকলেও তা সবসময় থাকে না। আবার তা কারো কাছে আকর্ষনীয় হলেও অন্যদের কাছে না ও হতে পারে ।
৪. দায়িত্ব
মানুষ তার কর্মজীবনে সবসময় অন্যের পছন্দমতো চলতে পছন্দ করে না। তারা তাদের সফলতার এবং ব্যর্থতার দায়িত্ব নিতে চায়। তাই এরূপ দায়িত্ব প্রদান করা হলে কর্মী কাজে উদ্ধুদ্ধ হয়। এটা সত্য যে কিছু মানুষকে কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা যায় না। একজন ব্যাবস্থাপক কর্মীদের অবস্থা বুঝে কম ঝুঁকি রয়েছে এমন ক্ষেত্রের কাজের কর্তৃত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদেরকে দিতে পারেন। কর্মীদের প্রনোদনা স্তর বাড়ানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া দরকার ।
আরো জানুন…….মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ । Functions of Media Manager
৫ . অগ্রগতি
প্রত্যেকে তার কর্মের ক্ষেত্রে অগ্রধিকার বা এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত হতে চায়। কর্ম ক্ষেত্রে অগ্রগতি বলতে বিভিন্ন ব্যাক্তি বিভিন্ন ধারণা প্রোষণ করেন। কেউ অগ্রগতি বলতে পদন্নোতিকে বুঝেন, কেউ বুঝেন নিজেকে ভালোভাবে প্রদর্শন করা যাবে এমন কিছু । আবার কেউ নিজের বিদ্যমান পদ থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণকে অগ্রগতি বোঝেন। কর্মীকে কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে ব্যাবস্থাপককে এটি বুঝতে হবে ।
৬ . নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করা
গবেষণায় প্রমাণ রয়েছে যে, এক কাজ থেকে অন্য কাজে যাওয়া মানুষ বেশি প্রণোদিত ও ক্রিয়াশীল হয় । কেননা কর্মী নতুন কাজে চ্যালেঞ্জ অনুভব করে। সেখানে তার কর্তৃত্ব দেখাতে চায়। একজন গণমাধ্যম ব্যাবস্থাপক এই কৌশল ব্যাবহার করতে পারেন । উদাহরণস্বরূপ- তিনি কোনো রির্পোটারকে নতুন বিটে কাজ করতে দিতে পারেন। অথবা তাকে দিতে পারেন অন্য রির্পোটারদেরকে তত্ত্বাবধন করার দায়িত্ব। এতে করে ঐ রির্পোটার নতুন চ্যালেঞ্জ অনুভব করে কাজে উদ্ধুদ্ধ হয়।
৭ . ফলাবর্তন দেওয়া
লক্ষ্য স্থির করা মানুষ তখনই ভালো ভাবে কাজ করে যখন তার সম্পাদিত কাজের ফলাবর্তন আনতে পারে। গণমাধ্যম ব্যাবস্থাপক তার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ফলাবর্তন প্রদানের এই সংস্কৃতি গড়ে তুলে কর্মীদের প্রণোদিত করতে পারেন । কারণ , এটি কর্মীদেরকে লক্ষার্জনে আগ্রহী করে তুলে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য যদি হয় সার্কুলেশন বাড়ানো তাহলে সকল কর্মীকে তিনি কমপক্ষে মাসিক সার্কুলেশনের পরিমাণ হলেও বলে দিবেন।
৮ . ব্যাক্তিগত সন্তুষ্টি
প্রেষণার ক্ষেত্রে একজন ব্যাবস্থাপক সবশেষে ব্যাক্তিগত সন্তুষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। ব্যাক্তিগত সন্তুষ্টি একজন মানুষের মাসিক পুরষ্কারের মতো বিষয় , যা সে তার কাজের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। মানুষ তার প্রচুর সময় কাজেই ব্যয় করে। এবং এজন্য সে তার কাজের কিছু ইতিবাচক বিবেচনা আশা করে। ব্যাবস্থাপক এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ- কোনো রির্পোটারের প্রতিবেদনের ফলে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ আইন পাস হলে তিনি প্রতিষ্ঠানে ঘোষণা এবং উদযাপন করতে পারেন। এতে ঐ রির্পোটার মানসিক তৃপ্তি পেয়ে কাজে আরো উৎসাহিত হয় ।
উপরোক্ত বিষয় গুলো ছাড়াও একজন গণমাধ্যম ব্যাবস্থাপককে ভালো বেতন , নিরাপত্তা , চিকিৎসা ও বাসস্থান সুবিধা , যাতায়াত ব্যবস্থা করা ইত্যাদির মাধ্যমে সংবাদ কর্মীদেরকে কাজে প্রণোদন দিতে ভূমিকা রাখেন।
মানুষ কাজ করতে করতে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন দরকার হয় একটু উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, প্রণোদন। তার ইচ্ছাকে কর্মশক্তিতে রূপান্তরে একজন ব্যাবস্থাপক তাকে একটু দিতেই পারেন।
No comments