ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী যোগাযোগ । সুবিধা ও উদ্দেশ্য

তানজিনা আলম

ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী যোগাযোগ । ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী যোগাযোগের সুবিধা

নিম্নগামী যোগাযোগ

প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীগণ যখন অধস্তনদের সাথে যোগাযোগ করেন তখন তাকে নিম্নগামী যোগাযোগ বলে। এরূপ যোগাযোগ নিম্নগামী হয়। সাধারণ অর্থে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা তার অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে যে যোগাযোগ করে, তাকে নিম্নগামী যোগাযোগ বলা হয়। এই যোগাযোগে তথ্যাদি প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর হতে আরম্ভ করে বিভিন্ন মধ্যবর্তী পর্যায়ে ঘুরে প্রতিষ্ঠান নিম্নতম ধাপে পৌঁছায়।

যেমন- একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার একটি নির্দেশ শ্রমিকদের সুপারভাইজার এর নিকট পৌঁছাতে চান। প্রথমে তিনি সংশ্লিষ্ট ডেপুটি ম্যানেজারের নিকট প্রেরণ করেন এবং ডেপুটি ম্যানেজার এই নির্দেশ যথারীতি সহকারী ম্যানেজারের নিকট প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে তা সুপারভাইজারের নিকট পৌঁছে। এভাবে একটি তথ্য যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নিকট হতে নিম্নপদস্থ কর্মচারীর নিকট পৌঁছে, তখন তাকে নিম্নগামী যোগাযোগ বলে।


নিম্নগামী যোগাযোগ

শেয়ারহোল্ডার -> পরিচালনা পরিষদ-> ব্যবস্থাপনা পরিচালক -> সচিব -> প্রধান নিবার্হী-> বিভাগীয় ব্যবস্থাপক-> বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক বৃন্দ-> শ্রমিক কর্মীবৃন্দ।

নিম্নগামী যোগাযোগের উদ্দেশ্য

নিম্নগামী যোগাযোগের কতিপয় মৌলিক উদ্দেশ্য আছে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো।

222

১) নির্দেশ প্রদান

ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য নিম্নগামী যোগাযোগ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট নির্দেশাবলী প্রদান করা হয় । যাতে কর্মীরা নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে।

২) তথ্য সরবরাহ

নিম্নগামী যোগাযোগের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল কর্মীদের তথ্য সরবরাহ করা । যাতে তারা তাদের দায়িত্ব ও অন্যান্য কাজের সাথে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সুষ্ঠু ভাবে অনুধাবন করতে পারে।

৩) অবহিত করণ

প্রতিষ্ঠান উচ্চস্তরে গৃহীত নীতিসমূহ ,কর্মসূচির পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত সমূহ ইত্যাদি সম্পর্কে অধস্তনদের অবহিত করার জন্য নিম্নগামী যোগাযোগ প্রয়োজন।

৪) দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন করার প্রয়োজন। নিম্নগামী যোগাযোগ তা নিশ্চিত করে।




ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী যোগাযোগ

৫) কাজের মূল্যায়ন

অধঃস্তন দ্বারা সম্পাদিত কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করে তাকে অবহিত করার জন্য এই যোগাযোগের প্রয়োজন হয় । এতে কর্মীরা তাদের কাজে সাফল্য বা ত্রুটি সম্পর্কে জানতে পারে।

৬)কাজের সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ

পরিকল্পনা অনুযায়ী যাতে কার্যসম্পাদন হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নগামী যোগাযোগ অপরিহার্য।

৭)অনুপ্রেরণা সৃষ্টি

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হাসিল করার জন্য উত্সাহ প্রদান, বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং অনুপ্রাণিত করার হাতিয়ার হল নিম্নগামী যোগাযোগ।


ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ

প্রতিষ্ঠানের অধঃস্তনগণ যখজ ঊর্ধ্বতনগণের সাথে যোগাযোগ করে তখন তাকে ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ বলে। সাধারণ অর্থে ঊর্ধ্বমুখী যোগাযোগের তথ্য প্রবাহ নিচ থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা যখন তাদের বসের সাথে সংবাদ বিনিময় করে বা নিম্নপদস্থ ব্যক্তি উচ্চপদস্থ যে কোন ব্যক্তির সাথে তথ্য বিনিময় করে তখন সেই সংবাদ ঊর্ধ্বমুখী যোগাযোগ নামে বিবেচিত হয়। ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ নিম্নগামী যোগাযোগ এর বিপরীত গতিপ্রবাহ।

যেমনঃ একজন শ্রমিক বেতন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে চাইলে প্রথমে তার সুপারভাইজারের সাথে আলাপ করতে পারে পরবর্তীতে এই আবেদন ডেপুটি ম্যানেজার থেকে সহকারী ম্যানেজারের কাছে পৌঁছে। যার সূত্রপাত হয় নিম্নস্তরে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে উচ্চ স্তরে।

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ

-> শ্রমিক কর্মীবৃন্দ -> বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক বৃন্দ -> বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বৃন্দ -> প্রধান নিবার্হী সচিব -> ব্যবস্থাপনা পরিষদ-> পরিচালনা পরিষদ-> শেয়ারহোল্ডার।

আরো জানুন……..প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ কী? প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের অ্যাপ্রোচ

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগের সুবিধা

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ ব্যবস্থা হল নিম্নগামী যোগাযোগ এর বিপরীত গতিপ্রবাহ। ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ কাঠামোতে প্রেরক প্রাপক এর নিচে অবস্থান করে। নিম্নে উর্ধ্বগামী যোগাযোগের সুবিধা আলোচনা করা হল।

১) সংগ্রহ

ঊর্ধ্বমুখী যোগাযোগের প্রধান সুবিধা হল প্রতিষ্ঠান নিম্নপদস্থ ও শ্রমিকদের নিকট হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।ফলে প্রতিষ্ঠান যেকোন সমস্যার সমাধান সহজ হয়।

২)নিম্নগামী যোগাযোগের ফলাবর্তন

ব্যবস্থাপনায় যারা জড়িত থাকেন তাদের অধিনস্ত কর্মচারীদের নিকট যে তথ্য পাঠিয়েছে তা ঠিকমত পৌঁছেছে কিনা এবং তথ্য প্রাপক ঠিকমত বুঝতে পেরেছে কিনা বা প্রাপক তা গ্রহণ করেছে কিনা, এ সম্পর্কে কর্মকর্তাগণ উর্দ্ধগামী যোগাযোগ থেকে জানতে পারে।

৩)সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগের মাধ্যমে নিম্নপদস্থ কর্মীদের অভাব-অভিযোগ, প্রস্তাব, অনুভূতি,মনোভাব ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার নিকট প্রেরিত হয়। ফলে তা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।

৪) গঠনমূলক পরামর্শ

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগের মাধ্যমে অধীনস্থ কর্মীগণ প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতি বা কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের তাদের আন্তরিক ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে থাকে, ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন ও উন্নতি ত্বরান্বিত হয়

৫) প্রণোদনা

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগের অন্যতম সুবিধা হল নিম্নপদস্থিত কর্মীদের প্রেরিত পরামর্শ ও মতামত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হলে তারা বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিকতা ও কাজের উৎসাহ বাড়ে, এতে সাফল্য নিশ্চিত হয়।

৬) পরিকল্পনা তৈরী ও বাস্তবায়ন

কর্মীদের প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে উর্দ্ধগামী যোগাযোগ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

৭) অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি

এ ধরনের নিয়মিত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা ও অধীনস্থদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি সহায়ক হয়। ফলে সংগঠনে অনুকূল কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী

মাস্টার্স

জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.