প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ প্রবাহ । প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ
প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ প্রবাহ
একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে দু’ধরনের যোগাযোগ প্রবাহ দেখা যায়। যথা-
১) শীর্ষ দেশীয় যোগাযোগ (Vertical communication)
২) আনুভূমিক যোগাযোগ (Horizontal communication)
১) শীর্ষ দেশীয় যোগাযোগ (Vertical communication)
দুজন পৃথক মর্যদাসম্পন্ন লোকের মাঝে যে যোগাযোগ হয়, তাকে শীর্ষদেশীয় যোগাযোগ বলে। এখানে একজনের মর্যাদা অন্যজনের চেয়ে উন্নততর হয়ে থাকে। এটি দু’ধরনের। যথা:–
ক) ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward communication)
খ) নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward communication)
ক) উর্ধ্বগামী যোগাযোগ
এই যোগাযোগ হল প্রতিষ্ঠানের নিচু স্তরের ব্যক্তিবর্গ হতে উঁচু স্তরের ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ। যেমন- সাধারণ শ্রমিক থেকে পরিচালক, অনুষদ সদস্য থেকে ডীন পর্যন্ত প্রভৃতি যোগাযোগ। উর্ধ্বগামী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানের কোনো সমস্যা, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, প্রসার, শ্রমিক-চাকুরী সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার প্রভৃতি এখানে স্থান পায়। অধঃস্তন কর্মচারীদের ধ্যান-ধারণা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এ ধরনের যোগাযোগ খুবই জরুরী।
এধরনের যোগাযোগের সুবিধা হচ্ছে শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারা যায় এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়। আবার, এর কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন, বসকে খুশি করার মানসিকতা কাজ করে, দ্বাররক্ষক বা পরিচালককে অনেকসময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা হয় না।
222
ফলে বিরাট সমস্যা দেখা দেয়। যারা আদেশ দিয়ে অভ্যস্ত, তারা কথা শুনতে নয়। এর ফলে নিচের শ্রেনীর মধ্যে নিরাশা সৃষ্টি হয় ।
খ) নিম্নগামী যোগাযোগ
কোনো প্রতিষ্ঠানের উঁচু স্তরের ব্যক্তিবর্গ থেকে নিচুস্তরের ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ। যেমন- পরিচালক থেকে শ্রমিক, ডীন থেকে অনুষদ সদস্য প্রভৃতি যোগাযোগ । এই যোগাযোগে উর্ধ্বতন ব্যক্তিগণ অধঃস্তন ব্যক্তিদেরকে আদেশ দিয়ে থাকেন।
যেমন- ডকুমেন্ট ফটোকপি করার নির্দেশ, বিজ্ঞাপনটির ফর্ম পূরণ করার নির্দেশ, ইত্যাদি। এসবই করা হয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে।
এধরনের যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছে, ম্যানেজার এবং শ্রমিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান হয় না।
আরো জানুন……ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী যোগাযোগ । সুবিধা ও উদ্দেশ্য
২) আনুভূমিক যোগাযোগ (Horizontal communication)
এটি একটি আনুভূমিক যোগাযোগ প্রবাহ। এটি দু’ধরনের। যথা-
ক) পার্শ্বগত যোগাযোগ
খ) ধারাবাহিক যোগাযোগ
ক) পার্শ্বগত যোগাযোগ (Lateral communication)
সমমর্যাদা সম্পন্ন লোকদের মধ্যে যে যোগাযোগ সাধিত হয়, তাকে পার্শ্বগত যোগাযোগ বলে। যেমন: মালিকের সাথে মালিক, শ্রমিকের সাথে শ্রমিকের যোগাযোগ। পার্শ্বগত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানকল্পে তত্ত্ব ও নিরীক্ষণের সহজ পন্থা।
এতে শ্রমিকদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। শ্রমিকদের সুসম্পর্ক এবং অর্থবহ যোগাযোগ হল শ্রমিক সন্তুষ্টির উৎস। এই যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করে। এর সুবিধা হচ্ছে, সমস্যা থাকলে তার গভীরে প্রবেশ করা যায় এবং সমাধান করা যায়। বোঝাপড়া ভাল হয়।
এধরনের যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছে পারিভাষিক সমস্যা। এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগের শিক্ষার মান ভিন্ন হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া প্রত্যেক বিভাগ (Division) মনে করে তারাই সেরা। প্রতিযোগিতা যেহেতু বেশি, তাই পরষ্পরের মধ্যে অসহযোগিতা কাজ করে।
খ) ধারাবাহিক যোগাযোগ (Serial communication)
এই যোগাযোগ হয়ে থাকে সাধারণত সম্পর্কযুক্ত লোকদের মাঝে । আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এই যোগাযোগ ঘটে থাকে।যেমন- আমরা কিছু শুনে বন্ধুকে বলি, সে শুনে অন্য আরেকজনকে বলে। কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো ঘটনার গুজব এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে।
Gorden Allpot & Leo Postman এই গুজব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন একটি বার্তা তিনটি ধাপে পৌঁছায়। এগুলো হল-
i. Leveling
এতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে যেতে তথ্যের জটিলতা বা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো হারিয়ে তথ্য সরল হয়ে যায় এবং এর গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
ii. Sharpening
এক্ষেত্রে কিছু জটিল তথ্য হারিয়ে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য গুরুত্ব পায়। যে অংশ level করা হয়, সেটা অতিরঞ্জিত করা হয়।
iii. Assimilation
এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বার্তাটি বিকৃত হয়ে যায়। আমরা আমদের নিজস্ব মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি অনুযায়ী তথ্যগুলোকে নতুন মাত্রায় রূপ দিয়ে থাকি
No comments