প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগে ব্যক্তির ভূমিকা
প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির ভূমিকা
২-৩ জন ব্যক্তির মধ্যে সংগঠিত যোগাযোগ কর্মের চেয়েও অধিক ব্যক্তির মধ্যে অনুষ্ঠিত যোগাযোগ ক্রিয়া অপেক্ষাকৃত জটিল হয় এবং স্পেশালাইজড হয়। জটিল আকৃতির প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন ভূমিকা দেখা যায়। নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল:
১ . দ্বাররক্ষক (Gate keeper)
২ . লিয়াঁজো (Liaison)
৩ . অভিমত নেতৃত্ব (Opinion leadership)
৪ . সংযোগ সেতু (Connecting bridge)
৫ . কসমোপোলাইট (Cosmopolite)
৬ . আইসোলেট (Isolate)
১ . দ্বাররক্ষক (Gate keeper)
দ্বাররক্ষক বা Gate keeper শব্দটি প্রথম Kurt Lewin ব্যবহার করেন ১৯৪৩ সালে।
কোনো প্রতিষ্ঠের ভেতর যখন বার্তাকে কিছু মধ্যবর্তী স্তরকে অতিক্রম কিরে গ্রহীতার কাছে পৌঁছাতে হয়, তখন সে মধ্যবর্তী স্তরকে আমরা দ্বাররক্ষক বলতে পারি। বার্তার অবাধ প্রবাহে সে একটা দ্বাররক্ষকের ভূমিকা পালন করে।
যেমন কোনো সংবাদে হস্তক্ষেপ করে তা নির্ধারণ করেন সহসম্পাদক। তাই তিনি দ্বাররক্ষক। তথ্য সরবরাহমূলক যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্বাররক্ষকের সিদ্ধান্তের উপর গ্রহীতার তথ্যপ্রাপ্তি অনেকখানি নির্ভরশীল। একজন দ্বাররক্ষক নির্বাহী পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাই দ্বাররক্ষক বা Gate keeper এর সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
222

২ . লিয়াঁজো (Liaison)
একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দুইটি উপদলের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ব্যক্তিই হচ্ছে লিয়াঁজো। লিয়াঁজো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে থাকেন।যেমন: ছাত্র এবং অনুষদের মধ্যে একজন ব্যক্তি সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করেন যিনি ছাত্র কিংবা অনুষদের সদস্য নন। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য লিয়াঁজোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(এখানে A দলের সদস্য নয়, তবুও অপর দুই দলের সাথে সংযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে। তাই এটি একটি লিয়াঁজো)
লিয়াঁজোর ভূমিকা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম গবেষণা করেন Jacobson ও Seshore. এরপর Scwartz এবং Berlo গবেষণায় দেখেন যে যেকোনো একটা প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে ২০% লোক লিয়াঁজোর ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরো জানুন……প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ কী? প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের অ্যাপ্রোচ
৩. অভিমত নেতৃত্ব (Opinion leadership)
সমাজে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয় কিন্তু লোকজন তার কাছে পরামর্শের জন্য যায়, এ ধরনের নেতৃত্বকে অভিমত নেতৃত্ব বলে।
আশেপাশের মানুষের উপর তার একটা নেতৃত্ব থাকে। এরা অন্যের আচরণ পরিবর্তনে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে। যেমন: গ্রামের মোড়লদের বা মৌলভীদের কাছে সবাই যায়। তাই তারা অভিমত নেতা। এ অভিমত নেতাদের সমাজের মানুষ একটু শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখে থাকে।

এখানে ‘D এর কাছে সবাই পরামর্শের জন্য যাচ্ছে, তাই তিনি অভিমত নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
৪ . সংযোগ সেতু (Connecting bridge)
দুটো দলের কিছু নির্দিষ্ট সদস্য থাকেন, যারা ওই দুদলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারাই হলেন সংযোগ সেতু।

[এখানে ‘M’ ও ‘N’ হল সংযোগ সেতু]
লিয়াঁজোর কাজটিই দল দুটির মধ্যে সংগঠিত হয়। সেতুবন্ধন থাকলে লিয়াঁজোর দরকার হয় না, আর লিয়াঁজো থাকলে সেতুবন্ধনের দরকার হয় না। লিয়াঁজো এবং সংযোগ সেতুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সংযোগ সেতু দলের দুটো দলের সদস্যদের দ্বারা সংগঠিত হয়; কিন্তু লিয়াঁজো সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন ব্যক্তি।
৫ . কসমোপোলাইট (Cosmopolite)
পুরো সংগঠনের মধ্যে যে ব্যক্তি অনেকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন, তিনি হচ্ছেন কসমোপোলাইট।

কসমোপোলাইট নিজের দলের পাশাপাশি বাইরের পরিবেশের সাথেও যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাইরের ভাল জিনিস তিনি নিজ দলের জন্য গ্রহণ করেন। যেমন, ব্যাংক ম্যানেজার সেমিনার বা কর্মশালা থেকে ভাল পন্থা নিজ ব্যাংকের জন্য আমদানী করেন।
কসমোপোলাইটের ভূমিকা সাধারণত বেশি পালন করেন একেবারে উপরের স্তরের এবং নিচের স্তরের লোক। সংগঠনের ক্ষেত্রে দুধরনের কসমোপোলাইট থাকলেও যারা উচ্চ স্তরের লোক, তারাই কসমোপোলাইটের ভূমিকা পালন করার সুযোগ বেশি পান। তবে মাঝে মাঝে নিম্ন স্তরেররাও সুযোগ পান। নিম্নস্তরের যারা থাকেন, তারা পরিকল্পনা তথ্য বাস্তবায়নের সুযোগ পান না, কিন্তু যারা উচু স্তরের, তারা এ সুযোগ পান।
222
৬ . আইসোলেট (Isolate)
কোনো একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সদস্যদের সাথে যদি ওই সিস্টেম এর অন্যান্য সদস্যদের কোনো যোগাযোগ না থাকে, তবে তাকে আইসোলেট বলা হয়। অন্যভাবে একটা যোগাযোগ সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি, যে তার লোকের সাথে যোগাযোগ করে না এবং অন্যরা তার সাথে যোগাযোগ করে না, সেটাই হল আইসোলেট। তথ্য প্রবাহে তার তেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না।

এখানে M হল আইসোলেট
No comments