যোগাযোগ পরিকল্পনা কী | যোগাযোগ পরিকল্পনার বিভিন্ন ধরন

যোগাযোগ পরিকল্পনা কাকে বলে? যোগাযোগ পরিকল্পনার বিভিন্ন ধরন

.
কোন কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্য পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। বলা হয়, যোগাযোগ পরিকল্পনা হচ্ছে একটি শিল্পের মতো, এটি হচ্ছে এমন একটি শিল্প যেখানে সুচিন্তিত, সুসংগঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে যোগাযোগ মাধ্যম সমূহের উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়। এই পরিকল্পনার মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যমের টার্গেট অডিয়েন্স, বার্তা, বার্তা প্রচারের সময়, উপায় এসব বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়।



যোগাযোগ পরিকল্পনা
যোগাযোগ পরিকল্পনা কী তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে পরিকল্পনা কী। আমরা জানি, অনেক ভাল বিকল্পের মধ্য থেকে সর্বোত্তম বিকল্প টি বেছে নেওয়ার পদ্ধতি ই হল পরিকল্পনা। এই পদ্ধতি অবশ্যই লক্ষ্য কেন্দ্রিক ভাবে পরিচালিত হয়।

পরিকল্পনার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Walterson বলেছেন, পরিকল্পনা হল কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিকল্প সমূহ থেকে সর্বোত্তম টি বেছে নেওয়ার সচেতন, সংগঠিত ও চলমান প্রক্রিয়া।



Fciludi পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন- planning is a process for determining appropriate fur action through or sequence of choices.
.
যোগাযোগ পপরিকল্পনা সম্পর্কে বলা যায়, যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাই যোগাযোগ পপরিকল্পনা।

যোগাযোগ পরিকল্পনা

যোগাযোগ পপরিকল্পনা সম্পর্কে clayton Vollan এবং Jim Simmons তাদের Development Communication : A Resource Manual for Teaching গ্রন্থে বলেন –
Communication planning is an indispensible requirement in a country’s usage of its communication Resources and an integral part of any planning process.

পরিশেষে বলা যায়, যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাই যোগাযোগ পপরিকল্পনা। যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার এবং যোগাযোগ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়।


যোগাযোগ পপরিকল্পনার রূপ বা প্রকৃতি

যোগাযোগ পপরিকল্পনার দুটি রূপ বা প্রকৃতি রয়েছে। যথা –


যোগাযোগ অবকাঠামো পরিকল্পনা


রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি হচ্ছে যোগাযোগের অবকাঠামোগত দিক। আর এসকল অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা হচ্ছে যোগাযোগ অবকাঠামোগত পরিকল্পনার


যোগাযোগ কার্যক্রম পরিকল্পনা 


যোগাযোগেেে কাজের মধ্যে রয়েছে বার্তা এবং অন্যান্য আধেয়ের ব্যবহা। আর এগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে একটি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে পরিকল্পনা করা হয় তাই যোগাযোগ কার্যক্রম পরিকল্পনা। একে Development Communication বলে

যোগাযোগ পপরিকল্পনার ধরন


বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যোগাযোগ পপরিকল্পনার বিভিন্ন ধরন লক্ষ্য করা যায়। নিন্মে এগুলো আলোচনা করা হল –
যোগাযোগ গ্রহণের গতির দিক থেকে যোগাযোগ পপরিকল্পনা দু ধরনের হয়ে থাকে। যথা –

. হঠাৎ পরিকল্পনা

২. ধীরস্থিরভাবে পরিকল্পনা


১.হঠাৎ পরিকল্পনা


কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে এ ধরনের পরিকল্পনা করা হয়। পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কর্মলক্ষ্য অর্জনের জন্য দ্রুত বা স্বল্প সময়ের মধ্যে এ পরিকল্পনা গৃহীত হয়। যেমন- দূর্যোগকালীন সময়ে জনগণকে দ্রুত তথ্য দেওয়ার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা করা হয়।


২. ধীরস্থিরভাবে পরিকল্পনা


যেসব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা সময় নিয়ে করা যায়, সে সব ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ বা সময় সীমার মধ্যে এ পরিকল্পনা করতে হয়। তাই একে মেয়াদি বা নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা বলা যায়।
উদাহরণস্বরূপ – তথ্য মন্ত্রণালয় দেশের সকল বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম কে আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিল। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা হবে ধীরগতির।

উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে যোগাযোগ পপরিকল্পনা তিন ধরনের হয়। যথা –


১. উলম্ব পরিকল্পনা
২. আনুভূমিক
পরিকল্পনা
৩. চক্রাকার
পরিকল্পনা

১. উলম্ব যোগাযোগ পপরিকল্পনা


উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে অধস্তন কর্তৃপক্ষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য যে পরিকল্পনা করা হয় তাই উলম্ব যোগাযোগ পপরিকল্পনা। অর্থ্যাৎ, যাদের জন্য যোগাযোগ পপরিকল্পনা করা হয় এখানে তাদের অংশগ্রহণ থাকে না।

২. আনুভূমিক যোগাযোগ পপরিকল্পনা


যাদের জন্য পরিকল্পনা তাদের অংশগ্রহণ এ ধরনের

পরিকল্পনায় থাকে। এটি নিচু থেকে উপরের দিকে যায়। যেমন- বেসরকারি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নিজেদের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য পরিকল্পনা নিলে তা হবে আনুভূমিক যোগাযোগ পপরিকল্পনা।

৩. চক্রাকার যোগাযোগ পপরিকল্পনা


চক্রাকার যোগাযোগ পপরিকল্পনা হচ্ছে উলম্ব এবং আনুভূমিক পরিকল্পনার সমন্বিত রূপ। অর্থ্যাৎ, যাদের জন্য পরিকল্পনা হবে তাদেরকে এ ধরনের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি যারা পরিকল্পনা করেন তারাও যৌথভাবে অংশগ্রহণন করেন। যেমন- ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য BTRC এবং বেসরকারি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের নেওয়া যৌথ পরিকল্পনা।


কেন্দ্রের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা দু ধরনের। যথা-


১. কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ
২. বিকেন্দ্রীভূত যোগাযোগ

কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ পপরিকল্পনা


কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা প্রান্তীয় এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ধরনের পরিকল্পনা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে। একে সক্রিয় বা বাধ্যতামূলক যোগাযোগ পপরিকল্পনাও বলা হয়। যেমন – তথ্য মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা নিল যে সকল বেসরকারি টিভিকে বাধ্যতামূলক বিটিভির ধারণকৃত সংবাদ প্রচার করতে হবে।


২. বিকেন্দ্রীভূত যোগাযোগ পপরিকল্পনা


এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কোন হস্তক্ষেপ করেনা। শুধু প্রান্তীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ে কিছু নির্বাচিত অনুরোধ রাখে। এই পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক নয়। যেমন – বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিজ্ঞাপন দেখানোর পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে। ধরা যাক, তথ্য মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানালো বিজ্ঞাপন দেখানোর পরিমাণ যেন দিনে তিন ঘন্টার বেশি না হয়।

Communication Planning an integrated approach বই তে S D Ferguson পাঁচ ধরনের পরিকল্পনার কথা বলেন।

যথা –
1. Strategic Plans (কৌশলগত পরিকল্পনা)
2. Operational Plans(পরিবর্তনশীল পরিকল্পনা)
3. Work Plans (কার্যগত পরিকল্পনা)
4. Support Plans (সমর্থনমূলক পরিকল্পনা)
5. Crisis Communication Plans(সংকটকালীন পরিকল্পনা)

No comments

Powered by Blogger.