কপিরাইট আইন ২০০০ । Copyright Act 2000 । CAJ Academy

 কপিরাইট আইন Copyright Act 2000 


কপিরাইট

কপিরাইট হল একটি আইন যা লেখা কন্টেন্ট ,ছবি ,সফটওয়্যার কিংবা যে কোনো জিনিস এর লেখক ,প্রকাশক বা মূল মালিকের স্বত্ত্ব বা অধিকার সংরক্ষণ করে । যা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া কেউ যদি ব্যক্তিগত কাজে অথবা অন্য কোন কাজে সরাসরি কপি করে ব্যবহার করেন তবে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন হবে এবং তিনি শাস্তি পাবেন ।


সৃষ্টিশীল মানুষ দুই ধরনের সম্পদ নিয়ে জীবনযাপন করেন । একটি বস্তুগত সম্পদ- জায়গা-জমি ,গাড়ি-বাড়ি , টাকা ,ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যটি হলো মেধা সম্পদ; যেমন- সাহিত্যকর্ম ,নাট্যকর্ম,শিল্পকর্ম,সঙ্গীত,অডিও-ভিডিও,ফটোগ্রাফি ইত্যাদি । মানুষের বস্তুগত সম্পদ যেমন , কেউ প্রকৃত মালিকের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারে না মেধা সম্পদও তাই ।কিন্তু মেধা সম্পদের রক্ষায় মানুষ বা কর্তৃপক্ষ ততটা সচেতন ও কর্তব্যপরায়ন নয় । যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সৃজনীকর্মটির প্রকৃত মালিক ।

মেধা সম্পদের ব্যবস্থাপনার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত কপিরাইট ।  ইংরেজি Copyright শব্দটিতেই এর মূল অর্থ লুকিয়ে আছে , যা হলো Copy এবং Right বা অনুলিপি করার অধিকার । অর্থ্যাৎ সকল ধরনের সৃষ্টিশীল কর্মই কর্মের স্রষ্টা বা রচয়িতার অনুমতি ছাড়া কপি বা পুনরুৎপাদন করা বা অভিযোজন করা , বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত,যে পর্যায়েই হোক না কেন তা কপিরাইট ধারণা । আন্তর্জাতিক আইন,আন্তর্জাতিক চুক্তি,দেশীয় আইন, নৈতিকতা ও ইতিবাচকতার চরম পরিপন্থী ।


সারা বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে কপিরাইট ব্যবস্থাপনারও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কপিরাইটের গুরুত্ব অনুধাবন করা হচ্ছে । যার ফলে ২০০০ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট আইন প্রণয়ন করা হয় । এবং ২০০৫ সালে এটি যুগোপযোগী সংশোধন করা হয় ।  আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ কপিরাইট আইনের ১০৩ ধারার বিধিমতে কপিরাইট রুলস ২০০৬ প্রণয়ন করা হয় ।





কপিরাইট আইন  ২০০০ : 

কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সংশোধিত) বর্তমানে বাংলাদেশে চালু আছে । এই আইনে সর্বমোট ১৭টি অধ্যায় ও ১০৫ টি ধারা বিদ্যমান । এতে কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত অপরাধ, অপরাধের ধরন এবং তার বিপরীতে শাস্তির বিধানাবলী বর্ণনা করা হয়েছে ।


কোন কোন ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন প্রযোজ্য : 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলচ্চিত্র,আলোকচিত্র, আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কপিরাইট লঙ্ঘিত হচ্ছে । বইপুস্তক- সকল প্রকার বই ,নাটক, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, বিশ্বকোষ,গেজেট , সাময়িকী , সঙ্গীত,নৃত্য,মুকাভিনয়,চলচ্চিত্র,আলোকচিত্র,শিল্পকর্ম, ড্রয়িং, নকশা মডেল, ছবি, রেকর্ড, সব ধরনের গান, আবৃত্তি, নাটক, সাহিত্যকর্ম, কম্পউটার সফটওয়্যার ইত্যাদি ।


সৃষ্টিশীল সম্পদ

১. রচনা,ছাপা,অনুলিপি তৈরি করা হলে 

২. পরিবর্তন করে নিজ নামে প্রচার করা 

৩. ব্যবসার উদ্দেশ্যে তা  ব্যবহার করা  

৪. অর্থ উপার্জনের জন্য তা বিক্রয় করা  

৫. ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা 

৬. অন্যের সৃষ্টিকর্ম আত্মসাৎ করা হলে, 

কপিরাইট বা গ্রন্থস্বত্ব আইনঅনুযায়ী শাস্তির বিধান করা হবে ।


কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহ (কপিরাইট আইন ২০০০)


ধারা-১ : নাম,প্রয়োগ,প্রবর্তন 

 ধারা -২ : সংজ্ঞা :

 বিভিন্ন বা সকল ধরনের শিল্পকর্মের পরিচিতি যেগুলো কপিরাইট আইনের আওতায় আসবে । 

ধারা-৩ : 

জনসমক্ষে সাহিত্যকর্মের আবৃত্তি , যোগাযোগ, সাহিত্য, শিল্পকর্মের সম্প্রচার প্রকাশনা অর্থে অন্তর্ভুক্ত হবে না । 

অধ্যায় ৪ - (১৭-২৩ ) :

 কপিরাইটের স্বত্ত্ব এবং মালিকদের অধিকার, প্রথম স্বত্বাধিকারী । 

ক) চাকুরী বা শিক্ষানবিশী চুক্তির অধীন সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বা সাময়িকীর মালিকের চাকুরীতে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় কোন সাহিত্যকর্ম বা শিল্পকর্ম প্রকাশিত হলে (মালিকের যদি ভিন্নরুপ কোন চুক্তি না থাকে ) যতটুকুর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ততখানির প্রথম স্বত্ত্বাধিকারী হবে ।


খ), ক অনুযায়ী , কোন ব্যক্তির উদ্যোগে এবং অর্থের বিনিময়ে ফটোগ্রাফ নেয়া, ছবি বা প্রতিকৃতি আঁকা ,খোদাই কাজ বা চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ক্ষেত্রে (ভিন্নরুপ কোন আইন না থাকলে ) প্রথম স্বত্বাধিকারী হবেন ।


ঘ) জনসমক্ষে প্রদত্ত বক্তৃতা বা বিবৃতি প্রদান বা কারো পক্ষে বক্তৃতা দিলে, যার বক্তৃতা তিনি প্রথম স্বত্ত্বাধিকারী । 

ঙ) সরকারী কর্মের প্রথম স্বত্ত্বাধিকারী সরকার 

চ. স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা নিয়ন্ত্রণে প্রকাশিত কর্মের স্বত্ত্বাধিকরী উক্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ । 

ছ) ধারা ৬৮, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রথম স্বত্ত্বাধিকারী 

জ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে উক্ত প্রেগ্রাম সম্পন্ন করার জন্য ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান প্রথম অধিকারী ।


অধ্যায় ৫ (২৮-৩২) কপিরাইটের মেয়াদ  

ধারা ২৪ :  

কপিরাইটের মেয়াদ (ফটোগ্রাফ বাদে )  প্রণেতার মৃত্যুর ৬০ বছর পর্যন্ত । ফটোগ্রাফের ক্ষেত্রে ৬০ বছর । আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মের মেয়াদ ৬০ বছর । 

সম্প্রচার পুনরুৎপাদনের অধিকার : এরূপ কর্মের মেয়াদ সম্প্রচারের পরবর্তী বছরের শুরু থেকে ২৫ বছর ।


ধারা ৪৮ : কপিরাইটের স্বত্ত্বাধিকারী প্রদত্ত লাইসেন্স

 স্বত্ত্বাধিকারীকে লাইসেন্স প্রদান করা  হবে । ব্যক্তির কর্মচারীকে নয় । কপিরাইট বোর্ডের অনুমোদন ক্রমে কপিরাইট  অফিস থেকে লাইসেন্স  দেওয়া হবে ।


ধারা ৫৫ : কপিরাইটের রেজিস্ট্রার ,ইনডেক্স, ফরম এবং  রেজিস্ট্রার পরিদর্শন ।

 কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি এবং ট্রেজারি চালান, কর্মের দুই কপি নমুনা সহ নির্ধারিত ফরমে রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটের নিকট আবেদন করতে হবে । ফরমে কর্মের নাম, শিরোনাম, প্রকাশক, স্বত্ত্বাধিকারীর নাম ঠিকানা অন্যান্য তথ্য থাকবে । 


ধারা ৭১: কপিরাইট লঙ্ঘন : 

কপিরাইট আইনের ৭১ ধারার বিধান মতে নিম্মলিখিত কারণে কোন কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে বলে গণ্য হবে ।

ক) যখন কোন ব্যক্তি এ আইনের অধীন কপিরাইটের মালিক বা রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত বা অনুরুপভাবে প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্ত বা এ আইনের অধীন কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত কোন শর্ত লঙ্ঘন পূর্বক -

১) এমন কিছু করেন যা করার একচেটিয়া অধিকার এ আইন দ্বারা কপিরাইটের মালিককে দেয়া হয়েছে । অথবা,  

২) অবগত না থাকার এবং সন্দেহের কোন যুক্তিসংগত কারণের অনপস্থিতিতে মুনাফার উদ্দেশ্যে জন সাধারণ্যে এমন কোন কর্ম সম্পাদনের জন্য কোন স্থান ব্যবহারের অনুমতি দেন যাতে কমিটির কপিরাইট লঙ্ঘন করে । যদি না এটা প্রমাণ করা হয় যে, বিষয়টি সম্মন্ধে তিনি অবগত ছিলেন না বা অনুরূপ সম্পাদন কপিরাইটের লঙ্ঘন হবে মর্মে বিশ্বাস করার তার কোন যুক্তিসংগত কারণ ছিল না ।


খ) যখন কোন ব্যক্তি 

১. কর্মটির অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি বিক্রয় বা ভাড়া করেন বা বিক্রয় বা ভাড়া করান বা বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনী করেন বা বিক্রয়ের কিংবা ভাড়ার প্রস্তাব করেন । 

২. বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অথবা কপিরাইটের মালিকের অধিকার  ক্ষুন্ন হয় এরূপ পরিসীমায় বিতরন করেন । 

৩. বাণিজ্যিক ভাবে জনসাধারণ্যে প্রদর্শন করেন 

৪. কোন কর্মের অধিকার লঙ্ঘিত অনুলিপি আমদানি সংক্রান্ত বাংলাদেশে আমদানি করেন ।


ধারা ৭৫-৮১ : দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের প্রতিকারের বিধান ।

 কপিরাইট লঙ্ঘনের বিষয়ে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয়ক্ষেত্রে প্রতিকার পাবার বিধান রয়েছে । দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতিপূরণ আদায় ইত্যাদি এবং ফৌজদারি আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানা সংক্রান্ত শাস্তির বিধান রয়েছে ।


কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি অধ্যায় ১৫ :

 ধারা ৮২ : 

কপিরাইট রা অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধ 

ক) চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডের বিধান । তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ম শাস্তি- হলো এক বছরের কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড । 

খ) চলচ্চিত্র ব্যতিরেকে কোন কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য অনূর্ধ চার বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বিধান রয়েছে । তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তি ছয় মাস মেয়াদের কারাদন্ড ও অনুর্ধ দুই লাখ টাকা কিন্তু সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের বিধান ।


ধারা ৮৪ :কম্পিউটার প্রোগ্রামের কপি অনুলিপি করলে

 চার বছরের অর্থদন্ড সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা অর্থদন্ড সর্বনিম্ন ছয় মাস কারাদন্ড  , এক লাখ টাকা অর্থদন্ড । 


প্রতিকার : 

১. দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রতিকার চায়তে পারেন । 

২. অনুলিপিসমূহ কর্তৃপক্ষ জব্দ করতে পারে । 

৩. ফৌজদারি বিচার দায়রা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণ ও নিষেধজ্ঞা । 

৪. অধ্যায় ১৫ এর শাস্তি সমূহ

No comments

Powered by Blogger.