বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম । বক্তব্য দানে প্রস্তুতির ধাপ

বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম । বক্তৃতা দানে প্রস্তুতির ধাপ

একটি বক্তব্যের মাধ্যমে একজন বক্তার সাথে সমবেত জনগনের সরাসরি যে যোগাযোগ হয় তা-ই জনযোগাযোগ বা Public Communication. সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জনযোগাযোগ হয়ে থাকে।

Human Communication বইতে Joeph A Devito বলেন,

“Public speaking may be defined as that form of communication in which a speaker addresses a relatively large audience with a relatively continuous, discourse, usually in a face to face situation.”

উদাহরণ: জনসভা, মঞ্চনাটক, শ্রোতামন্ডলীর সামনে আবৃত্তি সবই জনযোগাযোগ।

এছাড়া শ্রেণীকক্ষে একজন ছাত্র যদি একটি বিষয়ের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করে বা শিক্ষক যখন একটি বিষয় (যেমন: ডিএনএ-র গঠন) নিয়ে আলোচনা করেন, বা একজন রাজনীতিবিদের প্রচারাভিজান মূলক বক্তব্য অর্থাৎ, রাজনৈতিক জনসভা, সেমিনার, সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবই জনযোগাযোগ।

জনযোগাযোগের বৈশিষ্ট্য

কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে আমরা জনযোগাযোগকে অন্যান্য যোগাযোগ থেকে আলাদা করতে পারি। বৈশিষ্ট্যগুলাও হল-

→ জনযোগাযোগে একজন বক্তা থাকে। তার ভূমিকা অপেক্ষাকৃত বা আপাতঃ প্রধান হয়ে থাকে।

→ কোনো একটি বিষয়ের উপর বক্তার একটি বড় ধরনের বক্তব্য থাকে।

→ জনযোগাযোগ একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় সংঘঠিত হয়।

→ জনযোগাযোগে ফলাবর্তন গণযোগাযোগের মত বিলম্বিত নয়। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মত তাৎক্ষণিকও নয়।

বক্তৃতা দানে প্রস্তুতির ধাপ Steps in preparing a public speech

বক্তা নিজেকে জনযোগাযোগে সফল করার জন্য প্রস্তুত করে নেওয়াই হল জন বক্তৃতা ( public speech)এর প্রস্তুতি। জনযোগাযোগকে কার্যকর করার জন্য কয়েকটি ধাপে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। ধাপগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-

১) বক্তব্যের বিষয় ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Select the Subject and Purpose)

২) শ্রোতা বিশ্লেষণ (Analysis the Audience)

৩) বিষয়ের গবেষণা (Research the Topic)

৪) গবেষণা লিপিবদ্ধ করা এবং প্রধান দিকগুলো সনাক্ত করা (Formulate the Thesis and Identify the Major Propositions)

৫) প্রধান বিষয়গুলোর প্র‍তি জোর দেওয়া (Support the Major Propositions)

৬) বক্তব্যের উপাদানগুলো সুসংগঠিত করা ( Organize the Speech Materials)

৭) ভাষা সচেতনতা/বক্তব্যের ভাষাকে কথনপ্রণালীতে রূপদান (Wording the Speech)

৮) উপসংহার এবং ভূমিকা প্রস্তুতি (Construct the Conclusion and the Introduction)









বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

১) বক্তব্যের বিষয় ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Select the Subject and Purpose)

যে বিষয়ে বক্তব্য দেয়া হবে প্রথমে সেটি নির্বাচন করতে হবে। তবে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বিষয়টি মৌলিক কিনা ৷ এমন একটি বিষয় নির্ধারণ করতে হবে যাতে বক্তা ও শ্রোতা উভয়ের মধ্যে একটি সাদৃশ্য থাকে এবং উভয়ের জন্য বিষয়টি মজাদার ও মনোমুগ্ধকর হয়। বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয় নির্বাচন করলে যোগাযোগ ফলপ্রসু হবে।
সাধারণত বক্তব্য দু’ধরনের হয়ে থাকে, যথা-


ক. তথ্যমূলক বা Informative
খ. প্ররোচনামূলক বা Persuasive

ক) তথ্যমূলক

তথ্যমূলক বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল জনগনকে তথ্য অবহিত করা। যার মাধ্যমে জনগণ জ্ঞান লাভ করবে। তথ্যমূলক বক্তব্যের বিশেষ উদ্দেশ্য হল একটি বিষয়ের বিশেষ দিক তুলে ধরা।
যেমন- কম্পিউটার সম্পর্কিত বক্তৃতায় কম্পিউটারের যন্ত্রপাতির বর্ণনা ও এর গুণাবলী তুলে ধরা হয়।

খ) প্ররোচনামূলক

এরূপ বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল বক্তা যেন শ্রোতার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রদত্ত বক্তব্য গ্রহণ করে। অর্থাৎ, এরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে বক্তার ধারণাগুলো শ্রোতার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়৷
যেমন- হরতাল সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করলে বক্তা তার দৃষ্টিভঙ্গির আদলে হরতালের ইতিবাচক দিকগুলো শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করে।

২) শ্রোতা বিশ্লেষণ (Analysis the Audience)

বক্তব্য পেশ করার ক্ষেত্রে একজন বক্তাকে শ্রোতার মনঃস্তাত্ত্বিক দিকটা বিবেচনায় রাখতে হবে। শ্রোতামণ্ডলী কি কি বিষয়ে অবগত আছেন, কোন কোন বিষয়ে তারা জানতে বেশি আগ্রহী, তারা কী ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন, তাদের মতামত, মনোভাব ও বিশ্বাস কি ধরনের, বক্তব্যের বিষয়ে তাদের অবস্থান কোথায়– এসব বিষয়ে বক্তার ধারণা থাকতে হবে। একটি আদর্শ বক্তব্য তৈরি করার জন্য বক্তাকে দর্শক-শ্রোতার নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে-

ক. বয়স

বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বক্তব্য পেশ করার সময় বক্তাকে মাথায় রাখতে হবে বক্তব্যটি বয়স অনুযায়ী শ্রোতামন্ডলির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা। একটি বক্তব্য যদি সব বয়সের ব্যক্তির কাছে উপস্থাপনের যোগ্য হয়, তবু বয়স এবং অবস্থান ভেদে উপস্থাপন বিভিন্ন রকম হয়। অর্থাৎ, সাধারণ জনগণের সামনে একরকম, বুদ্ধিজীবীদের সামনে অন্যরকম, ছাত্রদের কাছে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়।

খ. লিঙ্গ

অনেক সময়ই দেখা যায় একই বিষয় নিয়ে নারী ও পুরুষ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। বক্তাকে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। বক্তব্যটি যেন একপাক্ষিক না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গ. দেশ, আয় ও সামাজিক মর্যাদা

শ্রোতা বিশ্লেষণের সময় তাদের আয়, পেশা এবং সামাজিক মর্যাদা বক্তব্যে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এ বিষয়গুলো একজন বক্তাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

ঘ. ধর্ম ও ধার্মিকতা

শ্রোতার ধর্ম সম্পর্কে বিশ্বাস হালকা না গাঢ় তা দেখতে হবে। তাদের ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিটি নির্বাচিত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিনা তা বক্তাকে বিবেচনা করতে হবে।

ঙ. প্রেক্ষিত

এখানে প্রেক্ষিত বলতে ভৌত অবকাঠামোগত বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, শ্রোতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের ব্যবস্থা আছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

চ. অন্যান্য বিষয়

অন্যান্য বিষয় যেমন শ্রোতার ইচ্ছাশক্তি, ইতিবাচক মনোভাব, এবং জ্ঞানের গভীরতা বিবেচনা করে বক্তব্য পেশ করতে হবে। বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

আরো জানুন…. জনযোগাযোগ সম্পর্কিত সকল আর্টিকেল পেতে এখানে ক্লিক করুন

৩) বিষয়ের গবেষণা (Research the Topic)

যদি বক্তা ও শ্রোতা উভয়ে বক্তব্য থেকে উপকৃত হতে চায় তাহলে বক্তব্য প্রদানের পূর্বে বিষয়টির উপর গবেষণা করা প্রয়োজন। তাই তথ্যবহুল বক্তব্য প্রদান করতে হলে বিষয়টি সম্পর্কে আর্টিকেল বা ম্যাগাজিন পড়তে হবে। এ বিষয়ে অতি সম্প্রতি কোনো তথ্য জার্নাল, ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া যেতে পারে।

৪) গবেষণা লিপিবদ্ধ করা এবং প্রধান দিকগুলো সনাক্ত করা (Formulate the Thesis and Identify the Major Propositions) বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

যে বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া হবে সেটা হচ্ছে থিসিস ৷ আর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলে তা হল proposition বা বিবৃতি।


যেমন- মানুষের রক্তে চারটি উপাদান থাকে– এটি হল থিসিস। আর উপাদান সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয় তা হল proposition বা বিবৃতি। থিসিস অর্থাৎ প্রসঙ্গের মূল ধারণা থেকে বিবৃতি তৈরি হয়।


আবার, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা হচ্ছে থিসিস। তা কেন ভাল, কেন মূল্যবান, কি কি সুবিধা ইত্যাদি হল বিবৃতি।অর্থাৎ,

1st proposition– বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ভাল চাকরীর সম্ভাবনা তৈরি হয়।

2nd proposition– বেতন বেশি পাওয়া যায়।

3rd proposition– চাকরী ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।

4rd proposition– বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটে।

5th proposition– সামাজিক মূল্যায়ন বৃদ্ধি পায়।

6th proposition– খ্যাতিসম্পন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়।

7th proposition– অভিজ্ঞতার পরিসর অনেক বৃদ্ধি পায়।

৫) প্রধান বিষয়গুলোর প্র‍তি জোর দেওয়া (Support the Major Propositions)

Proposition গুলো চিহ্নিত করার পর এ স্তরে এসে proposition গুলোকে জোরদার বা সমর্থন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ভাল চাকরি পাওয়া যায় এই proposition টি প্রমাণ করার জন্য বক্তাকে কিছু যুক্তি বা পরিসংখ্যান দেখাতে হবে।


যেমন- গত পাঁচ বছরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সংক্রান্ত চাকরির একটি জরিপ দেখলে দেখা যায়, ৬০% চাকরি পেয়েছে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে, ২০% পাশ করেছে যারা কলেজ থেকে পাশ করেছে। বাকী ২০% চাকরি পেয়েছে যারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছে। জরিপটা হতে পারে কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষণা।


তথ্যমূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে কোন একটি ধারণাকে বিস্তৃত করা হয়। বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে বর্ণনা, চিত্র, সংজ্ঞা, উদাহরণ থাকে।


আবার প্ররোচনামূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট উদাহরণ, যুক্তি, প্রেরণাদায়ক (একটা কাজ করলে আপনার আত্মসম্মানবোধ বেড়ে যাবে) বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনঃস্তাত্ত্বিক ব্যাপারকে নাড়া দেওয়া।


যেমন- উচ্চশিক্ষিত না হলে সামাজিক মর্যাদা থাকেনা, ইত্যাদি।

৬) বক্তব্যের উপাদানগুলো সুসংগঠিত করা ( Organize the Speech Materials)

বক্তা যদি শ্রোতাকে বক্তব্য শোনাতে বা মনে রাখাতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আগে গুছিয়ে সুসংগঠিত করে রাখতে হবে। বক্তব্যের কাঠামোকে সুসংগঠিত করতে ৬টি প্যাটার্ন ব্যবহার করতে হবে। নিম্নে তা আলোচনা করা হল-

i) কালানুক্রমিক প্যাটার্ন (Time Pattern)

বক্তব্যকে কালানুক্রমিকভাবে সাজানো বোঝায়। সাধারণত ঐতিহাসিক বিষয়গুলো এ প্যাটার্নে হয়।
যেমন, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য সাধারণত ১৯৪৭ থেকে শুরু করা হয়।

ii) দুরত্বসংক্রান্ত প্যাটার্ন (Spatial Pattern)

সাধারণত তথ্যমূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে এ প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়। হাসপাতাল, স্কুল, ডাইনোসরের গঠন এবং কোনো দেশ ভ্রমণ বক্তব্যে স্থান সংক্রান্ত প্যাটার্ন অনুসৃত হয়।

iii) প্রসঙ্গোচিত প্যাটার্ন (Topical Pattern)

এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও বেশি ব্যবহৃত প্যাটার্ন। একটি সামগ্রিক বিষয়কে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে আলোচনা করা হয়।


যেমন- একটি রাষ্ট্র কিভাবে কাজ করে এমন বক্তব্য দিতে গিয়ে বক্তব্যকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে এক একটি প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয় ৷ অর্থাৎ রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়।

iv) সমস্যা-সমাধান প্যাটার্ন (Problem Solution Pattern)

এটি সাধারণত প্ররোচনামূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এখানে দুইটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়। পরে সে সমস্যাগুলোর সমাধান তুলে ধরা হয়।

v) কারণ-প্রতিক্রিয়া প্যাটার্ন (Cause-Effective Pattern)

প্ররোচনামূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে এ প্যাটার্ন ব্যবহৃত হয়। প্রথমেই ফলাফল, তারপর কারণের দিকে যাওয়া হয়।

vi) অনুপ্রাণিতকরণ ক্রম (The Motivated Sequence)

এমনভাবে তথ্যগুলো সাজানো থাকে যাতে বক্তব্য শ্রোতার মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে। তথ্যমূলক ও প্ররোনামূলক উভয় ক্ষেত্রেই এটি উপযুক্ত। এক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ রয়েছে-

ক. মনযোগ

এমনভাবে বক্তব্য দিতে হবে যাতে শ্রোতা বক্তব্য শোনার জন্য দৃঢ় মনযোগী হয়। বক্তব্যে এমন তথ্য দিতে হবে যাতে শ্রোতা শোনার জন্য ব্যাকুল থাকে।

খ. প্রয়োজনীয়তা

যে বিষয়টির উপর বক্তব্য দেয়া হবে সে বিষয়টির যে চাহিদা বা প্রয়োজন আছে তা শ্রোতার কাছে প্রমাণ করতে হবে।

গ. সন্তুষ্টি

বিষয়টি সম্পর্কে শ্রোতার চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারগুলো শ্রোতার কাছে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন শ্রোতা সন্তুষ্ট থাকে।

ঘ. দৃশ্যায়ন

দৃশ্যায়ন বলতে কোনো কিছু মনের চোখ দিয়ে দেখা বোঝায়। মনঃস্তাত্ত্বিক ধারা এমনভাবে বর্ণনা করা যাতে শ্রোতা স্থান কাল থেকে দূরে চলে যেতে পারে। শ্রোতার মধ্যে বিশ্বাস ও অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

ঙ. সক্রিয়তা

বক্তাকে এমন কিছু উল্লেখ করতে হবে যাতে শ্রোতা বিষয়টির প্রয়োজনীয়তায় সন্তুষ্ট থাকে। এর জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান ও জার্নাল, বই পড়ার জন্য শ্রোতাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

৭) ভাষা সচেতনতা/বক্তব্যের ভাষাকে কথনপ্রণালীতে রূপদান (Wording the Speech)

বক্তব্যের মূল কথাগুলো এবং যেসব উপাদানের সাহায্যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে সেগুলোর ভাষা এমন হতে হবে যেন শ্রোতারা তা তাৎক্ষণিক বুঝতে পারে। শ্রোতারা একবারই বক্তার বক্তব্য শুনবে। কাজেই সবকথা অত্যন্ত সহজভাবে, সহজ ভাষায় বলতে হবে, যাতে শ্রোতা সহজে শুনতে এবং বুঝতে পারে। এজন্য বক্তাকে নিম্নোক্ত বিষয়ে মনযোগী হওয়া প্রয়োজন-

ক. স্বচ্ছতা (Clarity)

স্বচ্ছ কথা বলা বক্তৃতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অর্জন। বক্তব্য স্বচ্ছ করার জন্য নিম্নে কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হল-

মিতব্যয়ীতা

শব্দের অপচয় যেন না হয়, পুনরুক্তি ও অর্থহীন শব্দ ব্যবহারে বিরত থাকতে হবে।
যেমন- সবাই মিলে এক সাথে, সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ প্রতিবেদন ইত্যাদি পুনরুক্তি বাদ দিতে হবে।

বৈচিত্র

কোন ধরনের শব্দ শ্রোতার মনে প্রাণবন্ততা সৃষ্টি করবে, সে ধরনের শব্দ দিয়ে বৈচিত্র আনতে হবে।

অনুপ্রাস: যে সকল শব্দ একই অক্ষরে বা উচ্চারণে আরম্ভ হয়, তা ব্যবহার করা।

অতিশয়োক্তি: বক্তব্যে অতিশায়োক্তি, অলংকার ব্যবহার করা যেতে পারে।

রূপক: রূপক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিশেষণ: নামের ক্ষেত্রে বিশেষ অলংকার দিয়ে বিশেষায়িত করা যেতে পারে।

দৃশ্যায়িত উপমা: শ্রোতা যা সামনে দেখে তা সম্পর্কে উপমা দেওয়া।

৮) উপসংহার এবং ভূমিকা প্রস্তুতি (Construct the Conclusion and the Introduction) বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

দীর্ঘ বক্তৃতার ক্ষেত্রে অনৈকট্য, সময় ধরে নানা কথা বলা হয়ে থাকে। তাই উপসংহারে পুরো বক্তব্যের কেন্দ্রীয় সুর ফুটিয়ে তুলতে হবে। অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বক্তব্যের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে।

বক্তব্যের সূচনা সম্পর্কে প্লেটো বলেছেন, “The beginning is the most important part of the work”. মূলত বক্তব্যের সূচনা হল প্রথমদিনের ক্লাসের মত। এর মাধ্যমে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সহজ। সূচনা এমন হতে হবে যাতে শ্রোতা বক্তা ও বক্তব্যকে স্বাগত জানায় এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

বক্তব্য শুরু করার নিয়ম প্রথমে শ্রোতার মনযোগ আকর্ষণের জন্য প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তারপর বক্তব্যের প্রাথমিক একটি ধারণা দিতে হবে। সেই সাথে আলোচনার ফলাফল কি হবে সে সম্বন্ধে একটু প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে।

সূচনার প্রধান কাজ দুটি-

→ শ্রোতামন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সেটা করা যায় বক্তব্যের বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে, মজার গল্প বলে, অপরিচিত ঘটনা বা পরিসংখ্যান তুলে ধরে।

→ সূচনা শ্রোতাদের আগ্রহী করবে এবং তাদের পুরো বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে।


লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.