নয়া মাধ্যম ও সাংবাদিকতা । New Media and Journalism । CAJ Academy

Marjan Akter

নয়া মাধ্যম ও সাংবাদিকতা New Media and Journalism


নি:সন্দেহে নয়া মাধ্যম সাংবাদিকতায় বিস্তর পরিবর্তন সাধন করেছে । পরিবর্তন করেছে এর সংগঠন, আধেয় ও দর্শক -শ্রোতার মনোভাব । সাংবাদিকতার সংগঠন বর্তমানে অনলাইনকে প্রাধাণ্য দেয় । সংবাদের গঠন ও দর্শকের চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে ।

জনপরিসরের পরিবর্তনের আলোচনায় Jurgen Harbermas সাংবাদিকতার ঐতিহাসিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন ।  বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সংবাদপত্রের প্রাধাণ্য ছিল। তারা ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতো । কিন্তু বিশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সাংবাদিকতার লক্ষণীয় পরিবর্তন হতে থাকে ।

২০০৯ সালের আগস্টের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে দৈনিক সংবাদপত্রের বিক্রয় ৪.৫ শতাংশ কমে যায় । ২০০৮ সালে ২৩ শতাংশ বিজ্ঞাপন আয় কমে যায় । 

আর এই সব পরিবর্তনের ধাপ বর্তমানে দৃশ্যমান। সাংবাদিক নতুন মাধ্যমকে ধারন করে  আবার মাথা জেগে উঠেছে । সাংবাদিকতাও তার পোশাক ও ধরন পরিবর্তন করেছে । সংবাদ প্রতিষ্ঠান গুলো খুঁজছে  সাংবাদিকতার নতুন ধরনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে এমন সাংবাদিক ।

সাংবাদিকতার সংকট :


 ১. সময় ও সাংবাদিকতা : 

সাংবাদিকতায় তাৎক্ষণিকতা আবশ্যাক তবে বর্তমানে অনুসন্ধানী ও গবেষণামূলক সব ধরনের সাংবাদিকতায় অত্যন্ত তাৎক্ষণিক প্রকাশের প্রবণতা রয়েছে । যার ফলে সংবাদের গুণগত মান কমে যায় ।

 

২. সাংবাদিকতা ও বাজার :

 সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে  । বন্ধ হয়ে গেছে অনেক নামীদামি সংবাদ প্রতিষ্ঠান । ২০০৯ সালে Boston Globe প্রতি সপ্তাহে ১ মিলিয়ন করে হারাচ্ছিল ।Gurdian  এর এক রির্পোটে দেখা যায় যুক্তরাজ্যের  ৫০ টি সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে । ২০০৮ সালে ১০ শতাংশ নিউজরুমের চাকরি হারিয়ে যায় । ২০০১ সালের পর যার পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ । অর্থ্যাৎ এই ২৫ থেকেই ১০ শতাংশ কমে যায় । নিউজ ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ২৪ শতাংশ বেড়ে যায় । মানুষ সংবাদপত্রের খরচ পরিশোধ করতে অপরাগতা প্রকাশ করে । সংবাদ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা খরচ কমানোর ধান্দায় একদম হারিয়ে যেতে থাকে ।


৩. সাংবাদিকতার স্বায়ত্বশাসন : 

সাংবাদিকতার উাচত তার স্বায়ত্ত্বশাসন রক্ষা করা এবং অন্যান্য পেশার মতো কাজ করতে সক্ষম হওয়া । সাংবাদিকতার প্রবেশ ও বাহির হওয়ার কিছু মূল সেট থাকা উচিত । নয়া মাধ্যমের কারণে স্বায়ত্ত্বশাসন ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে । কারণ, নয়া মাধ্যমে যে যার ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা প্রকাশ করে । আর এই স্বয়ত্ত্বশাসনের হ্রাস সাংবাদিকতা পেশাদার চরিত্রকে আঘাত করছে ।


৪. সাংস্কৃতিক স্থানান্তর  : 

ঐতিহাসিক ভাবে সকালে চা খাওয়ার সময় সংবাদপত্র পড়া ও বিস্তারিত পড়ার রীতি ছিল । অনলাইন মাধ্যম তা পরিবর্তন করে শুধুমাত্র শিরোনাম পড়ার সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে । সংবাদ গ্রহণের ধরন পরিবর্তন হয়েছে । 




ইন্টারনেট ও সাংবাদিকতা : 

 ইন্টারনেট মানুষ-সংবাদ-রাজনীতির সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করেছে । JO Bardoel(2020)  বলেন - ইন্টারনেট সাংবাদিকতার নতুন ধরন তৈরি  করবে । সাংবাদিকতার সাধারণ গুণাবলী পরিবর্তন করে নতুন ধারা তৈরি করবে ।

Pavlik(2001) এর মতে ইন্টারনেট সাংবাদিকতায় ৪টি দিকের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করছে । 

১. আধেয়,দক্ষতা,সংবাদ সংগঠন, 

২, নিউজরুম ,

৩. সম্পর্ক 

৪. কর্মী । 


সাংবাদিকতার পরিবর্তন : 


 ১. মিডিয়া সংগঠন :

  মিডিয়া সংগঠন অনলাইন সাংবাদিকতার প্রভাবে  এক কেন্দীয় বা কনভারজেন্স হয়ে পড়েছে ।নয়া মিডিয়া সংগঠন এবং মিডিয়া তথ্যের বা পণ্যের কনভারজেন্স করেছে । এখন প্রতিটি সংবাদপত্রের অনলাইন সাইট বা ব্রডকাস্ট সাইট রয়েছে । বর্তমানে প্রতিটি সংবাদপত্রে অডিও,ভিডিও,ছবি, কম্পিউটার মাধ্যমের ব্যবহার রয়েছে ।নয়া মিডিয়ার প্রভাবে সংবাদ প্রচার প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে এবং একাধিক কাজ একসাথে করা যাচ্ছে । মিডিয়া সংগঠনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয়েছে । সংবাদ সংগ্রহ ও উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে এত  সংবাদের বহুমুখিতা ঘটেছে ।


২. কনভারজেন্স :

 Write Once, Publish Everywhere অর্থ্যাৎ বহুমুখিতা বৃদ্ধি । সংবাদের উৎপাদন বন্টন ও ভোগে বহুমুখীতা লক্ষণীয় । এক বার লিখে বা উৎপাদন করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া বা বন্টন এবং এক ডিভাইসে ই দর্শক সব পাচ্ছে ।

 Saltzis এবং Dickinson(২০০৮)   খরচ ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে মিডিয়া সংগঠনের চারটি স্ট্র্যাটেজির কথা বলেছেন : 

১. প্রযুক্তি ও সাংগঠনিক মিশ্রণ । 

২. মাল্টি ওয়ার্কার বা দক্ষতা সমৃদ্ধ সাংবাদিক খোঁজা । 

৩. ব্যবহারকারীর অনুকূল প্রযুক্তি ব্যবহার 

৪. সব প্লাটফর্মে নিজেদের সম্প্রসারণ করা ।


৩. বহু দক্ষতা :

 সাংবাদিককে অনলাইন সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় নয়া মিডিয়ার দক্ষতা সমূহ অর্জন করতে হবে । সাংবাদিককে অনলাইনে সংবাদ পাবলিশ করার সফটওয়্যারগুলো পরিচালনা করতে জানতে হবে । প্রয়োজনীয় ছবি তুলতে হবে । অডিও এবং ভিডিওর মৌলিক সম্পাদনা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে । এছাড়া অনলাইন থেকে ছবি নিয়ে ব্যবহার এবং তা সম্পাদনা করার মৌলিক জ্ঞান থাকা অনলাইন সাংবাদিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।  


৪. আধেয় :

 প্রযুক্তির ব্যবহারে সকল ধরনের সংবাদে সময় ব্যবধান কমেছে । 

A. Hypertexuality : এক সংবাদের সাথে অন্য সংবাদের লিংক ।

B. Multi-Mediality অডিও, ভিডিও,ছবি,গ্রাফ সংবলিত সংবাদ ।

C. Interactivity : দর্শকের সাথে মিথস্ক্রিয়া ।

D. Collective Authority :  অনলাইনে সহজেই অন্য মাধ্যম থেকে সাহায্য নেয়া যায় । আবার কিছু ভুল হলে তা সংশোধন করা যায় ।


৪. সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে :

 আগের সকল নিয়ম নীতি মেনে সংবাদ উপস্থাপন করার ধারনার পরিবর্তন হয়ে সহজভাবে যেকোনো কাঠামো অনুযায়ী উপস্থাপন করা হয় । সংবাদ সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে ।এখন শুধু ফোকাল পয়েন্ট প্রকাশের কাজই মুখ্য ।


৫. ভোগ বা দর্শকের সংবাদ গ্রহণ :

 নির্দিষ্ট সময়ে বসে সংবাদ দেখা বা পড়ার রীতি এখন আর নেই । দর্শক এখন একাধিক মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ গ্রহণ করে । তারা খুব দ্রুত সংবাদ চায় । বর্তমানে সংবাদ পড়া ও দেখার গড় সময় কমে গেছে ।তবে অনলাইনের সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও পত্রিকার চেয়ে কম । পাঠক-দর্শক  এখনও অনলাইনের চেয়ে মূল মাধ্যমের প্রতি বেশি নির্ভরশীল । 


লেখক :  শিক্ষার্থী , ৪র্থ বর্ষ (২৪তম ব্যাচ)

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.