সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব । Social Learning Theory । Albert Bandura

Marjan Akter

সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব : Social Learning Theory 

গণমাধ্যম থেকে মানুষ অনুকরণ করে । এর কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো ।

১. ডিসকভারি চ্যানেল দেখে জঙ্গলে বাস করার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়েছিল তিন শিশু ।

২. চট্টগ্রামে টিভি সিরিয়াল থেকে দীক্ষা নিয়ে মা ছেলেকে খুন ।(প্রথম আলো ১ অক্টোবর ২০২০)

৩. ক্রাইম প্রেট্রোল দেখে সাতক্ষীরায় ভাই-ভাবি ও ভাতিজি-ভাতিজাকে খুন । (চ্যানেল ২৪, অক্টোবর ১৫)

 ৪. ক্রাইম পেট্রোল দেখে ব্যাংক লুট , খেলনা পিস্তল মেলে অনলাইনে । (প্রথম আলো ১৫ ডিসেম্বর ২০২০)


সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের প্রবক্তা

 সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন আলবার্ট বান্দুরা  (৪ ডিসেম্বর ১৯২৫-২৬ জুলাই ২০২১ ) । তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন ।তিনি ১৯৬১-১৯৬৩ সালে ববো ডল পরীক্ষার মাধ্যমে সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বটি প্রদান করেন ।তিনি বিশ্বজুড়ে সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত  ।

তত্ত্বের মূল কথা :

 মানুষ বিশেষ করে শিশুরা সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, আবেগীয় প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও পরে অনুকরণের মাধ্যমে নতুন আচরণ শিখে থাকে । অর্থ্যাৎ, সামাজিক শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ।You sent

সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের মৌলিক ধারণা তিন টি । 

১ . পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষণ : 

ক. জীবন্ত মডেল (বাবা,মা ভাইবোন,) 

খ. বাচনিক শিক্ষণমূলক মডেল (স্কুল) 

গ. প্রতীকী মডেল(টিভি,সিনেমা,গণমাধ্যম )


২. শিক্ষণে মানসিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ (অনুধাবণ ,দৃষ্টিভঙ্গি) 

৩. শিক্ষণে আচরণ পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী নয়




শিক্ষণ কৌশল : 

বান্দুরা ১৯৭০ সালে তার তত্ত্বটি প্রদান করেন । এ তত্ত্বের জন্য তিনি ডোনাল্ড ক্যাম্বলের সাহায্য নেন । ক্যাম্বল শিখন কৌশলের ৬ টি ধারণা দেন : 

১. ভুল শোধরানো থেকে শেখা 

২. বিষয় সম্পর্কে অনুধাবন 

৩. অন্যের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

৪. অনুকরণ 

৫. অনুরোধ বা উপদেশ 

৬. নির্দেশনা


বান্দুরার সামাজিক শিখন তত্ত্ব : 


অনুকরণ বা মডেলিং : এর প্রধান দিক হলো আমরা অন্যদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখি । 

অনুকরণে সহিংসতা বিস্তার :

 যুক্তরাষ্ট্রে ষাটের দশকের সহিংসতার প্রেক্ষাপটেই বান্দুরা এই তত্ত্বের বর্ণনা দেন ।তার মতে সহিংসতা দেখে মানুষ সহিংসতা শেখে । শেখার প্রক্রিয়া তিনটি : 

১. মনোযোগ 

২. ধারণ 

৩. প্রণোদনা  

১. মনোযোগ 

আমরা যে কটা চরিত্র দেখি তার সবকটাতে আমরা মনোযোগ দিই না । আমরা  ৫টি  কারণে মহিংসতার প্রতি মনোযোগী হই ।

 ক. সহজ 

খ. স্বাতন্ত্র‌সূচক 

গ. সর্বব্যাপিতা 

ঘ. উপকারী 

ঙ. ইতিবাচক 

২. ধারণ 

দুইটি উপায়ে আমরা কোন বিষয়কে ধারণ করি

ক. দৃশ্যপট ধারণ 

খ. বাচন ধারণ 

৩. প্রণোদনা : আমরা পুরষ্কার বা প্রশংসা লাভের প্রেষণায় কোন কিছু শেখার চেষ্টা করি ।


ববো ডল গবেষণা : 

ববো ডল গবেষণাটি আগ্রাসী আচরণ সংক্রান্ত সামাজিক শিখনের উপর পরীক্ষামূলক গবেষণা । বান্দুরা ও তার সহযোগীরা  ১০৬১ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নার্সারি স্কুলের ৩৭-৬৯ মাস বয়সী ৭২ জন শিশুর উপর গবেষণা চালান । গবেষণাটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় । 

১. এক-তৃতীয়াংশকে আক্রমণাত্মক বা সহিংস আচরণের মডেল দেখানো হয় ।এতে দেখানো হয় ববো ডল নামের পুতুলটার প্রতি একজন বয়স্ক মডেল আগ্রাসী আচরণ করে । 

২. আরেক অংশকে অহিংস আচরণ দেখানো হয় । 

৩. বাকি অংশ ছিল নিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠী যাদের সহিংস অহিংস কোনো মডেলই দেখানো হয়নি ।


ফলাফল

শিশুদের পরবর্তীতে ববো ডলের সাথে খেলতে দেয়া হলে শিশুরা মডেলের অনুসরণ করে । অর্থ্যাৎ, যে শিশুদের আক্রমণাত্মক মডেল দেখানো হয়েছিল তারা ববো ডলের সাথে আক্রমনাত্মক আচরণ করে । যাদের অহিংস মডেল দেখেছে এবং যে শিশুদের কোনটাই দেখানো হয় নি তারা ববো ডলের প্রতি সহিংস আচরণ করে নি । যে শিশুরা সহিংস আচরণ করে তারা শারীরিক এবং মৌখিক ভাবে পুতুলটিকে আক্রমণ করেছে । পর্যবেক্ষণে দেখা যায়  ছেলে শিশুরা বেশি আগ্রাসী ছিল । তারা ২৭০ টা আক্রমণাত্মক দৃষ্ঠান্ত দেখিয়েছিল । আর ১২৮ টি আক্রমণাত্মক দৃষ্ঠান্ত মেয়ে শিশুরা  দেখিয়েছিল ।


সালোচনা :

 ১. এ গবেষণাটি কৃত্রিম পরিবেশে করা হয় ।

২. এ গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব যাচাই করা হয় নি ।

৩. এটা শুধু শিশুদের উপর করা হয়েছিল অন্যান্য বয়স্করা এ গবেষণায় ছিল না । 


লেখক : শিক্ষার্থী ,৪র্থ বর্ষ

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.