সভা কাভার করার প্রস্তুতি । সভা কাভার করার জন্য প্রতিবেদকর প্রস্তুতি

তাসলিমা ইরিন

সভা কাভার করার প্রস্তুতি । সভা কাভার করার জন্য প্রতিবেদকর প্রস্তুতি

সভা কাভার করার আগে একজন প্রতিবেদককে যেসব প্রস্তুতি নিতে হয়

একজন প্রতিবেদককে প্রায়শই বক্তৃতা থেকে প্রতিবেদন লিখতে হয়। এজন্য তাঁকে বিভিন্ন সভা সেমিনার কাভার করতে যেতে হয়। তবে এসব সভা কাভার করার জন্য অবশ্যই একজন প্রতিবেদককে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি ভাল প্রতিবেদন লিখার জন্য এটি অত্যাবশ্যক।

সভা কাভার করার পূর্বে একজন প্রতিবেদককে যেসব প্রস্তুতি নিতে হবে নিচে তা বর্ণনা করা হল:

১. পর্যাপ্ত গবেষণা করে যাওয়া
২. সভার আসন বিন্যাস সংরক্ষণ করা
৩. বক্তৃতার একটি কপি নিজের কাছে রাখা
৪. তাড়াতাড়ি পৌঁছানো ও সুবিধাজনক একটি জায়গায় বসা
৫. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমূহ নিয়ে যাওয়া

নিম্নে এগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হল।


১. পর্যাপ্ত গবেষণা করে যাওয়া

কোন বক্তৃতা নিয়ে প্রতিবেদন করতে যাওয়ার আগে, আলোচনার বিষয়বস্তু এবং বক্তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে তারপরই সভাস্থলে যাওয়া উচিৎ। এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সাথে কথা বলে বক্তার ব্যাপারে তথ্য নেওয়া যেতে পারে। অন্যথায়, ইন্টারনেটে তার সম্পর্কে যেসব তথ্য আছে তা জেনে নিয়েও পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে, বক্তা তেমন খ্যাতনামা কেউ নাও হতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিবেদনে খুব সংক্ষেপে তার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আর সেজন্য তার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে আগে থেকেই।

আলোচ্য বিষয়ের পটভূমি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জেনে রাখতে হবে। একই বিষয়ে ইতিপূর্বে কোন নিবন্ধ লেখা হয়েছে নাকি, হয়ে থাকলে তা পড়ে নেওয়া যেতে পারে।







সভা কাভার করার প্রস্তুতি

২. সভার আসন বিন্যাস সংরক্ষণ করা


অনেক বক্তৃতা সভায় আসন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে সেখানে দর্শক শ্রোতার পরিমাণ কেমন হতে পারে- তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। আর দর্শকের পরিমাণ পাঠকের মনে ওই বক্তৃতার উপস্থিত পরিবেশের সচিত্র ধারণা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখে। কাজেই, আসন বিন্যাসের একটি খুব সাধারণ স্কেচ করে হলেও নিজের কাছে রেখে দিলে সেটি প্রতিবেদন তৈরীতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. বক্তৃতার একটি কপি নিজের কাছে রাখা

নির্ধারিত সময়ে বক্তৃতা শুরুর আগে বক্তৃতার একটি কপি কোনভাবে জোগাড় করে নিজের কাছে রাখতে পারলে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে, কি কি বলা হবে সে বিষয়ে আগে থেকেই কিছু ধারণা করে রাখা সম্ভব হবে।

এই উপায়ে, বক্তৃতার একটি কাঠামো বা কঙ্কাল নির্ধারিত সময়ে বক্তৃতা শুরুর আগেই লিখে ফেলা যাবে এবং অনুষ্ঠান চলাকালীন শুধু খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলি নোট করে রাখলেই হবে। যদিও, কপি হাতে পেতে পেতে যতক্ষণ লাগে তারপর বক্তৃতা শুরু হওয়ার আর খুব বেশী সময় বাকি থাকে না। ফলে এটি হয়ত একদম এরকমভাবেই সম্পন্ন করা যাবে না, তবু পূর্বপ্রস্তুতির জন্য আগে থেকেই কপি জোগাড় করতে পারলে তা বেশ প্রতিবেদন তৈরীতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

আরো জানুন………সাক্ষাৎকারের ধরন । Types of Interview


৪. তাড়াতাড়ি পৌঁছানো এবং একটি সুবিধাজনক জায়গায় বসা

সভাস্থলটি হয়তো আগে থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। ফলে দেরী করে পৌঁছে বক্তৃতার এক অংশ জুড়ে একদমই অনুপস্থিত থাকা কখনোই কাম্য নয়। অনেক ক্ষেত্রে বক্তৃতা শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউকে ঢুকতেই দেওয়া হয় না। যেমন: সাংবাদিক যদি হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ কোন বক্তৃতা নিয়ে প্রতিবেদন করতে চান, এক মিনিট দেরীতে গেলেও সেখানে আর ঢুকতে পারার আশা না করাই ভালো।

ঠিক সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর পর এমন কোথাও বসতে হবে সেখান থেকে বক্তৃতাস্থলের সাউন্ড সিস্টেমের একটি সুষম দূরত্ব থাকে। সাউন্ড সিস্টেমের খুব কাছে বা খুব দূরে- কোথাও বসলেই বক্তৃতা ঠিকঠাকমত শোনা যাবে না। অনেক সময় সভাস্থলের আয়তনের উপরও নির্ভর করে শব্দ কোথায় কিরকমভাবে শোনা যাবে। এক্ষেত্রে সময়ের কিছু আগে পৌঁছে এ সম্পর্কে সঠিক পর্যালোচনা করে নিলে স্থান বাছাই করা যাবে নিখুঁতভাবে।

৫. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমূহ নিয়ে যাওয়া


নোটবুক, কলম, টেপ রেকর্ডার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হতে পারে ক্যামেরা অথবা ভিডিও ক্যামেরা। চালু করে রাখার পরও বক্তৃতা চলাকালীন এমনভাবে নোট নিতে হবে যেন রেকর্ডারের অস্তিত্বই নেই। তবে তাই বলে রেকর্ডারেরও রয়েছে নিজস্ব গুরুত্ব ও তাৎপর্য। যা যা বলা হচ্ছে তা হুবহু ধারণ করতে রেকর্ডারের জুড়ি নেই।

মনে রাখতে হবে, যে কোন বক্তৃতাতেই বক্তা যেকোন সময় বেফাঁস কিছু বলে ফেলতে পারেন। ওই সময়ে উপস্থিত অন্যান্য মিডিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকদের কারও কাছে যদি রেকর্ডার না থাকে, তাহলে একমাত্র যার কাছে রেকর্ডার আছে এবং যে শব্দগুলি হুবহু ধারণ করতে পারবে তার প্রতিবেদনের চাহিদা নিঃসন্দেহে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশী হবে।

সংখ্যা গণনা করার উপায় রয়েছে এমন রেকর্ডার নিয়ে গেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। বক্তৃতার একদম জিরো সেকেন্ডে যদি এই রেকর্ডার চালু করে দেওয়া হয়, তাহলে সবচেয়ে বক্তৃতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশগুলোর একটি হিসাব রাখা যাবে। এবং পরবর্তীতে মিনিট ও সেকেন্ড ধরে ধরে নিখুঁতভাবে বক্তৃতাটির লিখিত রূপ নথিবদ্ধ করা সম্ভব হবে।

লেখক
এমএসএস (২২ তম ব্যাচ)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.