সংখ্যাবাচক গবেষণা কী । সংখ্যাবাচক গবেষণার ধাপসমূহ । Quantitative Research

Taslima Akter Erin

সংখ্যাবাচক গবেষণা কী। সংখ্যাবাচক গবেষণার ধাপসমূহ 


 সংখ্যাবাচক গবেষণা (Quantitative Research)


সংখ্যার উপর নির্ভর করে যে গবেষণা করা হয়, এক কথায় তা ই সংখ্যাবাচক গবেষণা বা Quantitative Research। এই প্রকৃতির গবেষণার সকল ধাপই মূলত সংখ্যাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। অর্থাৎ, গবেষণার বিষয়বস্তুকে সংখ্যা দ্বারা উপস্থাপন করে, ফলাফল ও সংখ্যাতাত্ত্বিক উপায়েই নির্ধারণ করা হয়।


সংখ্যাবাচক গবেষণা সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তবে এর মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাবাচক গবেষণার তত্ত্ব নিম্নে উপস্থাপন করা হলঃ


Bryman (2012) বলেন - 



“Quantitative Research usually emphasizes quantification in the collection & analysis of data.” (Bryman, 2012)



এছাড়া, সংখ্যাবাচক গবেষক, Vanderstoep & Johnston (2009) এর মতে,


“Quantitative Research specifies numerical assignment to the phenomena under study.” (Vanderstoep & Johnston, 2009)



উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সংখ্যাবাচক গবেষণা হল সেই গবেষণা যেখানে তথ্য-উপাত্ত, পর্যবেক্ষণ, অনুমান, ফলাফল সকল কিছুই সংখ্যাতাত্ত্বিক উপায়ে নির্ধারিত হয়।


সংখ্যাবাচক গবেষণা বা Quantitative research কতগুলো ধাপ অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়। নিম্নে সংখ্যাবাচক গবেষণার ধাপ গুলো উল্লেখ করা হলঃ



সংখ্যাবাচক গবেষণার ধাপসমূহঃ (Steps of Quantitative Research)


একটি সফল সংখ্যাবাচক গবেষণা পরিচালনা করতে একজন গবেষককে নিম্নোক্ত ধাপ গুলো অতিক্রম করতে হয়-


১। তত্ত্ব

২। পূর্বানুমান

৩। গবেষণা নকশা

৪। পরিমাপ যন্ত্র

৫। গবেষণা উৎস বাছাই

৬। নমুনা বাছাই

৭। ডাটা কালেকশন

৮। প্রক্রিয়াকরণ

৯। পরীক্ষণ

১০। ফলাফল

১১। পরিসমাপ্তি








১. তত্ত্ব (Theory)


সংখ্যাবাচক গবেষণা পরিচালনার পূর্বে একটি তত্ত্ব বাছাই করতে হবে। যার উপর নির্ভর করে আপনি এর পুনঃগবেষণা করবেন। অর্থাৎ, এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন অথবা সংশোধন , যাচাই পরিচালনা করবেন।



পূর্বানুমান (Hypotheses)


উক্ত তত্ত্বের আলোকে আপনার গবেষণার ফলাফল কী হতে পারে, সে বিষয়ে আপনাকে গবেষণার পূর্বেই তা অনুমান করে নিতে হবে। তবে, মনে রাখতে হবে যে, গবেষণার ফলাফল যে সবসময় পূর্বানুমানকে প্রতিফলিত করবে, এমনটা নাও হতে পারে।



গবেষণা নকশা (Research Design)


সংখ্যাবাচক গবেষণা পরিচালনার পূর্বে গবেষণাটি কীভাবে সম্পাদিত হবে সে বিষয়ে পূর্বেই একটি গবেষণা নকশা আপনাকে তৈরী করে নিতে হবে। গবেষণা নকশার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাব রয়েছে, যেমনঃ

  • অনুসন্ধানের বাহ্যিক বৈধতা

  • গবেষকদের তাদের অনুসন্ধানে কার্যকারণকে দায়ী করার ক্ষমতা।



পরিমাপ যন্ত্র (Devise Measures of Concepts)


এ স্তরে গবেষণার মূল বিষয়বস্তুগুলোকে সাধারণের বোঝার স্বার্থে বোধগম্যভাবে পরিমাপের জন্যে প্রশ্নগুলো নির্ধারণ করা হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে গবেষক সেই ধারণাগুলির পরিমাপ তৈরি করেন যা তিনি তদন্ত করতে চান। এটি সাধারণত বিমূর্ত সমাজতাত্ত্বিক ধারণাগুলিকে আরও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থায় ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করে, যেন গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সহজেই প্রশ্নগুলো বুঝতে সক্ষম হয়।


গবেষণা উৎস বাছাই (Select research site/ sites)


উপর্যুক্ত ধাপগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যম গবেষণার উৎস বা সাইটটি ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হবে।  মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার জন্যে কোথায় যেতে হবে বা কোন উৎস হতে তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, তা এখানে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপঃ শিশু বিষয়ক কোন গবেষণায় বিদ্যালয়কে গবেষণা উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া যায়া। আবার শ্রমিক বিষয়ক কোন গবেষণায়  একটি কারখানাকে নির্বাচন নির্বাচন করা যায় গবেষণা উৎস হিসেবে।


এছাড়া, জরিপ গবেষণার ক্ষেত্রে সাইট-নির্বাচন আরও বৈচিত্র্যময় হতে পারে। ব্যবহারিক এবং নৈতিক বিষয়গুলো গবেষণা উৎস নির্ধারণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হিসেবে কাজ করতে পারে।



নমুনা বাছাই (Selection of respondents)


এই ধাপে গবেষণার কারা অংশগ্রহণ করবে অর্থাৎ, নমুনা হিসেবে কাদের বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করতে হয়। অংশ নেওয়ার জন্য 'অংশগ্রহণকারীদের একটি নমুনা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ  


  • অনুমানের উপর নির্ভর করে

  • ব্যবহারিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে

  • নৈতিক কারণগুলির উপর নির্ভর করে


এবং যেকোন সংখ্যক নমুনা কৌশলকে জড়িত করতে পারে।

তবে, কখনো কখনো হাইপোথিসিসের জন্য দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর প্রয়োজন হয়। যেমনঃ পুরুষ এবং মহিলা। এক্ষেত্রে গবেষণা উৎস হিসেবে দুটি দলকেই বেছে নিতে হয়। যেন নমুনাটি গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রতিফলিত করে।



ডাটা কালেকশন (Data Collection)


এ পর্যায়ে গবেষণা পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্রের আলোকে আপনাকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে আপনার কাঙ্ক্ষিত নমুনার কাছ থেকে। আপনি যদি জরিপ পদ্ধতি বেছে নিন, তাহলে প্রশ্নপত্রের সাহায্যে ডাটা কালেক্ট করুন।


প্রক্রিয়াকরণ (Data Processing)


প্রাপ্ত তথ্য - উপাত্তগুলোকে এবার বিন্যস্ত করুন। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ও আয় ইত্যাদি তথ্য পুর্ব হতেই সংখ্যায় সংগৃহীত হয়। তবে যেসব বিষয়গুলো সংখ্যায় সংগ্রহ করা যায় না যেমনঃ দর্শন, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কোডিং করে সংখ্যায় রূপান্তর করতে হবে।



পরীক্ষণ (Analysis)


এ ধাপে চলকগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় এবং সেগুলোকে গ্রাফ, চার্ট, টেবিলের সাহায্য উপস্থাপন করা হয় । এক্ষেত্রে কাই-বর্গ পরীক্ষা, টি টেস্ট ও অন্যান্য পরীক্ষণ গুলো ভূমিকা রাখে।


ফলাফল (Findings & Conclusion)


পরীক্ষণ হতে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো পূর্বানুমান বা হাইপোথিসিস কে সমর্থন করেছে কি করেনি তা এখানে দেখা হয়। গবেষণার যে প্রেক্ষাপটে উক্ত গবেষণাটি করা হয়েছে, তা এখানে প্রতিফলিত হয়েছে কি না দেখতে হবে।


পরিসমাপ্তি (Writing up Findings)


সর্বশেষ স্তরে, গবেষণাটির বৈধতা, সঠিকতা, নির্ভরতা ও গুরুত্ব সঠিকভাবে এর শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরতে হয়, যেন এই ফলাফল উক্ত তত্ত্বের বিষয়ে পুনঃগবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে উপস্থাপিত হয়।


লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী (২২ তম ব্যাচ)

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.